দূর হয়েছে বাঁধা, ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস উৎপাদনে যাবে রশীদপুর-৯



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পাইপলাইন বসানোর জন্য বন বিভাগের গাছ কাটার অনুমতি পাওয়া পাওয়া গেছে। গাছ কাটার জন্য টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে রশীদপুর-৯ নম্বর কূপের গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিএফসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান।

‘পাইপলাইন না থাকার কারণে গ্যাস উত্তোলন করা যাচ্ছে না’-এই কথা বলে ৫ বছর ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে রশীদপুরের ওই কূপটি। রশিদপুর-৭ নম্বর কূপ পর্যন্ত বিদ্যমান লাইনটি ব্যবহার অনুপযোগী বলে ১৭ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রকল্প হাতে নেয় এসজিএফসিএল। বার্তা২৪.কম এ একাধিক রিপোর্ট প্রকাশের পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে হাইড্রো টেস্টে বিদ্যমান পাইপটি ব্যবহার উপযোগী বলে রিপোর্ট আসে। এরপর ৬ নম্বর কূপে বিদ্যমান লাইনে হুকিং করতে (রশিদপুর-৯) ১০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই পাইপলাইনটি যাবে বনের মধ্য দিয়ে, এ জন্য বনের গাছ কাটতে হবে।

সেই গাছ কাটতে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেওয়া হয় বন বিভাগকে। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করে বন বিভাগ। অবশেষে গত সপ্তাহে সেই অনুমতি হাতে পেয়েছে এসজিএফসিএল। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ১০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে ৫ কিলোমিটার আগেই করা হয়েছে। শুধু বনের জায়গাটুকু অবশিষ্ট রয়েছে। জানুয়ারির মধ্যেই পুরো পাইপ লাইন স্থাপন শেষ করে ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস সরবরাহ দিতে চাই। আমরা আশা করছি দৈনিক কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে।

আগে কিছুটা অবহেলার শিকার হলেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে নতুন সচিব মোঃ নুরুল আলম যোগদানের পর গতি পায় কাজটিতে। তিনি বন বিভাগের সচিবের সঙ্গে ফোনে আলাপ করে তাগাদা দিলে ফল পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

সম্ভাবনাময় কূপটি নিয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি তথা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের গাছাড়া ভাব ছিল। দেশে চরম সংকটের মধ্যেও কোন গুরুত্ব পায় নি। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে যখন উচ্চমূল্যের কারণে এলএনজি আমদানি বন্ধ, তখনও নজর পড়েনি পড়ে থাকা কূপটিতে।

বর্তমানে স্পর্ট মার্কেট থেকে আমদানিকৃত এলএনজি দাম পড়ছে প্রায় ১২ ডলারের (এমএমবিটিইউ) মতো। ডলার ১১০ টাকা করে অঙ্ক করলেও প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৪৭ টাকার মতো। ভ্যাট ও ট্যাক্স ১০ টাকা ও রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ প্রায় ২ টাকা যোগ করলে ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম পড়ছে ৫৯ টাকার মতো। অথচ রশীদপুর থেকে ১ টাকারও কমমূল্যে গ্যাস পাওয়া সম্ভব।

কম করে হলেও দৈনিক (১০ মিলিয়ন) ২ লাখ ৮৩ হাজার ১৬৮ ঘনমিটার গ্যাস পাওয়া সম্ভব। যার আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার উপরে। গ্যাসের ঘাটতি কারণে ডলার সংকটের মধ্যেও চড়া দামে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ এই কাজটুকু অনেক আগেই করা সুযোগ ছিল। বরং দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে গুরুত্ব দেওয়া চিত্রায়ণ দৃশ্যমান। গ্যাস সংকট দূর করার কথা বলে ভোলা থেকে সিএনজি আকারে ৫ মিলিয়ন (প্রথম ধাপে) গ্যাস আনার বিশাল তোড়জোড় চলছে। সম্প্রতি ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করছে পেট্রোবাংলা। কোম্পানিটি ভোলা থেকে গ্যাস পরিবহন করে ঢাকার পাশ্বর্বতী এলাকায় সরবরাহ করবে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাস পরিবহনের জন্য ৩০.৬০ টাকা দিতে হবে ইন্ট্রাকোকে। শিল্প কারখানায় পাইপলাইনে পাওয়া গ্যাসের জন্য ১৮.০২ টাকা (বৃহৎ শিল্প) পাওয়া গেলেও, এই গ্যাসের মূল্য দিতে হবে ৪৭.৬০ টাকা। খানিকটা খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি প্রবাদের মতো।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, গ্যাস সংকটের কথা বলে ভোলা থেকে গ্যাস আনার আগে রশিদপুরের গ্যাস আনা যেতো। এক দুই মাসের মধ্যেই যে কাজটি করা যেতো। ভোলা থেকে গ্যাস আনার মতো এখানে কোন ঝুঁকি নেই, এবং নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। আবার সেই দামও হতো সাশ্রয়ী। সেই কাজটি কেনো এতোদিনে করা যাচ্ছে না সেটাই বড় বিস্ময়ের। ভোলা থেকে প্রথম দফায় আসবে মাত্র ৫ মিলিয়ন, পরে আরও ২০ মিলিয়ন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ এর সিকিভাগ প্রচেষ্টা নিলে ১ টাকারও কম মূল্যে রশিদপুর থেকে কয়েকগুণ বেশি গ্যাস আসতে পারতো। সেদিকে না পেট্রোবাংলা, না জ্বালানি বিভাগের কোনো আগ্রহ দৃশ্যমান।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেছেন, দেশীয় গ্যাস তুললে যে লাভ তার চেয়ে না তুললে বেশি লাভ। আমদানি করলে কমিশনের বিষয় থাকতে পারে। এটা শুধু আজকে থেকে নয়, ঐতিহাসিকভাবেই অনুসন্ধানে স্থবিরতা বিদ্যমান। সরকার পরিবর্তন হলে একটা পরিবর্তন আশা করা হয়, কিন্তু সেভাবে পরিবর্তন হয় নি। বরং পূর্বের ধারার সঙ্গে নতুন ধারা আমদানি যুক্ত করা হয়েছে। এই অবস্থা থাকলে ৩০ সালে গ্যাস খাত পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে আবিষ্কৃত হয় রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড। এখানে প্রমাণিত মজুদ ১০৬০ বিলিয়ন ঘনফুট, সম্ভাব্য রয়েছে ১৩৭৩ বিসিএফ, আরও সম্ভাবনাময় বিবেচনা করা হয় ৬৮০ বিসিএফ। উত্তোলন যোগ্য পরিমাণ (১পি) ও সম্ভাব্য মিলে মজুদ ধারণা করা হয় ২৪৩৩ বিসিএফ। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে ৬৭৫ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। অবশিষ্ট মজুদের পরিমাণ রয়েছে ১৭৫৭ বিএসএফ। ৭ নভেম্বর ৫টি কূপ দিয়ে ৪৬.৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। রশিদপুরে মোটত ১১টি কূপ খনন করা হয়েছে এর মধ্য ৯টিতে গ্যাস পাওয়া গেছে। ৩টি বন্ধ রয়েছে ও একটি গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও পাইপলাইনের অভাবে বসে রয়েছে ২০১৭ সাল থেকে।

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান দরপত্র জমার সময় ৩ মাস বাড়ছে!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
তেল-গ্যাস অনুসন্ধান দরপত্র জমার সময় ৩ মাস বাড়ছে!

তেল-গ্যাস অনুসন্ধান দরপত্র জমার সময় ৩ মাস বাড়ছে!

  • Font increase
  • Font Decrease

সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র জমার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। বিদেশি একাধিক কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা সূত্র।

বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে ২৪টি ব্লকে (গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ৯ টি) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ১১ মার্চ। দরপত্র জমার জন্য ৬ মাস (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় দেওয়া হয়েছে। সময় শেষ হওয়ার আগেই কেউ কেউ ৬ মাস পর্যন্ত সময় চাইলেও ৩ মাসের বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, কয়েকটি কোম্পানি সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। তার প্রেক্ষিতে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি এখন তাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।

কতদিন সময় বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার কয়েকদিন আগে বার্তা২৪.কম-কে বলেছিলেন, অনেকগুলো বড় বড় কোম্পানি সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কয়েকটি কোম্পানি সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেছে, আমরা চিন্তাভাবনা করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেছিলেন, কৌশলগত কারণে কোনো কোম্পানির নাম আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। কিছু রীতি মেনে চলতে হয়, কোনো বিদেশি কোম্পানির নাম এই পর্যায়ে প্রকাশ করা ঠিক হবে না। তবে এটুকু বলতে পারি, বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা কোম্পানি বিড ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে। তারা টাকা দিয়ে আমাদের ডাটাও কিনেছে।

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। আর ২৪টি ব্লকে দরপত্র ডাকা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি আপডেট করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি।

এবার বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমেরিকান কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও এক্সোন মবিল, জাপানি প্রতিষ্ঠানসহ অনেকগুলো কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে। সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা ২ডি জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। বাংলাদেশের পাশের ব্লক থেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস উত্তোলন করছে মায়ানমার। যে কারণে বাংলাদেশ অংশে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের সাগরাঞ্চলে গ্যাসের মজুদের বিষয়ে আশাবাদী জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছে, দেশের গ্যাস সংকট কাটাতে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই আকর্ষণীয় করা হয়েছে পিএসসি। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করা দেওয়া হলেও এবার গ্যাসের দর নির্ধারিত করা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রডের আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে উঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা বিদ্যমান পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল। ব্রেন্ট ক্রডের দামের ক্ষেত্রে সারা মাসের দর গড় হিসাব ধরা হবে।

দামের পাশাপাশি বাংলাদেশের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করবে।

গত ৮ মে পিএসসি নিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার করা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রে কাজ করতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে। এই সেমিনারেও ১৫টির বেশি আন্তর্জাতিক কোম্পানি অংশ নিয়েছে। দরপত্রে দেশের স্বার্থের পাশাপাশি বিনিয়োগকারী কোম্পানির স্বার্থও দেখা হয়েছে। ফলে এবারের দরপত্র নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী।

;

পুরোমাত্রায় উৎপাদনে ফিরেছে আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: ভারতের গোড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র

ছবি: ভারতের গোড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • Font increase
  • Font Decrease

পুরোমাত্রায় উৎপাদনে ফিরেছে ভারতের গোড্ডায় স্থাপিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাত ৯টায় ১৫১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়েছে বলে জানিয়েছে আদানি গ্রুপ সুত্র।

আদানির ওই কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। একটি ইউনিট ঈদের ছুটিতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে যায়।

আরেকটি ইউনিট থেকে আংশিক উৎপাদনে থাকা অবস্থায় ২৯ জুন টেকনিক্যাল কারনে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং চরম আকার ধারন করে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২ জুলাই উৎপাদনে ফেরার তথ্য আগেই নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছিলেন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ছিল আদানির একটি ইউনিট। সেটিও কাল-পরশুর মধ্যে উৎপাদনে আসবে। আর যে ইউনিটটির টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বন্ধ হয়েছিল, সেটি ইতোমধ্যেই উৎপাদনে এসেছে। আমাদের পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। সেটিও শিগগিরই উৎপাদনে আসবে। তখন আর বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি থাকবে না।

আদানির ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হয়ে বাংলাদেশে আসে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ২১ জুন মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

পিজিসিবি সুত্র জানিয়েছিল, ঈদের ছুটির সময় চাহিদা কম থাকে, সে কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বাই রোটেশনে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট সিডিউল রক্ষণাবেক্ষণে যায় ঈদের আগে। এটি আগামী ৫ জুলাই উৎপাদনে ফেরার কথা রয়েছে। হঠাৎ দ্বিতীয় ইউনিট থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় গত বছরের মার্চে। দ্বিতীয় ইউনিটথেকে উৎপাদন শুরু হয় জুনে।

;

১০০ কূপ খনন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কূপ খনন প্রকল্প/ছবি: বার্তা২৪.কম

কূপ খনন প্রকল্প/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে ১০০ কূপ খনন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন বলে বার্তা২৪কমকে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার আগে থেকেই আমরা কাজগুলো এগিয়ে রেখেছিলাম। যাতে দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করা যায় সে বিষয়ে কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সময় ও অর্থ সাশ্রয় করার জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ এড়াতে চাইছি। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে কাজগুলো করতে চাচ্ছি, যেখানে পেট্রোবাংলার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘ প্রক্রিয়া, আবার অনেক ব্যয়বহুল। কনসালটেন্টের মাধ্যমে যে কাজ ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা খরচ হবে। একই কাজ আমরা নামমাত্র মূল্য ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় সম্পন্ন করতে পারবো। কনসালটেন্ট যে কাজ করতে কয়েকমাস সময় নেবে আমরা সেই কাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে পারবো।

পেট্রোবাংলার চেয়ার‌ম্যান বলেন, পেট্রোবাংলা কূপ খনন করবে সেই কূপে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পাওয়া যেতে পারে। যেখানে শতভাগ ফেল করার সম্ভাবনা থাকে সেখানে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত না। পেট্রোবাংলার কাজের ধরণ পুরোপুরি ভিন্ন বিধায় সেইভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। তাহলেই দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে গতি আসবে।

বর্তমানে ৪৮ কূপ খননের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া ১০০ কূপ খনন প্রকল্প ২০২৬ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে। এতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের কাছে প্রত্যেক বছরে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করে অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে।

দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার কয়েক দশকের ঢিলেমির কারণে সমালোচনায় মুখর ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তবে সেই দিন এখন বদলে যেতে শুরু করেছে। পেট্রোবাংলার খোলনলচে বদলে দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। একদিকে যেমন গতিময় হয়েছে, অন্যদিকে নতুন মাত্রাও যুক্ত হয়েছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার

এতদিন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আটকে ছিল বাংলাদেশ। আরও ছোট করে বলতে গেলে সুরমা বেসিন তথা, সিলেট থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী এবং ভোলার মধ্যে আটকে ছিল। অন্যান্য এলাকায় কিছু অনুসন্ধান কার্যক্রম হলেও তার পরিমাণ নগণ্য বলাই যায়। সেখানেও আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা।

বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে ১১২ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে কমবেশি ৯৯টি। আর ৩ বছরে ৬৯টি কূপ খনন করতে চায় পেট্রোবাংলা। একে অনেকে উচ্চাভিলাষী মনে করলেও খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, একটি কূপে গ্যাস পাওয়া না গেলে হৈচৈ শুরু করলে চলবে না। ১০টির মধ্যে ৮টি ড্রাই হলে ফেলে আসবো তাহলে সম্ভব না। রাজস্থানে ইউনোকল টানা ১৩টি কূপ খনন করে ড্রাই পায়। এরপর কোম্পানির সদরদফতর বলেছিল আর কূপ খনন না করতে, কিন্তু জিওলজিস্ট অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চৌদ্দ নম্বর কূপ খনন করে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় খনি আবিষ্কার করেছে।

পেট্রোবাংলার ১০০ কূপ খনন প্রকল্প সংক্রান্ত সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেছিলেন, ২৫টি কূপ খনন করে যদি ব্যর্থ হন, আর ছাব্বিশ নম্বর কূপে গিয়ে যদি গ্যাস পাওয়া যায়, তার দাম অনেক বেশি। খরচের কয়েকগুণ উঠে আসবে।

ওই অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আমরা অন্ধকার যুগ থেকে বের করে এনেছি। কূপ ফেল করলে আমি চেয়ারম্যান দায় গ্রহণ করবো। কথা দিচ্ছি কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা কিংবা তদন্ত কমিটি হবে না। সাফল্য পেলে সবার আর ফেল করলে দায়িত্ব আমি মাথা পেতে নেবো।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের এমন ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সাহসের সঞ্চার করেছে। যে কারণে বাস্তবিক অর্থেই গতিতে ফিরেছে পেট্রোবাংলায়।

;

দেশের নিট রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ডলার/ছবি: সংগৃহীত

ডলার/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা জুন মাসের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব কেবলমাত্র আইএমএফকে সরবরাহ করা হয় এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না।

ঋণ সহায়তা পাওয়ার পর রিজার্ভ বেড়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

;