৬৩.৭৮ শতাংশ অভিযোগেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বিদ্যুতের সংযোগ পেতে ঘুষ প্রদান, বিল দেওয়ার পরও পরবর্তী মাসের বিলে আবার তুলে দেওয়া, অতিরিক্ত বিল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা উঠে এসেছে সমীক্ষা রিপোর্টে।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিদ্যুৎ ভবনে গ্রাহক সন্তুষ্টি জরিপের রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে আসে। ৬টি বিতরণ কোম্পানির ১৫ হাজার ২৪৫ গ্রাহকের উপর সার্ভে পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে আবাসিক ৯০.৯৩ শতাংশ, শিল্প দশমিক ৮৯ শতাংশ, বাণিজ্যিক ৮ শতাংশ এবং সেচ দশমিক ১৮ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

সার্ভেতে অংশ নেওয়া গ্রাহকদের মধ্যে ৫২.০১ শতাংশ প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী। তাদের কাছ থেকে কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর নেওয়া হয়। এতে গ্রাহকরা নানা রকম হয়রানির কথা জানিয়েছেন। পাওয়ার সেল এর তত্ত্বাবধানে তত্ত্বাবধানে মাধ্যমে এই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।

বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ সাপেক্ষে বছরান্তে প্রত্যায়ন প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ৫১.৭৬ শতাংশ গ্রাহককে এই প্রত্যায়ন দেওয়া হয় নি। বিতরণ সংস্থা ভেদে তারতম্য রয়েছে, ওজোপাডিকোতে সবচেয়ে বেশি গাফিলতি পাওয়া গেছে। খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের বিতরণের দায়িত্বে থাকা কোম্পানিটির ৯৫.১ শতাংশ গ্রাহক প্রত্যায়ন না পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহকরা ৯৩ শতাংশ এই সেবা থেকে বঞ্চিত। এই সেবায় এগিয়ে রয়েছে ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি। ঢাকার উত্তরাংশে বিতরণের দায়িত্বে থাকা কোম্পানিটির ১৯.৬ শতাংশ গ্রাহক না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সমীক্ষায়।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ খাতের গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগের রেকর্ড করা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে। মোট প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে ৬৩.৭৮ শতাংশই বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে। এরপরেই ৩৪.৪২ শতাংশ অভিযোগ হচ্ছে লোডশেডিং সংক্রান্ত। এছাড়া রয়েছে ভোল্টেজ ওঠা-নামা ও অতিরিক্ত বিল সংক্রান্ত। এখানেও শীর্ষে রয়েছে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে। বিতরণ কোম্পানি দু’টিতে যথাক্রমে ৬৯.৫৭ শতাংশ এবং ৬৯.৩৪ শতাংশ অভিযোগ যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট সংক্রান্ত।

প্রাপ্ত পরিষেবার মান নিয়েও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না গ্রাহকরা। সেবার মান ভালো মতামত দিয়েছে ৩৯.৭ শতাংশ, আর ৪১.৪ শতাংশ উত্তর দিয়েছে মোটামুটি। আর ৬ শতাংশ উত্তর এসেছে খুব ভালো। অন্যদিকে কল সেন্টারে থাকা লোকজনের সাড়াদানের মানকে ভালো বলেছে মাত্র ৩৫.৬০ শতাংশ, আর ৩৮.৩১ শতাংশ উত্তর দিয়েছে মোটামুটি। অন্যদিকে দাখিলকৃত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রদত্ত সমাধানের মানকে মোটামুটি বলেছেন ৪০ শতাংশ, আর ৩৯.২ শতাংশ বলেছে ভালো।

২০২২ সালের জুলাই থেকে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত ১০ মাসের সিস্টেম অ্যাভারেজ ফ্রিকোয়েন্সি ডিউরেশন ইনডেক্সে (সাইফি), সিস্টেম অ্যাভারেজ ইনট্রাপশন ডিউরেশন ইনডেক্স (সাইদি)। এতে বিদ্যুৎ না থাকার দুই ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। একটি হচ্ছে পূর্বঘোষিত লোডশেডিং কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ আরেকটি হচ্ছে ঘোষণা ছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রাহকরা।

১০ মাসে ঘোষণা অনুযায়ী বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল প্রায় ৬৬ ঘণ্টা, একই সময়ে ঘোষণা ছাড়া লোডশেডিং হয়েছে সোয়া ১০ ঘণ্টা। ২১৮ দফায় লোডশেডিংয়ের তথ্য উঠে এসেছে চিত্রে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে আরইবির পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়া ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ওজোপাডিকো। কোম্পানিটির প্রায় ৮০ ঘণ্টা শিডিউল লোডশেডিং এবং সাড়ে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে ঘোষণা ছাড়া। বিতরণ কোম্পানিটির ২৭৫ দফায় লোডশেডিং দিয়েছে।

এসব তথ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি তৈরি করা। কোনো কোম্পানি ইচ্ছা করেই তথ্যে কারচুপি করলে খুব একটা করার কিছু নেই। তবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ভবিষ্যতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিকে সাইদি-সাইফি নির্ধারণের জন্য সিস্টেম আধুনিকায়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, আপনারা যে সময়ে (মার্চ-মে) সার্ভে করেছেন তখন লোডশেডিং কম ছিল। জুলাই আগস্টে বেশি লোডশেডিং হয়েছে। মূলত জ্বালানি সংকটের কারণে লোডশেডিং হয়েছে তখন। আমার বাসায় ১৫ মিনিট বিদ্যুৎ না থাকলে অস্থির হয়ে যাই, বিদ্যুৎ থাকবে না কেন। গ্রাহক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাইবে এটা ন্যায্য চাওয়া। আমরা ভবিষ্যতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারবো।

তিনি বলেন, মিটার রিডারদের ভুলের কারণে বিল বেশি আসে,আমরা স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের দিকে যাচ্ছি। ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে। তখন আর এই অভিযোগ থাকবে না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত আচরণগত সন্তুষ্টি। আচরণগত সমস্যা দূর করতে, যত আধুনিকায়ন হবে মিডলম্যান থাকবে না। ততো দ্রুত সেবার মান বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুবুর রহমান, পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান, ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলীসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।