কোম্পানির বোর্ড থেকে সচিবদের সরিয়ে দেয়া হবে: উপদেষ্টা

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি- বার্তা২৪.কম

ছবি- বার্তা২৪.কম

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কোম্পানিগুলো পুর্নগঠন করা হবে, সচিবরা যেগুলোর চেয়ারম্যান রয়েছে বদলে দেবো। খুব অপরিহার্য না হলে সচিবদের কোন কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান রাখা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান।

বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে পেট্রোসেন্টারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনস্থ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আমি যখন সচিব ছিলাম, দেখলাম অনেক বোর্ডে আমাকে চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। পরে তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা (ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ) জানালাম সচিব হিসাবে বোর্ডে থাকা সমিচিন হবে না, স্বার্থের সংঘাত হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব কোন কোম্পানির চেয়ারম্যান হবে না। এখন এসে দেখি আবার সচিবদের দখলে।

তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোকে পুর্নগঠন করা হবে, সেখানে ছাত্রদের যুক্ত করা হবে, আপনারা এটা দেখতে পাবেন। দুর্নীতি করলে আপনি যতো দক্ষ হোন, তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আগে হয়তো দুর্নীতি করতে বাধ্য হতেন, এখন তা করতে হবে না। কে কোন পরিষদ কি এগুলো দেখা হবে না, আপনি কে কোন দল করেন সেটি আমার বিষয় না। আমরা বিধি সংস্কার করবো, নীতি সংস্কার করবো, আমি যদি কাজ করতে না পারি তাহলে চলে যাবো।

বিজ্ঞাপন

উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতি হয়, মাথা থেকে, আমরা দুর্নীতি করবো না। আমরা উপদেষ্টা পরিষদ সম্পদের হিসাব দেবো, তারপর কর্মকর্তাদের হিসাব নেওয়া হবে। যেখানে হাত দিচ্ছি একটা করে অনিয়ম, সেখানে দুর্নীতি, পিয়ন শতকোটি টাকার মালিক। এটা কিন্তু আর চলবে না, হাজার হাজার জোড়া চোখ দেখবে, সাবধানে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি পরিসংখ্যান দেখবো না। খুলনার লোকটা যদি বলে গ্যাস পাচ্ছি তাহলে বুঝবো আমি কাজে উন্নতি হচ্ছে। খুলনায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছেন ৮৮০ মেগাওয়াট, গ্যাস নেই, এগুলোতো রাষ্ট্রের টাকা। ওই দিন মানিকগঞ্জ গেলাম লোকজন বলছে, গ্যাস পাননা তবুও বিল দিতে হচ্ছে। গ্যাসের সংযোগ দিয়েছি গ্যাস দেবেন না তা হবে না। গ্যাস-বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হলে গুলশানেও করতে হবে। অধিকার সবার জন্য সমান হতে হবে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কিনছি টাকা দিতে পারছি না। শিল্পমালিকরা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতে চান। আমি লুকাই আছি, আমি জানি ওনারা কি চায়। শিল্পে গ্যাস দিতে পারছি না, আবাসিকে গ্যাস দিতে পারছি না, সার কারখানায় গ্যাস দিতে পারছি না, বিদ্যুতে গ্যাস দিতে পারছি না। গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে গেলে আমদানি করতে হবে, আমদানি করার ডলার নেই। আমরা ঠিকমতো সার্ভিস দিতে পারছি না। আমি যদি দেখি গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে, তাহলে বুঝবো সার্ভিস উন্নত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সামিট গ্রুপের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর মধ্যে অপরেশনে আসবে। তাতে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়লে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর জ্বালানি তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হবে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তেলের দাম করতে পারে কি-না, কতদিন সময় লাগতে পারে সে সব বিষয়ে যাচাই করে দেখা হবে।

তিনি বলেন, বিইআরসি আইনটি চমৎকার আইন, সংশোধন করে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা সেই আইনটি বাতিল করেছি, এখন বিইআরসি গ্যাস বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করবে। বিদ্যুতের দাম প্রসঙ্গে বলেন, আমি নিজে বিদ্যুতের দাম নিয়ে অতিষ্ঠ। নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোন জবাবদিহিতা ছিল না।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের বিশেষ বিধান আইন আর ব্যবহার করা হবে না। আমরা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কেনাকাটা করবো। সমস্তকিছু উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় করা হবে। অর্থহীন প্রকল্প করা হবে না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, আমি কমিটি করে দিলাম, তারা আমার সঙ্গে দেখা করবে, আমি দেখা করিনি, আমি অনেকের সঙ্গে দেখা করি, কিন্তু তাদের সঙ্গে বসিনি, আমি কি বসতে পারি? তারা জরুরি সার্ভিসের আওতাভুক্ত। পরে তারা সম্মত হয়েছে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বানের জলে ভেসে আসা সরকার নয়, সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার, স্বাধীনতার সময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছিল, এবারও সরকার শক্ত ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে। আমাদের একমাত্র দায়বদ্ধ যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের কাছে, যারা আহত হয়েছেন আর যারা রাস্তায় নেমে এসেছেন তাদের কাছে। অনেকে নানান দাবি নিয়ে আসছেন, ১৬ বছরের বঞ্চনা ১৬ মাস সময় দেন। আপনাদের ন্যায্য দাবি আমরা পূরণ করবো, আমাদের সময় দিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম, বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ও বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

জ্বালানি সংকট দূর করতে অনেকেই কয়লা উত্তোলন ও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উপর জোর দেওয়ার পারমর্শ দেন। দিঘিপাড়া থেকে বছরে ৩ মিলিয়ন টন, এবং বড়পুকুরিয়া উত্তরাংশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বছরে ৬ মিলিয়ন হারে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব বলে জানানো হয়।