দরিদ্র দেশগুলোতে মৌলিক খাতে অর্থ সহায়তা কমছে

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দরিদ্র দেশগুলোতে মৌলিক খাতে অর্থ সহায়তা কমছে

দরিদ্র দেশগুলোতে মৌলিক খাতে অর্থ সহায়তা কমছে

দরিদ্র দেশগুলোতে মৌলিকখাতে ধনী দেশগুলোর অর্থসহায়তা কমে আসছে। আবার এ ধরনের সহায়তায় অনুদানের অনুপাত কমে বাড়ছে ঋণের হার। এর প্রভাবে দরিদ্র দেশগুলোতের দারিদ্র্য হ্রাসের গতি কমে আসার পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে বলে মনে করছে উন্নত ৩৮টি দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

‘দক্ষিণ এশিয়ায় বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অর্থায়ন: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শিরোনামে ওয়েবিনারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ– সিপিডি এবং ওইসিডি যৌথভাবে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহিমদা খাতুন ওয়েবিনারটিতে সঞ্চালকের বক্তব্যে বলেন, দরিদ্র দেশগুলার জন্য ধনী দেশগুলোর সহযোগিতা সন্তোষজনক নয়।

ধনী দেশগুলো তাদের মোট দেশজ উৎপাদন–জিডিপির শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে দরিদ্র দেশগুলোর উন্নয়নে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দরিদ্র দেশগুলোতে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বৃদ্ধির পেছনে প্রতিশ্রুত এ ব্যয় না করাও অন্যতম কারণ।

করোনা এবং জলবায়ুর অভিঘাত এ দুরবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলেছে বলেও তিনি মন্তব্য করে ড. ফাহমিদা বলেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অর্থব্যবস্থার মধ্যে এখনো বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। এখন প্রতিশ্রুতি পালন এবং গোটা ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন।

প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ওইসিডির অর্থনীতিবিদ, স্থাপত্য এবং বিশ্লেষণ ইউনিটের বিশ্লেষক আবদুলায়ে ফ্যাব্রেগাস। প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগীদের পাশাপাশি উদীয়মান এবং অপ্রচলিত উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে সংলাপ জোরদার করার সময় এসেছ। বিদ্যমান ওইসিডি নীতি কাঠামো এবং প্ল্যাটফর্ম, যেমন আঞ্চলিক নীতি সংলাপ, এই আলোচনার সুবিধার্থে সহায়ক হতে পারে।

আলোচনায় দক্ষিণ এশিয়া ওয়াচ অন ট্রেড, ইকোনমিক্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর দিক্ষ্যা সিং বলেন, ‘আগে, দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক উভয় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেপাল প্রাপ্ত ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ প্রায় সমান ছিল। তবে গত এক দশকে ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে অনুদান ছাড়িয়ে গেছে। এতে বিদেশি ঋণ এবং সুদসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে।’

শ্রীলঙ্কার পলিসি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের গবেষণার পরিচালক ড. নিশা অরুণাতিলাকে বলেন, কভিড এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে ওইসিডির সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। দরিদ্র দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে তথ্য সহযোগিতা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেন তিনি।

আরআইএস এর সহযোগী অধ্যাপক, সব্যসাচী সাহা বলেন, ওইসিডির প্রতিবেদনে গত বছরের প্রধান বাধাগুলি তুলে ধরা হয়েছে, যেমন ক্ষমতা সংক্রান্ত সমস্যা, রিপোর্টিং প্রক্রিয়া এবং ক্রেডিট রেটিং মানদণ্ড, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এখন সমাধানে মনোযোগ দিতে হবে।

গ্লোবাল ইকোনমিক গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভের সহকারী পরিচালক ডা. ঋষিকেশ রাম ভাণ্ডারি বলেন, বহুপাক্ষিক অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়, যেখানে মূলধনের খরচ বেশি এবং বাজারে প্রবেশাধিকার সীমিত। এই অঞ্চলের দেশগুলির বিশেষত পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিনিয়োগের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে বহুপাক্ষিক অর্থায়ন প্রয়োজন। এ ধরনের বিনিয়োগের সিংহভাগই উন্নত অর্থনীতি এবং বাছাই করা উদীয়মান বাজারে আটকে আছে।

সামাজিক নীতি ও উন্নয়ন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা মুহাম্মদ আসিফ ইকবাল বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিদেশি ঋণ পেতে একাধিক সংস্থার সম্পৃক্ততা প্রতিবেদন এবং মূল্যায়ন পরিচালনার জটিল প্রক্রিয়ার কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়।

সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। তবে এধরনের ঋণের ওপর নির্ভরতা অর্থনীতিতে বড় ধরনের দুর্বলতাও তৈরি করেছে।

ওয়েবিনারে দক্ষিণ এশিয়ার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকরা অংশ নেন।