মূল্যস্ফীতির চাপে সঞ্চয়পত্র ভেঙে খরচ মেটাচ্ছে মানুষ
মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খরচ মেটাচ্ছে। এতে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে টানা ৫ মাস। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) নিট বিক্রি ঋণাত্মকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকার। আর আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৯ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না গ্রাহক। এতে করে এ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের মানুষ এখন অনেকটাই সঞ্চয়বিমুখ। জমানো ডিপোজিট ভেঙে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্য ও সেবার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে মানুষের; যার প্রভাব পড়ে সঞ্চয়ের ওপরও। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকে এখনো সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকে এখনও সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন। এ ছাড়া নানা কড়াকড়ির কারণে এ সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকে। ফলে এ খাতে আশানুরূপ বিক্রি বাড়ছে না। এ ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ছে। কোনো কোনো ব্যাংকে ঋণের সুদের হার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে মানুষ এখন উচ্চসুদের আশায় ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংক খাতের আমানতের পরিমাণ ছিলো ১৬.৪০ লাখ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬,৫৪ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১৩ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অভ ট্রেজারি বিল) রেট ঘোষণা করার পর থেকে ক্রমাগত ব্যাংকঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়ছে। ফলে অন্যান্য খাত থেকে টাকা ব্যাংকে ঢুকছে। তাই ব্যাংকের আমানত বাড়লেও বিনিয়োগ কমছে সঞ্চয়পত্রে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই–জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৪৯ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার। একই সময়ে এ খাতে সরকারকে সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
অর্থাৎ ৭ মাসে সরকার এই খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি। উল্টো অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুদের হার হ্রাস ও নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সে কারণেই নিট বিক্রি নেগেটিভ হয়েছে। এছাড়া সরকারকে কোষাগার থেকে সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
তবে আমানতে সুদের হার বাড়ায় ব্যাংক আমানত বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।