বিদ্যুতের সক্ষমতা বেড়েছে, থমকে আছে প্রকৃত উৎপাদন
বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা সঙ্গে মিলছে না প্রকৃত উৎপাদনের চিত্র। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে ১০৯৪৮ মেগাওয়াট, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১০০৯৭ মেগাওয়াট। অর্থাৎ গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ প্রকৃত উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৯০০ মেগাওয়াটের মতো।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্র জানিয়েছে, ভারত থেকে ২৬৫৬ মেগাওয়াট আমদানিসহ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের (ক্যাপটিভ ছাড়া) সক্ষমতা রয়েছে ২৬৩৬৪ মেগাওয়াট। আর ২০২৩ সালের জুলাই থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে ৯৫ হাজার ৯১১ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার। যা ঘণ্টায় গড় দাঁড়ায় ১০৯৪৮ মেগাওয়াট। সে হিসেবে সক্ষমতার মাত্র সাড়ে ৪১ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকৃত উৎপাদন ছিল মাত্র ৪০.৫৩ শতাংশ মাত্র।
রিজার্ভ মার্জিনের (বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও আপোদকালীন মজুদ) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। সেখানে গড়ে ৫৯ শতাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অলস বসে থেকেছে। উৎপাদনের সঙ্গে তুলনা করলে এই হার দাঁড়ায় ১৫০ শতাংশের মতো।
শঙ্কার কারণ হচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি পেমেন্টের জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা ঠিকই গুনতে হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হয়েছে ১৮ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এ কারণে লাফিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩.১৬ টাকা আর ২০২২ সালে সাড়ে ৮ টাকার মতো, এখন গড় উৎপাদন খরচ ১২ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এখনই ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেকার থাকছে, প্রাক্কলন অনুযায়ী বাড়ছে না বিদ্যুতের চাহিদা। অন্যদিকে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্প রয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলে আসা অর্থ হচ্ছে অলসের অনুপাত বেড়ে যাওয়া। আর বসে থাকা মানেই গড় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি।
সংশোধিত পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানে (আরপিএসএমপি-২০১৬) ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ চাহিদার ৩ ধরনের (অর্থনীতির উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন গতি অনুযায়ী) প্রাক্কলন করা হয়। মধ্যম বা বেজড কেস অনুযায়ী চাহিদার প্রাক্কলন ছিল ২৩৪১৭ মেগাওয়াট। চাহিদার প্রাক্কলনের সঙ্গেও বাস্তবতার খুব একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বিপিডিবি মনে করছে, নানা কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। দাম বেড়ে গেলে তেলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা হয়। যে কারণে বর্তমান চিত্রকে প্রকৃত অবস্থা বিবেচনা করার সুযোগ নেই। চাহিদা অনুযায়ী পুরোপুরি সরবরাহ (পিক আওয়ারে) দিলে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। বর্তমানে চাহিদা ১২ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াটে ওঠা-নামা করছে। এই চিত্র হচ্ছে গ্রীষ্ম মৌসুমের, শীতকালে চাহিদা কখনো কখনো ১০ হাজারের নীচে নেমে আসছে।
বিপিডিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, সমন্বয়হীনতাসহ নানা কারণে লোডশেডিং মুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অঞ্চল ও সময় ভেদে নানা ধরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কোথাও সঞ্চালনে, কোনো অঞ্চলে বিতরণ ও উৎপাদনেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পুরোমাত্রায় সরবরাহ দেওয়া গেলে গ্রীষ্মকালে পিকের চাহিদা ১৯ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। সে বিবেচনায় রিজার্ভ মার্জিন যথাযথ রয়েছে। তবে শীতকালে পিকের চাহিদা নেমে আসে ১০ হাজারের নীচে। এই বিষয়টি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
চাহিদার প্রাক্কলন, উৎপাদন ক্ষমতা ও বাস্তবতায় বিশাল ব্যবধান থাকায় সংকটের শঙ্কা দেখছেন অনেকেই। নানা কারণেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে কি। চাহিদা না বাড়লে অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বোঝা কিভাবে টানবে বিদ্যুৎ খাত।
শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে, এখন আবাসিক সম্প্রসারণ করে ব্যবহার বাড়ানোর সুযোগ সীমিত। গ্রাহকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে, বাসা-বাড়িতে এসি, ফ্রিজ স্থাপন করবে, এতে যা চাহিদা বাড়বে। সেখানেও এনার্জি সাশ্রয়ী লাইট, ফ্যান, এসি ব্যবহার বাড়ছে।