দূর হয়েছে বাঁধা, ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস উৎপাদনে যাবে রশীদপুর-৯
![ছবি: সংগৃহীত](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2023/Nov/08/1699459457583.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
পাইপলাইন বসানোর জন্য বন বিভাগের গাছ কাটার অনুমতি পাওয়া পাওয়া গেছে। গাছ কাটার জন্য টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে রশীদপুর-৯ নম্বর কূপের গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিএফসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান।
‘পাইপলাইন না থাকার কারণে গ্যাস উত্তোলন করা যাচ্ছে না’-এই কথা বলে ৫ বছর ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে রশীদপুরের ওই কূপটি। রশিদপুর-৭ নম্বর কূপ পর্যন্ত বিদ্যমান লাইনটি ব্যবহার অনুপযোগী বলে ১৭ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রকল্প হাতে নেয় এসজিএফসিএল। বার্তা২৪.কম এ একাধিক রিপোর্ট প্রকাশের পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে হাইড্রো টেস্টে বিদ্যমান পাইপটি ব্যবহার উপযোগী বলে রিপোর্ট আসে। এরপর ৬ নম্বর কূপে বিদ্যমান লাইনে হুকিং করতে (রশিদপুর-৯) ১০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই পাইপলাইনটি যাবে বনের মধ্য দিয়ে, এ জন্য বনের গাছ কাটতে হবে।
সেই গাছ কাটতে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেওয়া হয় বন বিভাগকে। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করে বন বিভাগ। অবশেষে গত সপ্তাহে সেই অনুমতি হাতে পেয়েছে এসজিএফসিএল। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ১০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে ৫ কিলোমিটার আগেই করা হয়েছে। শুধু বনের জায়গাটুকু অবশিষ্ট রয়েছে। জানুয়ারির মধ্যেই পুরো পাইপ লাইন স্থাপন শেষ করে ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস সরবরাহ দিতে চাই। আমরা আশা করছি দৈনিক কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
আগে কিছুটা অবহেলার শিকার হলেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে নতুন সচিব মোঃ নুরুল আলম যোগদানের পর গতি পায় কাজটিতে। তিনি বন বিভাগের সচিবের সঙ্গে ফোনে আলাপ করে তাগাদা দিলে ফল পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
সম্ভাবনাময় কূপটি নিয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি তথা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের গাছাড়া ভাব ছিল। দেশে চরম সংকটের মধ্যেও কোন গুরুত্ব পায় নি। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে যখন উচ্চমূল্যের কারণে এলএনজি আমদানি বন্ধ, তখনও নজর পড়েনি পড়ে থাকা কূপটিতে।
বর্তমানে স্পর্ট মার্কেট থেকে আমদানিকৃত এলএনজি দাম পড়ছে প্রায় ১২ ডলারের (এমএমবিটিইউ) মতো। ডলার ১১০ টাকা করে অঙ্ক করলেও প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৪৭ টাকার মতো। ভ্যাট ও ট্যাক্স ১০ টাকা ও রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ প্রায় ২ টাকা যোগ করলে ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম পড়ছে ৫৯ টাকার মতো। অথচ রশীদপুর থেকে ১ টাকারও কমমূল্যে গ্যাস পাওয়া সম্ভব।
কম করে হলেও দৈনিক (১০ মিলিয়ন) ২ লাখ ৮৩ হাজার ১৬৮ ঘনমিটার গ্যাস পাওয়া সম্ভব। যার আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার উপরে। গ্যাসের ঘাটতি কারণে ডলার সংকটের মধ্যেও চড়া দামে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ এই কাজটুকু অনেক আগেই করা সুযোগ ছিল। বরং দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে গুরুত্ব দেওয়া চিত্রায়ণ দৃশ্যমান। গ্যাস সংকট দূর করার কথা বলে ভোলা থেকে সিএনজি আকারে ৫ মিলিয়ন (প্রথম ধাপে) গ্যাস আনার বিশাল তোড়জোড় চলছে। সম্প্রতি ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করছে পেট্রোবাংলা। কোম্পানিটি ভোলা থেকে গ্যাস পরিবহন করে ঢাকার পাশ্বর্বতী এলাকায় সরবরাহ করবে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাস পরিবহনের জন্য ৩০.৬০ টাকা দিতে হবে ইন্ট্রাকোকে। শিল্প কারখানায় পাইপলাইনে পাওয়া গ্যাসের জন্য ১৮.০২ টাকা (বৃহৎ শিল্প) পাওয়া গেলেও, এই গ্যাসের মূল্য দিতে হবে ৪৭.৬০ টাকা। খানিকটা খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি প্রবাদের মতো।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, গ্যাস সংকটের কথা বলে ভোলা থেকে গ্যাস আনার আগে রশিদপুরের গ্যাস আনা যেতো। এক দুই মাসের মধ্যেই যে কাজটি করা যেতো। ভোলা থেকে গ্যাস আনার মতো এখানে কোন ঝুঁকি নেই, এবং নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। আবার সেই দামও হতো সাশ্রয়ী। সেই কাজটি কেনো এতোদিনে করা যাচ্ছে না সেটাই বড় বিস্ময়ের। ভোলা থেকে প্রথম দফায় আসবে মাত্র ৫ মিলিয়ন, পরে আরও ২০ মিলিয়ন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ এর সিকিভাগ প্রচেষ্টা নিলে ১ টাকারও কম মূল্যে রশিদপুর থেকে কয়েকগুণ বেশি গ্যাস আসতে পারতো। সেদিকে না পেট্রোবাংলা, না জ্বালানি বিভাগের কোনো আগ্রহ দৃশ্যমান।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেছেন, দেশীয় গ্যাস তুললে যে লাভ তার চেয়ে না তুললে বেশি লাভ। আমদানি করলে কমিশনের বিষয় থাকতে পারে। এটা শুধু আজকে থেকে নয়, ঐতিহাসিকভাবেই অনুসন্ধানে স্থবিরতা বিদ্যমান। সরকার পরিবর্তন হলে একটা পরিবর্তন আশা করা হয়, কিন্তু সেভাবে পরিবর্তন হয় নি। বরং পূর্বের ধারার সঙ্গে নতুন ধারা আমদানি যুক্ত করা হয়েছে। এই অবস্থা থাকলে ৩০ সালে গ্যাস খাত পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে আবিষ্কৃত হয় রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড। এখানে প্রমাণিত মজুদ ১০৬০ বিলিয়ন ঘনফুট, সম্ভাব্য রয়েছে ১৩৭৩ বিসিএফ, আরও সম্ভাবনাময় বিবেচনা করা হয় ৬৮০ বিসিএফ। উত্তোলন যোগ্য পরিমাণ (১পি) ও সম্ভাব্য মিলে মজুদ ধারণা করা হয় ২৪৩৩ বিসিএফ। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে ৬৭৫ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। অবশিষ্ট মজুদের পরিমাণ রয়েছে ১৭৫৭ বিএসএফ। ৭ নভেম্বর ৫টি কূপ দিয়ে ৪৬.৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। রশিদপুরে মোটত ১১টি কূপ খনন করা হয়েছে এর মধ্য ৯টিতে গ্যাস পাওয়া গেছে। ৩টি বন্ধ রয়েছে ও একটি গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও পাইপলাইনের অভাবে বসে রয়েছে ২০১৭ সাল থেকে।