মাতারবাড়ি বন্দর নিয়ে ঠেলাঠেলি

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

এতোদিন চলছিলো রশি টানাটানি, যে যার দিকে টানছিলো। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে চলছে ঠেলাঠেলি, একপক্ষ ঠেলে দিচ্ছে অন্যপক্ষের দিকে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে ঠিক এমনটাই চলছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র। এই ঠেলাঠেলি চলছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে।

চাপে পড়ে কাগজে কলমে বুঝে নিলেও সমুদ্রবন্দরের আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে কয়েক মাস ধরে। দফায় দফায় চিঠি দিলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) সাড়া দিচ্ছে না। ফলে হস্তান্তরও হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র একথা জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কয়লাবাহী লাইটারেজ জাহাজ চলাচলের উপযোগী করে চ্যানেল তৈরির প্রস্তাবনা দেওয়া হয় আরো আগে। ওই সময়ে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে রশি টানাটানি চলছিল। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রস্তাবনার বিপরীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দিতে বলা হয়। তারই প্রেক্ষিতে নাব্যতা বাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৫ মিটার করা হয়।

যথারীতি চ্যানেল ও জেটি নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করে আনে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনানুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লাবাহী জাহাজ দিয়েই যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশে প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরটি। ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিবের সভাপতিত্বে মাতারবাড়ি চ্যানেল হস্তান্তর ও লভ্যাংশ বন্টনের সভা হয়। ওই সভায় গত বছরের (২০২৩) জুনের মধ্যে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

কাগজে কলমে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে মাতারবাড়ি চ্যানেল হস্তান্তর করা হয়। কাগজে কলমে বুঝে নিলেও চার্জ বুঝে নেয়নি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বন্দর ব্যবহারের মাসুল ঠিকই বুঝে নিচ্ছে চবক।

কাগজে কলমে বুঝে নেওয়ার সময় কথা ছিল নাব্যতা যাচাই করে চার্জ বুঝে নেবে। পরিদর্শনের জন্য প্রতিনিধি চেয়ে ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি চবকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেই চিঠির জবাব কিংবা প্রতিনিধি পাঠায়নি চবক। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ফের তাগাদাপত্র দেওয়া হয়। তারপরও চবকের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায় নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠিতে আরও বলা হয়, চুক্তি মোতাবেক যৌথসার্ভে পরিচালনার শেষে ইপিসি ঠিকাদারের দায়িত্ব শেষ হবে। পরবর্তীতে ইপিসি ঠিকাদারকে ড্রেজিং কিংবা অন্যান্য কাজের জন্য বলা হলে ডেমারেজ দিতে হবে। এতে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের অপচয় হবে ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হলে পুনরায় পলি পড়ে নাব্যতা কমে যাবে।

প্রতিনিধি প্রেরণ এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চবকের নিকটি বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। যুগ্মসচিব তাহমিনা বেগম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি নৌ পরিহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বরাবরে প্রেরণ করা হয়। এরপরও কোন সুরাহা হয় নি। দীর্ঘদিন কেটে গেলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের খাম-খেয়ালীর কারণে চার্জ হস্তান্তর প্রক্রিয়া ঝূঁলে রয়েছে।

আর এতে করে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির উপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিষয়টি। তাদের ২০-৩০ জনের মতো নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে। আবার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পলি পড়ে সংকট তৈরি আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই একবার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ড্রেজিং করতে হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুককে ফোন করা হলে মিটিংয়ে আছেন বলে এড়িয়ে যান।