এলএনজি টার্মিনালের চুক্তি বাতিল অনায্য ও বিধি বহির্ভূত: সামিট গ্রুপ
মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তরের দ্বিতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত অনায্য ও বিধিবহির্ভূত মনে করছে সামিট গ্রুপ। তাই বাতিল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে সামিট গ্রুপ। এতে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ-৩) স্থাপনের চুক্তি বাতিলের নোটিশ পেয়েছি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো প্রকল্পগুলো দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামিট গ্রুপের প্রমাণিত ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে পারি, সামিটের দ্বিতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) প্রকল্পের জন্য ৩০ মার্চ ২০২৪ পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি (টিইউএ) ও বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) সম্পাদন করেছে। একই দিনে পেট্রোবাংলার সঙ্গে সামিট প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৫ বছর মেয়াদি বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি সম্পাদন করে, যা ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার কথা।
কোন রকম দরপত্র ছাড়া বিশেষ আইনের আওতায় চলতি বছরের ৩০ মার্চে চুক্তি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশের তৃতীয় আর সামিট গ্রুপের মালিকানাধীন দ্বিতীয় টার্মিনাল নামে পরিচিত ছিল এটি। সামিট গ্রুপের প্রথম এফএসআরইউ মহেশখালীতে বিদ্যমান। সমালোচনা ও বিতর্ক উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সরকার চড়াদামে কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি করেছিল।
পেট্রোবাংলার সচিব রুচিরা ইসলাম সাক্ষরিত এক চিঠিতে সামিট গ্রুপের সঙ্গে বিশেষ আইনে সম্পাদিত চুক্তিটি বাতিল করার কথা নিশ্চিত করা হয়।
২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল খসড়া চুক্তি অনুমোদন করে। চুক্তি অনুযায়ী, টার্মিনাল চালুর পর থেকে ১৫ বছর মেয়াদে দৈনিক ৩ লাখ ডলার (চুক্তিতে উল্লিখিত বিনিময় হার অনুযায়ী ৩ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ) রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ পাওয়ার কথা ছিল সামিট গ্রুপের। ১৫ বছরে টার্মিনালটি থেকে রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ বাবদ সামিটের আয় দাঁড়াবে অন্তত ১৭ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকায় (ডলার ১১০ টাকা হারে)।
কয়েক বছর আগেও ছোট-খাটো ব্যবসায়ী থাকলেও এখন সিঙ্গাপুরের মতো জায়গাতেও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর তালিকায় জায়গা পেয়েছেন সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খান। ফোর্বস ২০২৪ সালের বিলিয়নিয়ারদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। তালিকায় ২ হাজার ৫৪৫ নম্বরে রয়েছেন আজিজ খান, যার মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার এবং আয়ের খাত হিসেবে রয়েছে জ্বালানি। ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, আজিজ খান বর্তমানে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। এর আগে তিনি সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ঘনিষ্ঠ আজিজ খানের কাছে রাষ্ট্রীয় আইন, নীতিমালা, মাস্টারপ্ল্যান কোন বিবেচ্য বিষয় ছিল না, হয়েছে সামিট গ্রুপ যা চেয়েছে সেটাই। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনাও বদলে গেছে সামিট গ্রুপের চাপে। দেশের স্বার্থ বিবেচনায় নয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তার স্থান চূড়ান্ত হয়েছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মুহাম্মদ আজিজ খান চাওয়ায়। এমনই তথ্য পাওয়া গেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাগজপত্রে। এসব ঘটনায় যেমন রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তেমনি অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের।