‘পূর্বের নিয়মে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে বিস্মিত ক্যাব’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

পূর্বের সরকারের নিয়মে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে আমরা বিস্মিত হয়েছি, সরকার বিভ্রান্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে কনজুমারস অ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪ সংক্রান্ত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। মূল প্রবন্ধে ক্যাবের পক্ষ থেকে ১১ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন ড. শামসুল আলম।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, যে সরকারের হাতে বিশেষ আইন স্থগিত হয়, আইন সংশোধন করে বিইআরসিকে সক্রিয় করেছে। সেই সরকার আগের সরকারের দেখানো পথে হাঁটবে ভাবতে অবাক লাগছে। এখানে দাম কমানো কিংবা বাড়ানোর বিষয় নয়। আমরা চাই আইন অনুযায়ী স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিইআরসির মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ হোক। আইনে সব ধরণের জ্বালানির দাম নির্ধারণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বিইআরসিকে। বিপিসিকে লাইসেন্সি হিসেবে বিইআরসির কাছে আসতে হবে। বিপিসি দাম নির্ধারণ করার এখতিয়ার রাখেন না।

বিপিসির বিভিন্ন দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দাতা সংস্থারা পর্যন্ত বিপিসির অডিট করতে বলেছে। তারা অনেক হিসাব আড়াল করে যাচ্ছে। জনগণ অলিগার্কদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি সরকারকে মিনিমাম ৩ বছর থাকা উচিত। বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের অলিগার্কদের চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ড. শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠন করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ৬ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলে দাম বাড়িয়ে নেওয়া হয়। আর প্রকৃত উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। এখানে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লুন্ঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের লুন্ঠনমূলক ব্যয় পরিহার করতে না পারলে ভোক্তা তার জ্বালানি অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। বিগত সরকার জ্বালানি খাতে যে অলিগার (লুণ্ঠন) করে গেছে, বর্তমানে যারা এখনো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছে, তারাও সেই অলিগার গ্রুপেরই লোক। তাই জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সেই অলিগলারদের দ্রুত সরিয়ে দিতে হবে।

ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ক্যাবের সুপারিশ তাত্ত্বিক জায়গা থেকে নয়, ক্যাব ধারাবাহিকভাবে ভোক্তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কখনও কখনও আদালতে গিয়েছি, এর সুফলও পেয়েছে জনগণ। আমরা জনগণের ক্ষমতায়নের দর্শনে বিশ্বাসী। বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত লুটপাটের বিশাল ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য। অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে অনেক কাজ করা হয়েছে। এনার্জি সিকিউরিটি তহবিল থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে লগ্নি করেছে। এটা ফাইন্যান্সিয়াল সিরিয়াস ক্রাইম। ভোক্তাদের টাকায় গঠিত তহবিল, এর উদ্দেশ্য ছিল জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে দাম সহনীয় রাখা যায়। সেই ফান্ড থেকে ঋণ দিয়ে তার ওপর চার্জ করা হচ্ছে। সেই চার্জও জনগণের পকেট থেকে যাচ্ছে, কয়বার দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছি বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম ৩ বছরের জন্য ক্যাপিং করতে হবে। দাম বাড়ানো যাবে না। জ্বালানি সংস্কারের জন্য কমিশন চেয়েছি, তাহলে সবাই সেখানে মতামত দিতে পারবে। নৈরাজ্য আইন না মানার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র ক্যাবকে প্রতিহত করার জন্য ৩৪(ক) ধারা যুক্ত করা হয়েছে। যাতে যখন খুশি নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানো যায়। আমরা এর বিরোধীতা করে এসেছি। দ্রুত জ্বালানি সরবরাহে বিশেষ বিধান আইন, লুন্ঠনের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে আমরা ওই আইনের বাতিল চাই।

দাম বাড়ানোর সময় অন্যান্য সুচক বিবেচনায় না নিয়ে সিঙ্গাপুর আমেরিকায় ভর্তুকি দেওয়া হয় না এই ব্যাখ্যাকে অশ্লীল বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য সূচক এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এমন বুজরুকি রয়েছে। এনার্জি ক্রিমিনালদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, তারা আমাদের চেয়ে অনেক সংঘবদ্ধ, তাদের সঙ্গে পেরে উঠবো না, তাই সবাই মিলে আওয়াজ তুলতে হবে।

তিনি বলেন, জ্বালানি সচিব যদি নিজেই কোম্পানির দায়িত্বে থাকে, তাহলে জ্বালানির অধিকার ভোক্তার নিশ্চিত হওয়া কঠিন। ওমেরা কোম্পানির (ওমেরা এলপি গ্যাস) চেয়ারম্যান নিজেই জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা, তাহলে কিভাবে ভোক্তার অধিকার রক্ষা হবে?

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রমুখ।