সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগামী ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার কথা বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।
চলতি মাসের শুরুর দিকেই পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নিশ্চিত করেছিলেন মার্চে দরপত্র আহ্বান করার কথা। তিনি বলেছিলেন, বিড ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য ৬ মাস সময় দেওয়া হবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বরে পিএসসি (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি) চূড়ান্ত করতে চাই। এর আগে বিভিন্ন দেশে রোড-শো করা হবে।
আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল ও শেভরনের মতো কোম্পানি যারা আগে আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা প্রতিযোগিতামূলক দরের দিকে যাচ্ছি। এখানে যে কোম্পানির প্রস্তাব ভালো মনে হবে এবং যাদেরকে যোগ্য মনে করা হবে তারাই কাজ পাবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই আকর্ষণীয় করা হয়েছে পিএসসি। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করা দেওয়া হলেও এবার গ্যাসের দর নির্ধারিত করা হয়নি।ব্রেন্ট ক্রডের আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে উঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা বিদ্যমান পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল। ব্রেন্ট ক্রডের দামের ক্ষেত্রে সারা মাসের দর গড় হিসেবে ধরা হবে।
দামের পাশাপাশি সরকারের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করবে। তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে কিংবা, বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হলে শর্তসাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাব পেট্রোবাংলাকে দিতে হবে, পেট্রোবাংলা নিতে না চাইলে তৃতীয়পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ পাবে বিদেশি কোম্পানি। পিএসসি আপডেট করায় মার্কিন কোম্পানি শেভরন, এক্সন মবিলসহ অনেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এক্সন মবিলের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে।
বৈঠকের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানিয়েছেন, এক্সন মবিল প্রথমে সাগরে ব্লক ইজারা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। তার কিছুদিন পর ২ডি সিসমিক সার্ভে করার আগ্রহের কথা জানায়। তারা বিডিং রাউন্ডে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী আছে কি-না, জানতে চেয়েছি। এক্সন মবিলের প্রতিনিধিদল কথা বলে জানাতে চেয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। এক দশক পেরিয়ে গেলেও সমুদ্র সীমার সফলতা কোন কাজেই আসেনি, বিশেষ করে খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে। দেশের ভয়াবহ জ্বালানি সংকটের স্বস্তিকর সমাধান এই বিশাল জলরাশির নিচে লুকায়িত বলে মনে করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কারণ বাংলাদেশের ব্লকের পাশেই মিয়ানমার বিশাল গ্যাসের মজুদ পেয়েছে। নতুন দরপত্রের মাধ্যমে সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বিশাল সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম তাদের রিপোর্ট তৈরি করেছে। শেভরন সে সব তথ্য পরীক্ষা করে দেখছে বলে সম্প্রতি মিডিয়াকে জানিয়েছে শেভরন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এরিক এম ওয়াকার।