ইসিটি স্বাক্ষর বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সনদে চুক্তির প্রশ্নে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সনদের সংশোধিত ধারার বিষয়ে তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ, স্বাক্ষর প্রশ্নে তথ্য পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ‘জ্বালানি সনদ চুক্তির বিষয়ে অবজারভেশনে (পর্যবেক্ষণে) রাখা হয়েছে। এখনও হ্যাঁ কিংবা না কোনোটাই বলা যাচ্ছে না।’

সনদটির বিষয়ে দেশে দেশে অনেক বিতর্ক চলছে, বিতর্কের কারণে ইতালীসহ অনেকে বের হয়ে গেছে। তেমন একটি সময়ে বাংলাদেশ কেন ঢুকতে চাচ্ছে। এমন প্রশ্ন ছিল বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সার্বিক বিষয়ে দেখেশুনে তারপর সিদ্ধান্তে আসতে চাই। দেশের অমঙ্গল হয় এমন কিছু করা হবে না।’

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নীতি-নির্ধারণী পর্যা‌য়ে একজন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ‘এনার্জি চার্টার ট্রিটির (ইসিটি) কিছু ধারায় সম্প্রতি সংশোধনী আনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংশোধনীর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব এখনও পাওয়া যায় নি। ওই চিঠির জবাব পেলে তারপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে। জ্বালানি সনদ চুক্তির মূল উদ্যোক্তা ছিল নেদারল্যান্ডস, তারাই এখন বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে বের হয়ে যাওয়া খুব সহজসাধ্য নয় তাই একে জম্বী সনদ বলা হয়। চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও ২০ বছর কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ একবার স্বাক্ষর করা মানেই কয়েক দশক আটকে যাওয়া।’

১৯৯১ সালে ডাবলিনে এক সভায় তৎকালীন ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুড লুবার এনার্জি কমিউনিটি গড়ার প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাবের ধারাবাহিকতায় ইউরোপীয় জ্বালানি সনদ চুক্তি বা ইউরোপীয় এনার্জি চার্টার ট্রিটি চূড়ান্ত হয়। আর ১৯৯৮ সালে কার্যকর হয় এনার্জি চার্টার ট্রিটি বা জ্বালানি সনদ চুক্তি। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে এনার্জি চার্টারে স্বাক্ষর করে এখন পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য সম্মেলনে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে, শিগগিরই চুক্তি করার পথে রয়েছে।

তিনি বলেন, ধারা ৫, ১১ ও ১৪ অনুযায়ী লোকাল কোনো পণ্য ব্যবহারে বাধ্য করতে পারবে না। জনবলও নিতে বাধ্য করা যাবে না। এমনকি ভোক্তার জন্য জ্বালানি মূল্য কমালে বিনিয়োগকারী যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাতে মামলা করতে পারবে। এই সনদে সই করলে বিদেশি কোম্পানি বিনা বাঁধায় তাদের পুঁজি, মুনাফা ফেরত নিয়ে যেতে পারবে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিরসনে অতি ব্যয়বহুল আন্তর্জাতিক সালিশের দারস্থ হতে বাধ্য করা হয়েছে। অন্যান্য আইনের মতো প্রাথমিক ধাপে স্বাগতিক রাষ্ট্রের আদালতে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এই সনদ স্বাগতিক দেশের জন্য একটি অসম ও ভারসাম্যহীন অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘জার্মানি ক্রমান্বয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সুইডিস কোম্পানি ভ্যাটেনফল এবি ২৭ হাজার ৫৪ কোটি টাকার মামলা ঠুকে দেয়। ইতালী চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর উপকূলীয় অঞ্চলের গ্যাস ও খনিজ খনন নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক কোম্পানি রকহপার কর্তৃক মামলার শিকার হয়েছে। ৩ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে রকহপার।’

ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিশ্বের জ্বালানি অর্থনীতির ৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি দ্বারা। কার্বন নিসরণ কমানোর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বলা হচ্ছে। ট্রিটির শর্তসমূহ তা ব্যাহত করবে। বাংলাদেশ ফসিল ফুয়েল থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে চাচ্ছে, ট্রিটি তা বাঁধাগ্রস্ত করবে। ট্রিটির কারণে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জ্বালানি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে।

বিশ্বব্যাপী ব্যবসা সুরক্ষার জন্য নানা রকম ফন্দি ফিকির চলছে তারই একটি অংশ ট্রিটি। বিনিয়োগ ও সেই দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কাজটি ট্রিটির মাধ্যমে করতে চাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা যুগে যুগে স্বাগতিক দেশগুলোকে যে শৃঙ্খলিত করার প্রয়াস চালিয়েছে, ট্রিটি তাদের লাভবান করবে। এতে স্বাক্ষর না করার জন্য ক্যাবের পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষর জমা দিয়েছি। আশা করছি সরকার এই আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অপর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, এই ধরনের চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য। বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের জায়গায় পরিণত হয়েছে। অতীতে বাংলাদেশ বিদেশি দাতাদের কাছে বিনিয়োগের জন্য ধর্না দিত। এখন উল্টো তারা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আসছে। চুক্তি যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে এমন প্রেক্ষাপটে স্বাক্ষর করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান দরপত্র জমার সময় ৩ মাস বাড়ছে!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
তেল-গ্যাস অনুসন্ধান দরপত্র জমার সময় ৩ মাস বাড়ছে!

তেল-গ্যাস অনুসন্ধান দরপত্র জমার সময় ৩ মাস বাড়ছে!

  • Font increase
  • Font Decrease

সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র জমার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। বিদেশি একাধিক কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা সূত্র।

বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে ২৪টি ব্লকে (গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ৯ টি) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ১১ মার্চ। দরপত্র জমার জন্য ৬ মাস (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় দেওয়া হয়েছে। সময় শেষ হওয়ার আগেই কেউ কেউ ৬ মাস পর্যন্ত সময় চাইলেও ৩ মাসের বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, কয়েকটি কোম্পানি সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। তার প্রেক্ষিতে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি এখন তাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।

কতদিন সময় বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার কয়েকদিন আগে বার্তা২৪.কম-কে বলেছিলেন, অনেকগুলো বড় বড় কোম্পানি সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কয়েকটি কোম্পানি সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেছে, আমরা চিন্তাভাবনা করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেছিলেন, কৌশলগত কারণে কোনো কোম্পানির নাম আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। কিছু রীতি মেনে চলতে হয়, কোনো বিদেশি কোম্পানির নাম এই পর্যায়ে প্রকাশ করা ঠিক হবে না। তবে এটুকু বলতে পারি, বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা কোম্পানি বিড ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে। তারা টাকা দিয়ে আমাদের ডাটাও কিনেছে।

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। আর ২৪টি ব্লকে দরপত্র ডাকা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি আপডেট করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি।

এবার বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমেরিকান কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও এক্সোন মবিল, জাপানি প্রতিষ্ঠানসহ অনেকগুলো কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে। সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা ২ডি জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। বাংলাদেশের পাশের ব্লক থেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস উত্তোলন করছে মায়ানমার। যে কারণে বাংলাদেশ অংশে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের সাগরাঞ্চলে গ্যাসের মজুদের বিষয়ে আশাবাদী জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছে, দেশের গ্যাস সংকট কাটাতে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই আকর্ষণীয় করা হয়েছে পিএসসি। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করা দেওয়া হলেও এবার গ্যাসের দর নির্ধারিত করা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রডের আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে উঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা বিদ্যমান পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল। ব্রেন্ট ক্রডের দামের ক্ষেত্রে সারা মাসের দর গড় হিসাব ধরা হবে।

দামের পাশাপাশি বাংলাদেশের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করবে।

গত ৮ মে পিএসসি নিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার করা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রে কাজ করতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে। এই সেমিনারেও ১৫টির বেশি আন্তর্জাতিক কোম্পানি অংশ নিয়েছে। দরপত্রে দেশের স্বার্থের পাশাপাশি বিনিয়োগকারী কোম্পানির স্বার্থও দেখা হয়েছে। ফলে এবারের দরপত্র নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী।

;

পুরোমাত্রায় উৎপাদনে ফিরেছে আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: ভারতের গোড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র

ছবি: ভারতের গোড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • Font increase
  • Font Decrease

পুরোমাত্রায় উৎপাদনে ফিরেছে ভারতের গোড্ডায় স্থাপিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাত ৯টায় ১৫১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়েছে বলে জানিয়েছে আদানি গ্রুপ সুত্র।

আদানির ওই কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। একটি ইউনিট ঈদের ছুটিতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে যায়।

আরেকটি ইউনিট থেকে আংশিক উৎপাদনে থাকা অবস্থায় ২৯ জুন টেকনিক্যাল কারনে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং চরম আকার ধারন করে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২ জুলাই উৎপাদনে ফেরার তথ্য আগেই নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছিলেন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ছিল আদানির একটি ইউনিট। সেটিও কাল-পরশুর মধ্যে উৎপাদনে আসবে। আর যে ইউনিটটির টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বন্ধ হয়েছিল, সেটি ইতোমধ্যেই উৎপাদনে এসেছে। আমাদের পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। সেটিও শিগগিরই উৎপাদনে আসবে। তখন আর বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি থাকবে না।

আদানির ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হয়ে বাংলাদেশে আসে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ২১ জুন মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

পিজিসিবি সুত্র জানিয়েছিল, ঈদের ছুটির সময় চাহিদা কম থাকে, সে কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বাই রোটেশনে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট সিডিউল রক্ষণাবেক্ষণে যায় ঈদের আগে। এটি আগামী ৫ জুলাই উৎপাদনে ফেরার কথা রয়েছে। হঠাৎ দ্বিতীয় ইউনিট থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় গত বছরের মার্চে। দ্বিতীয় ইউনিটথেকে উৎপাদন শুরু হয় জুনে।

;

১০০ কূপ খনন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কূপ খনন প্রকল্প/ছবি: বার্তা২৪.কম

কূপ খনন প্রকল্প/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে ১০০ কূপ খনন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন বলে বার্তা২৪কমকে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার আগে থেকেই আমরা কাজগুলো এগিয়ে রেখেছিলাম। যাতে দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করা যায় সে বিষয়ে কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সময় ও অর্থ সাশ্রয় করার জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ এড়াতে চাইছি। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে কাজগুলো করতে চাচ্ছি, যেখানে পেট্রোবাংলার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘ প্রক্রিয়া, আবার অনেক ব্যয়বহুল। কনসালটেন্টের মাধ্যমে যে কাজ ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা খরচ হবে। একই কাজ আমরা নামমাত্র মূল্য ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় সম্পন্ন করতে পারবো। কনসালটেন্ট যে কাজ করতে কয়েকমাস সময় নেবে আমরা সেই কাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে পারবো।

পেট্রোবাংলার চেয়ার‌ম্যান বলেন, পেট্রোবাংলা কূপ খনন করবে সেই কূপে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পাওয়া যেতে পারে। যেখানে শতভাগ ফেল করার সম্ভাবনা থাকে সেখানে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত না। পেট্রোবাংলার কাজের ধরণ পুরোপুরি ভিন্ন বিধায় সেইভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। তাহলেই দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে গতি আসবে।

বর্তমানে ৪৮ কূপ খননের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া ১০০ কূপ খনন প্রকল্প ২০২৬ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে। এতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের কাছে প্রত্যেক বছরে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করে অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে।

দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার কয়েক দশকের ঢিলেমির কারণে সমালোচনায় মুখর ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তবে সেই দিন এখন বদলে যেতে শুরু করেছে। পেট্রোবাংলার খোলনলচে বদলে দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। একদিকে যেমন গতিময় হয়েছে, অন্যদিকে নতুন মাত্রাও যুক্ত হয়েছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার

এতদিন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আটকে ছিল বাংলাদেশ। আরও ছোট করে বলতে গেলে সুরমা বেসিন তথা, সিলেট থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী এবং ভোলার মধ্যে আটকে ছিল। অন্যান্য এলাকায় কিছু অনুসন্ধান কার্যক্রম হলেও তার পরিমাণ নগণ্য বলাই যায়। সেখানেও আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা।

বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে ১১২ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে কমবেশি ৯৯টি। আর ৩ বছরে ৬৯টি কূপ খনন করতে চায় পেট্রোবাংলা। একে অনেকে উচ্চাভিলাষী মনে করলেও খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, একটি কূপে গ্যাস পাওয়া না গেলে হৈচৈ শুরু করলে চলবে না। ১০টির মধ্যে ৮টি ড্রাই হলে ফেলে আসবো তাহলে সম্ভব না। রাজস্থানে ইউনোকল টানা ১৩টি কূপ খনন করে ড্রাই পায়। এরপর কোম্পানির সদরদফতর বলেছিল আর কূপ খনন না করতে, কিন্তু জিওলজিস্ট অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চৌদ্দ নম্বর কূপ খনন করে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় খনি আবিষ্কার করেছে।

পেট্রোবাংলার ১০০ কূপ খনন প্রকল্প সংক্রান্ত সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেছিলেন, ২৫টি কূপ খনন করে যদি ব্যর্থ হন, আর ছাব্বিশ নম্বর কূপে গিয়ে যদি গ্যাস পাওয়া যায়, তার দাম অনেক বেশি। খরচের কয়েকগুণ উঠে আসবে।

ওই অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আমরা অন্ধকার যুগ থেকে বের করে এনেছি। কূপ ফেল করলে আমি চেয়ারম্যান দায় গ্রহণ করবো। কথা দিচ্ছি কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা কিংবা তদন্ত কমিটি হবে না। সাফল্য পেলে সবার আর ফেল করলে দায়িত্ব আমি মাথা পেতে নেবো।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের এমন ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সাহসের সঞ্চার করেছে। যে কারণে বাস্তবিক অর্থেই গতিতে ফিরেছে পেট্রোবাংলায়।

;

দেশের নিট রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ডলার/ছবি: সংগৃহীত

ডলার/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা জুন মাসের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব কেবলমাত্র আইএমএফকে সরবরাহ করা হয় এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না।

ঋণ সহায়তা পাওয়ার পর রিজার্ভ বেড়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

;