একীভূতকরণ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের বাইরে আপাতত অন্য কোনো ব্যাংক একীভূতকরণ করা হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।

তিনি জানান, আপাতত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বিডিবিএল, বেসিক, পদ্মা ও ন্যাশনাল ব্যাংকের একভূতীকরণ নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোর বাইরে নতুন কোনো ব্যাংককে আপাতত একীভূত করা হবে না। তবে পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো ব্যাংক একীভূত করা হবে কি না, সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূতকরণের ঘোষণার পর তালিকায় এসেছে সরকারি-বেসরকারি আরও ডজনখানেকের নাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ করেই সুশাসন ফেরানো যাবে না এই খাতে। ব্যবস্থা নিতে হবে দায়ী পরিচালকদের বিরুদ্ধেও।

এদিকে ব্যাংক একীভূতকরণ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে দুর্বল (খারাপ অবস্থা) থাকা ব্যাংকগুলো নিজ থেকে একীভূত না হলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করা হবে। তার আগে দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা সই করতে হবে। এরপর আমানতকারী, পাওনাদার ও বিনিয়োগকারীর অর্থ ফেরতের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক চিত্র বের করবে। সবশেষ আদালতের কাছে একীভূতকরণের আবেদন করতে হবে।

এতে কোনো ব্যাংক মূলধন ও তারল্য ঘাটতি, খেলাপি ঋণ, সুশাসনের ঘাটতি এবং আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপের কারণে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতাভুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পুনরুদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ মানতে হবে। পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে আমানতকারীর স্বার্থে ব্যাংক বাধ্যতামূলক একীভূতকরণ হবে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যে ব্যাংকের অনুসরণের এ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

   

বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা, পেট্রোল আড়াই টাকা বাড়িয়ে ১২৪ দশমিক ৫ টাকা ও অকটেনের দাম আড়াই টাকা বাড়িয়ে ১২৮ দশমিক ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন এই দাম বুধবার (১ মে) থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে, গত ৩১ মার্চ লিটার প্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২ টাকা ২৫ পয়সা কমিয়ে ১০৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে অপরিবর্তিত থাকে পেট্রোল, অকটেনের দাম।

তার আগে, মার্চের ৭ তারিখে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। তখন লিটার প্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৮.২৫ টাকা, পেট্রোল ১২৫ থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা, অকটেন ১৩০ টাকা থেকে কমিয়ে ১২৬ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

আর নজিরবিহীন দাম বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ৫ আগস্ট রাতে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জারি করা আদেশে ডিজেল ও কেরোসিন লিটার প্রতি ৩৪ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেনে ৪৬ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১১৪ টাকা লিটার, পেট্রোল ১৩০ টাকা এবং অকটেন ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই দাম বৃদ্ধির পর গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছিল সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ। তার আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকায় করা হয়। ওই সময়েও পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ।

ওই নজিরবিহীন দাম বৃদ্ধির পর ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। ওইদিন প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৯ টাকা, পেট্রোল ১৩০ থেকে কমিয়ে ১২৫ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সরকার জ্বালানি তেলের দামে ভর্তুকি প্রদান থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে আইএমএফের চাপও রয়েছে। ‘জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা’ প্রজ্ঞাপন ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ফর্মূলা অনুযায়ী, প্রতিমাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় করা হবে। গেজেট অনুযায়ী, বিপিসি ও অন্যদের কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু আমদানি মূল্যের তারতম্য প্রতিমাসে কমবেশি হবে।

অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত যানবাহনে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হয় বিধায় এর মূল্য বিলাস দ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে বেশি রাখা হয়। ফর্মূলা অনুযায়ী অকটেনের মূল্য নির্ধারণকালে ডিজেলের সঙ্গে পার্থক্য লিটার প্রতি ন্যূনতম ১০ টাকা যেন থাকে সেজন্য প্রাইসিং ফর্মূলায় ‘α’ ফ্যাক্টর প্রযোজ্য হবে।

;

রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে অটোমেশনের বিকল্প নেই: অর্থ প্রতিমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অটোমেশনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশানের ‘আমারি ঢাকা’র গ্র্যান্ড বলরুমে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) আয়োজিত 'বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর প্রয়োজনীয় রূপরেখা' (Bangladesh’s Domestic Resource Mobilisation: Imperatives and a Roadmap) উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সবাই অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করতে পারেন। বাংলাদেশের ইনফরমাল সেক্টর অনেক বড় বিধায় এই সেক্টর থেকে কর আদায় গুরত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, বেসরকারি খাত আমাদের সঙ্গে থেকে সহায়তা করতে পারে।

ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, মানি মার্কেট, বেসরকারি ও সরকারি ঋণ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ‘ক্যাপিটাল মার্কেট’ নিয়ে আরো আলোচনা করা দরকার। কীভাবে আরো বেশি ভালো কোম্পানি মার্কেটে আসে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। তাহলে মানি মার্কেটের ওপর চাপ কমবে। ক্যাপিটাল মার্কেট, ইক্যুইটি মার্কেট ও বন্ড মার্কেট বৃদ্ধি করা জরুরি।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন শেষে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলস কাজ করছে বর্তমান সরকার। তার সুযোগ্য পরিচালনায় গত ১৫ বছরে যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, সেগুলো থেকে দেশ এখন রিটার্ন পাচ্ছে। ‘আইবাস’ (ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম-IBAS) ব্যবস্থাপনার কারণে বাজেটের বাস্তবায়নের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আগে বাজেট পাস হলেও বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হতে অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিক চলে যেতো। বর্তমানে ১ জুলাই থেকেই অফিসগুলো বাজেট ব্যবহার করছে।

আজকের (৩০ এপ্রিল) আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে যেসব পরামর্শ উঠে এসেছে, সেগুলো অর্থ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলেও আশ্বাস দেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রাহমাতুল মুনীম ও এফবিসিসিআই'র প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম।

মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই'র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআরআই'র চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন পিআরআই'র ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ, এমসিসিআই'র প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান, সিএসই চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ডিসিসিআই'র প্রেসিডেন্ট আশরাফ আহমেদসহ প্যানেল আলোচকবৃন্দ।

;

পাট রফতানিতে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচামাল



আরিফুল ইসলাম মিঠু, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পাট রফতানিতে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচামাল

পাট রফতানিতে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচামাল

  • Font increase
  • Font Decrease

পাট রফতানি খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কাঁচামাল, এবং এ কাঁচামালের অভাববেই প্রতিবন্ধক বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ডাইভারসিফাইড জুট প্রোডাক্টস, ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না।

তিনি বলছেন, বৈচিত্র্যময় পাটজাত পণ্য তৈরির কাঁচামাল পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাটজাত পণ্য তৈরির জন্য ভারতে ১০০ ধরনেরও বেশি পাটের কাপড় রয়েছে। সেসব দিয়ে মানসম্পন্ন পণ্যও তৈরি করতে পারে ভারত। অন্যদিকে বাংলাদেশে মাত্র চার থেকে পাঁচ ধরনের কাপড় রয়েছে এবং কাপড়ের গুণগত মানও তেমন ভালো নয়।

কাঁচামাল বিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের বিশেষায়িত পাটকল স্থাপন করতে হবে; যা শুধু কাপড়ই তৈরি করবে না, একইসাথে রং করবে এবং লেমিনেশনের সুবিধা থাকবে। এতে উদ্যোক্তারা উচ্চমানের পণ্য তৈরি করতে পারবেন বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি বলেন, ডিজাইন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং পণ্যের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের একটি ‘জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার' রয়েছে। ভারতের জাতীয় পাট বোর্ডের মতোই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের পণ্য বিক্রির জন্য সংস্থাটির স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনও প্রকল্পের তহবিলে চলে। ফলে, প্রমোশন সেন্টারটি তহবিল সংকটের কারণে উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।

ভারতের এমন চারটি শাখা রয়েছে যা পণ্য উন্নয়ন বা কাঁচামাল উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট। বাজার সম্প্রসারণের জন্য তারা প্রায় ২০-২৫টি আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করে থাকে। আমাদের সরকারকেও এমন আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করতে হবে।

এছাড়াও তহবিল সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সুলভ ঋণ’ সুবিধাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বিভিন্ন শিল্পখাতে সরকারের তহবিল নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সুলভ ঋণ বাস্তবায়ন করে থাকে। অন্যান্য খাতে এসব ঋণ সুবিধা বেশি থাকলেও পাট কৃষিজাত পণ্য হওয়ায় তেমন সুবিধা পায় না। এছাড়া ‘সুলভ ঋণের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্তও নয় পাট।

কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচা পাট সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আমাদের ২ শতাংশ কর দিতে হয়। শিল্পের উন্নয়নে সরকারকে ট্যাক্স নেওয়া বন্ধ করতে হবে। আবার পাট রফতানিতে প্রণোদনা পাওয়া নিয়েও রয়েছে জটিলতা। পাটজাত পণ্য রফতানিতে প্রণোদনা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিদ্যমান সার্কুলার সংশোধন করতে হবে।

আরএমজি খাতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আরএমজি এত বড় শিল্পখাতে পরিণত হওয়ার কারণ তারা বন্ডেড গুদামের সুবিধা পেয়েছে। আরএমজি সেক্টরের মতো পাট ও চামড়া খাতও সরকারের তেমন সুযোগ-সুবিধা পেতে চায়। কিন্তু এনবিআর কর্মকর্তাদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে তারা নতুন খাতে লাইসেন্স দিতে চান না।

বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৮৫ শতাংশ পাটজাত পণ্য, কাঁচা পাট বা সুতা বিদেশে রফতানি করছে। এতে কোনো কমপ্লায়েন্সের প্রয়োজন হয় না। কারণ তারা তাদের কারখানার কাঁচামাল দিয়ে পাট-পণ্য তৈরি করছে। বাংলাদেশে প্রচলিত পাটকলের ৯৯ শতাংশের কোনো কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট নেই।

;

পাট ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে বহুমুখীকরণে বাধা কোথায়?



আরিফুল ইসলাম মিঠু, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ইনফোগ্রাফিক্স: মামুনুর রশীদ, বার্তা২৪.কম

ইনফোগ্রাফিক্স: মামুনুর রশীদ, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘদিন ধরেই রফতানিমুখী পণ্যকে বহুমুখীকরণ করার চেষ্টা করে আসছে বাংলাদেশ। তবে তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প থেকে কোনভাবে বেরিয়ে আসতে পারছে না দেশটি ।

বাংলাদেশের সর্বশেষ রফতানি নীতিতে ১৮টি অগ্রাধিকার খাত এবং ১৪টি খাতকে ‘থার্স্ট সেক্টর’ (উদীয়মান খাত) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রফতানি নীতিতে বলা হয়েছে, রফতানিকারকরা কম সুদের হারে ঋণ পাবেন, আয়করের ওপর ছাড়, বন্ডেড গুদাম সুবিধা এবং নতুন বাজার, বাজারের পণ্যগুলি খুঁজে বের করতে এবং এফডিআই (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১১.৫২ শতাংশ প্রবদ্ধি অর্জনের জন্য ৭২ বিলিয়ন ডলারের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পণ্য রফতানির জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬২ বিলিয়ন ডলার এবং সেবাখাতের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ১০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪.৫৫  বিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৫.৮৮ শতাংশ।

অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে, বাংলাদেশ ৩৭,২০২.৬৩ মিলিয়ন ডলারের আরএমজি পণ্য এবং ৭৯৪.১৯ মিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ৬৫৯.৫৪ মিলিয়ন ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করেছে। আর এতে আরএমজি খাতের অবদান ৮৫.৪২ শতাংশ।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশের রফতানি হয়েছে, মোট ৩০,১৮৬.৬২ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আরএমজি খাত ২৪,৪৯১.৮৮ ডলার, ৭৪৫.৬৩ মিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ৮২৪.৪৯  মিলিয়ন ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করেছে। এক্ষেত্রে আরএমজি খাতের অবদান ছিল ৮১.১৩ শতাংশ।

পাট পাটজাত পণ্য

শীর্ষস্থানীয় পাট পণ্য রফতানিকারকদের একজন, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, পাটজাত পণ্য বহুমুখীকরণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচামাল পাওয়া।

ভারতে পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য একশ’রও বেশি পাটের সুতা রয়েছে। তারা এ সুতা দিয়ে মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে মাত্র চার থেকে পাঁচ ধরনের পাটজাত সুতা রয়েছে এবং এ সুতা তেমন একটা মানসম্পন্ন নয়।

তিনি বলেন, ‘কাঁচামাল আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণেরণের বলছি, কিন্তু আমাদের কাছে এই ধরনের পণ্য তৈরির কাঁচামাল নেই।’

সমস্যার উত্তরণ প্রসঙ্গে রাশেদুল করিম মুন্না জানান, পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য বিশেষায়িত পাটকল স্থাপন করতে হবে, যা শুধু সুতাই তৈরি করবে না, রঙ এবং লেমিনেশন করার সুবিধাও দেবে, যাতে উদ্যোক্তারা উন্নতমানের পণ্য তৈরি করতে পারেন।

এ জন্য বাংলাদেশের ‘জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার’, আমাদের পণ্য ডিজাইনে সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং পণ্যের মান উন্নয়নে দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এ সেন্টার আমাদের পণ্য বিক্রির জন্য স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ‘ভারতের জাতীয় পাট বোর্ড’ ঠিক এই কাজটিই করে থাকে।

বাংলাদেশের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার প্রকল্প সহায়তা দিয়ে চলে বলে ভারতের জাতীয় পাট বোর্ডের মতো ভূমিকা রাখতে পারে না। সীমিত তহবিল দিয়ে এ কাজ করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ৮৫ শতাংশ কাঁচা পাট বা সুতা বিদেশে রফতানি করে।

পিছিয়ে চামড়াজাত পণ্য

বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- এলজিডব্লিউ সার্টিফিকেট।

বুড়িগঙ্গা নদী বাঁচাতে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে অনেক কারখানাতেই ‘কমন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি- সাধারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট) স্থাপন করা হয়নি। কোনো কোনো কারখানায় ইটিপি বন্ধ রাখা হয়, অর্থ বাঁচাতে। ফলে এখানকার ট্যানারি শিল্প এখনো পানি ও পরিবেশকে দূষিত করে চলেছে।

দিলজাহান বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ভূঁইয়া জানান, এখন শুধু চীন তাদের কাছ থেকে চামড়া কেনে। তারা একটি পণ্য এক ডলার ১০ সেন্ট থেকে এক ডলার ২০ সেন্টে কেনে। তারা সাত বছর আগে একই পণ্য ২ ডলার ২০ সেন্টে বিক্রি করতেন।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘চীন ছাড়া আমাদের কাছ থেকে অন্য কোনো দেশ কাঁচা চামড়া কিনতে আসে না। এর কারণ হিসেবে অন্য দেশগুলোর বক্তব্য, এজন্য আমাদের এলডব্লিউজি সনদ লাগবে। কিন্তু এ সনদ পেতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সনদ লাগবে। এ সদন ছাড়া তারা আমাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনবে না।’

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি ) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিটি সেক্টরে নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার সঙ্গে তারা যে কাঠামোতে কাজ করে সেখানেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যদিও আরএমজি সেক্টর ৪০ বছরের পুরনো একটি শিল্প। তারপরেও এখাতে প্রণোদনা দিতে হয়। এটি এখন পক্ষপাতমূলক হয়ে গেছে। তারা এখনো বন্ডেড সুবিধা ভোগ করে’।

‘আরএমজি উদ্যোক্তারা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করতে পারলেও অন্য শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা তা করতে পারেননি। ফলে, অন্যান্য খাতের উদ্যোক্তারা দুর্বলই থেকে যাচ্ছেন।’- বলে মনে করেন তৌফিকুল ইসলাম খান।

তিনি এটাও স্মরণ করে দেন, ‘আরএমজি উদ্যোক্তারা যখনই কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, তখনই তারা ঐক্যবদ্ধভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। অন্য সেক্টরের স্টেকহোল্ডাররা তা করতে পারেননি। ফলস্বরূপ, নীতিনির্ধারণ সবসময় যারা বেশি প্রভাবশালী, তাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। চামড়া শিল্পের সমস্যা হচ্ছে, কমপ্লায়েন্স সমস্যা। এটি এই খাতের একটি সুনির্দিষ্ট সমস্যা। এইখান থেকে উন্নীত হতে হবে।’

কৌশলগত প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়ে সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান জানান, সরকার রফতানিখাতকে 'থ্রাস্ট সেক্টর’ ঘোষণা করেছে। এসব পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য আমাদের কৌশলগত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রয়োজন।

;