গ্যাস নিয়ে গ্রাহকদের অন্ধকারে রাখল কেজিডিসিএল
দুই দিন ধরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামজুড়ে চলছে গ্যাস সংকট। এ কারণে বেশিরভাগ বাসা-বাড়িতে অন্তত চার ঘণ্টা ধরে জ্বলছে না চুলা। কিন্তু এই বিষয়ে চট্টগ্রামে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) যেন মুখে কুলুপ এঁটে আছে। এখন পর্যন্ত নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত গ্যাস থাকবে না বা কতদিন থাকবে না-সেই বিষয়ে কোনো কিছুই জানাচ্ছে না সংস্থাটি। কেজিডিসিএলের এমন দায়িত্বহীন আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গ্রাহকেরা।
চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে শনিবার (২১ অক্টোবর থেকে। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর বৃহত্তর এলাকার মানুষ রান্না করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন গ্যাস নেই। পরে তারা এদিক ওদিক খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। দেখেন সবখানেই একই সমস্যা। কিন্তু কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ কিছু না জানানোয় তারা এখনো অন্ধকারে আছেন।
কেজিডিসিএলের মোট গ্রাহক-সংযোগ ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প–বাণিজ্যসহ অন্য খাতে।
গ্যাস সংকট কতদিন থাকবে সে বিষয়ে আগাম কিছু না জানায় বিপাকে আছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা সুলতানা জাহিন। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, দুদিন ধরে বেলা ১১টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত গ্যাস থাকছে না। এই সমস্যা কতদিন থাকবে-সে বিষয়ে কিছু জানায়নি কেজিডিসিএল। সমস্যা যদি বেশিদিন স্থায়ী হয় তাহলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারতাম।
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলামও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতি চুলা বাবদ আমাদের কাছে থেকে মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা করে নিয়ে নেয় কেজিডিসিএল। অথচ সংস্থাটির যেন কোনো দায়িত্বই নেই গ্রাহকদের প্রতি। গ্য্যাস কখন আসবে বা কতদিন সমস্যা থাকবে সে বিষয়ে আসল সত্যটা জানার অধিকার গ্রাহকদের আছে।
এর আগে, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে গত ১৩ মে রাত ১১টায় আগাম সতর্কতায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়। পাশাপাশি মহেশখালীতে থাকা ভাসমান দুটি টার্মিনাল গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে আমদানি করে আনা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সেগুলো সরিয়ে নেওয়ায় তখন নগরজুড়ে গ্যাস সংকট তৈরি হয়। এর মধ্যে ১৪ মে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আনুমানিক ৬/৭ দিন সময় লাগতে পারে।
কেজিডিসিএলের এমন বিজ্ঞপ্তি দেখে হুড়মুড় খেয়ে শত শত মানুষ গ্যাস সিলিন্ডার, বৈদ্যুতিক, তেল ও মাটির চুলা কিনতে দোকানে দোকানে ভিড় জমান। এই সুযোগে দোকানিরাও কয়েকগুণ বেশি দাম পকেটে ঢুকিয়ে নেন। কিন্তু দেখা যায় ১৫ মে সকাল থেকেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এরপর কেজিডিসিএলের ওই বিজ্ঞত্তি নিয়ে সবখানে শুরু হয় সমালোচনা। অনেকেই সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন।
এবারও প্রকট গ্যাস সংকট শুরু হলেও কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি কেজিডিসিএল। অথচ কোনো সুনির্দিষ্ট এলাকাতেও কয়েকঘণ্টার জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হলে সেটি আগেভাগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়। কিন্তু এবার প্রায় পুরো নগরীতে সংকট থাকলেও চুপ আছে সংস্থাটি।
নাম প্রকাশ না করে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, কতদিন পর্যন্ত এই গ্যাস সংকট থাকবে তা নিজেরাও বুঝতে পারছেন না। এ কারণে আগেভাগে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন না তারা। কেননা এর আগে মোখার সময় আগবাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সমালোচনায় পড়েছিলেন।
এদিকে বিজ্ঞপ্তি না দিলেও গণমাধ্যমে কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা একেকজন একেকভাবে গ্যাস সংকটের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কেউ বলছেন এক সপ্তাহ গ্যাস সংকট থাকবে, কেউ বলছেন এক মাস, কেউবা আরও বেশি সময় ধরে এই সংকট চলমান থাকবে বলে জানাচ্ছেন।
গ্যাস সংকট কতদিন থাকবে সে বিষয়ে কেন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে না এমন প্রশ্নে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আমিনুর রহমান বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। সে কারণে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যাচ্ছে না।