সিলেট-১০ খনি থেকে তেল উত্তোলনে পরীক্ষা চলছে: নসরুল হামিদ
সিলেট থেকে: বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সিলেট কূপ-১০ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তেল উৎপাদনের বিষয়ে সরকার আশাবাদী। এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে দুই মাসের মধ্যে জানা যাবে।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সিলেট-১০ কূপ এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।
এর আগে অনুসন্ধানাধীন কূপ কৈলাশটিলা-৮ খনন প্রকল্প পরিদর্শন, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন এবং বঙ্গবন্ধু কর্নার ও প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের ডাটা সেন্টার উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিন দিনের সফরে সিলেট অঞ্চলে থাকছেন তিনি। কয়েকটি গ্যাস ফিল্ড ও প্রসেস প্লান্ট পরিদর্শন, মডেল পেট্রোল পাম্প উদ্বোধন, পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ উদ্বোধনসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি থাকছে- এই সময়ে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, কূপের ভিতরে এবং মুখে প্রেসার খুব ভালো, যে প্রেসারে তেল পাওয়া যাচ্ছে তাতে আমরা আশাবাদী।
তিনি জানান, এখানে গ্যাসের চাপ বেশি হওয়ায় আরও দুটি কূপ খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে গ্যাসের উৎপাদন সক্ষমতাও বাড়বে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আমরা দ্বীপে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। এখন গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার করেছে। অর্থনীতির গতি ধরে রাখার জন্য জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। বসে থাকার সময় নেই, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি ভালো করছে, পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে পরীক্ষিত বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এখন প্রযুক্তিগত সাপোর্ট রয়েছে। আর যারা সমালোচনা করেন, তারা অনেকেই এ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন না’।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সিলেট-১০ নম্বর কূপটি খুবই সৌভাগ্যের, এখানে গ্যাসের চাপ ৬০০০ পিএসআই পাওয়া গেছে। পরীক্ষার সময় ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন করার সময় চাপ ৩২০০ পিএসআই পাওয়া গেছে। অনেক কূপেই উত্তোলনের সময় চাপ কমে যায়, কিন্তু সিলেট-১০ খুবই ব্যতিক্রম।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ১০ নম্বর কূপে অনুসন্ধান চলাকালে গত ৮ ডিসেম্বর তেলের উপস্থিতি জানা যায়। কূপটিতে তিনটি গ্যাস স্তরের পাশাপাশি তেলের অবস্থান নিশ্চিত করেন অনুসন্ধানকারীরা। ১৩৯৭-১৪৪৫ মিটার গভীরতায় তেলের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম দিন ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল ওঠে।
প্রাথমিকভাবে এপিআই গ্র্যাভিটি ভিটি ২৯.৭ ডিগ্রি পাওয়া যায়। পরীক্ষা সম্পন্ন হলে তেলের মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে মজুদ ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ব্যারেল ধারণা করা হলেও বাপেক্সের মূল্যায়ন বলছে, এখানে মজুদ ১৫ থেকে ১৮ মিলিয়ন ব্যারেল হতে পারে। দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
উত্তোলিত তেল পরীক্ষার জন্য বুয়েট, ইস্টার্ন রিফাইনানিসহ তিনটি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রেজাল্ট পাওয়া গেলে আরও বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে।
কূপটির গ্যাস স্তরগুলোর অবস্থান হচ্ছে ২৪৬০ থেকে ২৪৭৫ মিটার, ২৫৪০ থেকে ২৫৭৬ মিটার ও ৩৩০০ মিটার গভীরতায়। গ্যাসের মজুদ হতে পারে ৪৩.৬ থেকে ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট। যার মূল্য ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী
সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি বর্তমানে দৈনিক ১১৫.২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করছে। কৈলাশটিলা-৮, সিলেট-১০, সিলেট-১০ এক্স ও সিলেট-১১ সহ বেশকিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। কোম্পানিটি আশা করছে চলমান কার্যক্রম ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হলে দৈনিক ২৫০ থেকে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে।