বার্তা২৪.কম-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. সাহাদাত সিদ্দিকী
‘বিজনেসকে বিজনেসের মতোই চলতে দেওয়া উচিত’
দেশ ও জনগণের স্বার্থে ব্যবসাকে রাজনীতির সঙ্গে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে যখন নিত্যপণ্য আমদানিতে রিপ্লেসমেন্টের (আমদানিকারক) কথা আসে তখন সার্বিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনগণ দূর্ভোগ পোহায়।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পূর্ণমাত্রায় বিকল্প কখনও হয় না। হয়ত তা ধীরে ধীরে পূরণ হয়। কিন্তু সময়ের এই চড়া মূল্য জনগণকেই আসলে দিতে হবে।’
মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। আলাপচারিতায় রিজার্ভ, রেমিটেন্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আর্থিক খাতের সংকট উত্তরণে সরকার গৃহীত কর্মসূচিসহ আলাপ হয় সমসাময়িক অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে। ড. সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।
বার্তা২৪.কম: গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই মাস কেটে গেছে। বর্তমানে দেশ চালাচ্ছে অন্তবর্তী সরকার। এই মুহুর্তে দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানামূখি উদ্বেগ রয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: সকলেই জানি বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই চ্যালেঞ্জের মূলতঃ যে দুটি কারণ হাইলাইট করি তা হচ্ছে-ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ আরেকটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। বর্তমান সরকার বলুন আর পূর্ববর্তী সরকারই বলুন, সবারই চ্যালেঞ্জ ছিল এ দুইটি বিষয়। এই দুই বিষয় আবার একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ডলারের ক্রাইসিসের কারণে মূল্যস্ফীতি…পৃথিবীর যত ইকনমিক ক্রাইসিস তৈরি হয় একে ঘিরেই, আমরা দেখেছি এর ফলে মূল্যস্ফীতি অনেক সময় ২০০-৫০০ শতাংশ পর্যন্ত চলে যায়। জিম্বাবুয়ে-এমনকি পূর্ব-এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার কথাও যদি বলি; মূলত এসব দেশে ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের কারণে ইনফ্লেশন মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছিল। এখন বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং টাকার মান ধরে রাখতে না পারা। এখন এর কনসিকুয়েন্স নিয়ে আমরা যারা কথা বলি স্বাভাবিক ভাবে সেটা আমাদের কাছে হয়ত কোন বিষয় না, কিন্তু সাধারণ মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে কত সেক্রিফাইস করে বেঁচে থাকে তা অনেক ক্ষেত্রেই বিবেচিত হচ্ছে না নীতিনির্ধারণে। প্রান্তিক নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তরা দারিদ্রের বড় কষাঘাতে আছেস। এই কষাঘাত থেকে বেরুনোর উপায় হচ্ছে…বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির হার যা তার থেকে মূল্যস্ফীতি যদি কম হয় তাহলে সেই মানুষগুলোর জীবনমান একটু বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিসংখ্যান যদি আপনি দেখেন তাহলে ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত মজুরি বৃদ্ধি পায়। তারা যে আয় দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারে সেটাই প্রকৃত আয়। কিন্তু আমি দেখছি, গত দুই বছর এই প্রকৃত আয় ৫ থেকে ৬ শতাংশ কমে যাচ্ছে। তাদের জীবন উন্নত তো হচ্ছেই না আরও অবনতি হচ্ছে। এখন এই অবনতির কনসিকুয়েন্স আবার অনেক। যে বাচ্চাটি স্কুলে পড়ত সে ঝরে পড়ছে, তাকে খাবারের জন্য কাজে যোগ দিতে হচ্ছে।
বার্তা২৪.কম: জাতিসংঘ ঘোষিত যেসব বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা আছে, তা অর্জনে সামনের দিনে বাংলাদেশের কতটা এগুতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: আমরা যে গ্লোবাল ভিশনের সঙ্গে এডজাস্ট করতে চাই-যেমন এসডিজির প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে হতদরিদ্রদের সীমা ৩ শতাংশে আনতে হবে। পরিসংখ্যানের তথ্য নিয়ে এখানে আস্থাহীনতা রয়েছে। সত্যিকারের হিসেবের জায়গায় যেভাবে আমরা উন্নতি করছিলাম তা নিশ্চিতভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা বিগত সরকারের চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্তির জন্য সম্প্রতি জনগণের মাঝে, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে এক ধরণের ক্ষোভ দেখছি। আন্দোলনে এই দরিদ্র মানুষের নিহতের সংখ্যাও কম নয়। তাদেরও এক ধরণের ত্যাগ ছিল, বলতে দ্বিধা নেই। বলা যায়, ইনফ্লেশনের চপেটাঘাত ছিল। আমাদের একটা প্রত্যাশা ছিল অন্তবর্তী সরকারের কাছে, এই চ্যালেঞ্জ থেকে আমরা মুক্ত হব। প্রথম কর্তব্য ছিল কারেন্সিতে টাকার যে ডিভ্যালুয়েশনটা হচ্ছে সেটা রক্ষা করা। আমরা সেটা রক্ষার উপায় দেখতে পাই, আবার পাইও না। এটা নিয়ে শঙ্কা আছে। কারণ কিছুদিন পূর্বেও দেখবেন যে নিউজে এসেছে, বিশ্বে যে দশটি দেশ দেউলিয়াত্বের মধ্যে পড়তে পারে তার মধ্যে বাংলাদেশের নাম আছে। তার মানে সার্বিক ভাবে গ্লোবাল লেভেলে সেই ট্রাস্টটা নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে সরকারের সঙ্গে যেসব দেশ বিভিন্ন সহযোগিতা চুক্তি করেছে সেটা হয়ত একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে-এই ফরেন কারেন্সি চাপ কমানোর জন্য জোর দেওয়া হচ্ছিল মূলতঃ কিভাবে রেমিটেন্সটা বাড়ানো যায়। বিগত সরকারের আমলের জুন মাসের পরিসংখ্যান ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ছিল, সেপ্টেম্বরে তা দাঁড়ায় ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে।
বার্তা২৪.কম: বাজার ব্যবস্থা পুরোই নিয়ন্ত্রণহীন-বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকৃত কারণ কী?
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: যখন আমাদের মুদ্রার ৩৫-৩৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটে তখন আমদানি ব্যয় স্বভাবতই বেড়ে যায়। গত দুই বছরের পর্যালোচনাও যদি করেন তাতে তেলসহ অন্যসব কিছুর দাম বেড়েছে। অন্যদিকে কারেন্সির ডিভ্যালুয়েশন হয়েছে ৩৬-৪০ শতাংশ। এর কারণে মূল্যস্ফীতিতে এর স্পষ্ট প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টা হচ্ছে প্রায় সবটাই সাপ্লাই সাইডনির্ভর…আমরা কন্ট্রাকশনারি মনিটারি পলিসি (সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি) ৩ বার নেওয়ার পরও কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২-এ, মানে ফুড ইনফ্লেশন ডাবল ডিজিটেই আছে। ফুড ইনফ্লেশন ডাবল ডিজিটে থাকা মানেই তো গরীব মানুষদের মধ্যে নাভিশ্বাস। ফুড ইনফ্লেশনের প্রভাব প্রায় সব আমদানি পণ্যেই। ইমপোর্ট করার ক্ষেত্রে যে জায়গায় প্রবলেমটা হয় তা বাজার ব্যবস্থাপনায়।
বার্তা২৪.কম: বর্তমান অন্তবর্তী সরকারে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কোনগুলি?
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ (যা বিগত সরকারেরও ছিল) তা হচ্ছে-ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ ও ইনফ্লেশন কন্ট্রোল। এটা করা কঠিন, কারণ আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে একদিকে যখন রেমিটেন্স বাড়ার প্রবাহ; যেটা সবচেয়ে বেশি ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ আয় করে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলার আউট অব ৫৭ বিলিয়ন। টোটাল রিজার্ভ যদি ৫৭ বিলিয়ন ডলার হয় এর ৪৬-৪৭ বিলিয়নই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। আরওএমজি সেক্টরের এক্সপোর্টের যে অর্ডার; তার ট্র্যাক যদি আমরা ধরে না রাখতে পারি তাহলে রেমিটেন্স যতটুকু বাড়বে তা যদি এক্সপোর্ট থেকে তার চেয়ে বেশি কমে যায় তাহলে তা সার্বিক সংকট মোকাবেলা করা কঠিন। ঋণ করেছেন ঋণ দেবেন, বেশি মাত্রায় করলে বেশি মাত্রায় পরিশোধ করবেন সেটা এক ধরণের চ্যালেঞ্জ কিন্তু আপনি এফডিআই (প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ) এর মাধ্যমে…তাদের যদি এ সরকারের প্রতি আস্থা থাকে সেই আস্থা কিন্তু রিফ্লেক্ট হতে হবে..ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল পারসপেক্টিভ। ‘বিগত সরকারের সময় বড় বিনিয়োগকারীরা আসে নাই, এখন আসছে’-এটা তখন বলা যাবে।
বার্তা২৪.কম: আপনি কি সহসা তেমন কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন?
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: আমি সেই রকম কোন রিফ্লেকশন দেখতে পাচ্ছি না এখন পর্যন্ত। পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি যতক্ষণ না আসে ততোক্ষণ বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা ফেরানো খুবই কঠিন। ইন দ্যট সেন্স..আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারী যে আসবে তা দেখতে পাচ্ছি না। রেমিটেন্স কোন মাত্রায় বাড়ে তা দেখতে আরও দুই-তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। সেটা যদি ২.৫ এ গিয়েও স্ট্যাগন্যান্ট হয়ে যায় আবার যদি এক্সপোর্ট মার্কেটটা …। আমি যেটা মনে করি, এই সরকারকে মানুষ চিনে-ভালো জানে। জানাটা বিষয় না; কিন্তু দেখতে হবে অর্থনৈতিক সম্পর্কটা কতটুকু টেকসই ও গতিশীল হল? ড. ইউনুস সরকারের একসেস আছে, কিন্তু আমরা অর্থনৈতিক সেই বেনিফিটটা নিতে পারছি কিনা তা দেখতে হবে। সম্পর্কটা তখনই রিফ্লেক্ট হবে যখন তা আমাদের অর্থনীতিতে রিফ্লেক্ট করবে। যদি প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই এসে আমার ফরেন কারেন্সি বা রিজার্ভকে বাড়িয়ে দেয় তাহলে তখন আমি প্রত্যাশা করব আমরা স্ট্যাবিলিটির দিকে যাচ্ছি। আমার টাকা এপ্রিসিয়েশন করবে। যদি আমরা ইমপোর্ট কস্ট কমে যাবে। কিন্তু আনটিল অর আনলেস যদি আমরা ইমপোর্ট কস্ট কমাতে না পারি, যদি একই রকম থাকে বা সামনে আরও বেড়ে যায় (৫০ শতাংশের অধিক) তা শঙ্কার কারণ হতে পারে। তবে এখনও বলবো ব্যালান্স শীটের যে কম্পোন্যান্ট অর্থাৎ কারেন্টে একাউন্ট বা ট্রেড একাউন্ট বলুন-সার্বিকভাবে ব্যালান্স অব পেমেন্টের কথা যদি বলি তবে সব কিছুর দিক থেকে-এখন পর্যন্ত কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। আর কন্ট্রাকশনারি মনিটারি পলিসি নেওয়ার ফলে ফিউচারে যে গ্রোথ সেক্রিফাইস করতে হবে সেটা কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে আবারও উস্কে দেবে। আপনি কন্ট্রাকশন করে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছেন, এতে বিনিয়োগ কমে গেলে ইকনমিতে যে কন্ট্রাকশন হবে গ্রেুাথ সেক্রিফাইসের কারণে আমি দেখতে পাচ্ছি, তখন মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ হবে প্রকট। এখন ভোক্তার থেকে সংকুচিত করে কিছুটা মূল্যস্ফীতি কমাতে পারেন। প্রবৃদ্ধি যদি বেশি ক্ষাতিগ্রস্ত হয় তাহলে কিন্তু সেই কমানোটা আদতে কোন কাজে দিবে না। যদি আবার একই সাথে কারেন্সির ডিভ্যালুয়েশনটাকে ঠিক না রাখতে পারেন।
বার্তা২৪.কম: দেশের অভ্যন্তরীন শ্রমবাজারের সিংহভাগই বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা। বর্তমানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দেশে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি একরকম রোষানলে আছে। বহুসংখ্যক শ্রমিক ও কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এই পরিবর্তন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে কি প্রভাব ফেলবে…
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: সেটাই আশঙ্কার কথা। আমরা যদি ৫ আগস্ট এর পরবর্তী ঘটনাগুলো দেখি, বিশেষ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্র করে যেসব ঘটনা ঘটছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেকগুলো অজানা শঙ্কায় বন্ধ করা হয়েছে। এই সব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে এটা অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে বড় অসন্তোষ তৈরি করেছে। ইন্ড্রাস্ট্রি যখন বন্ধ থাকে তখন কর্মীদের বেতন কন্টিনিউ করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সবদিক থেকে যদি বিবেচনা করেন, এটা যে আমাদের বিনিয়োগ কমাচ্ছে শুধু তাই না; বিদ্যমান কারখানাগুলোকে অপারেশনালাইজ না রাখতে পারাটাও উৎপাদনকে সংকুচিত করবে। গ্রোথ হ্যাম্পার হবে দুই দিক থেকে-এক. যখন ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে যাচ্ছে তখন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরবর্তীতে যেসব ইন্ড্রাস্ট্রি বন্ধ রয়েছে, তারাও অনেকে অজানা শঙ্কায় রয়েছে। কেউ কেউ চালু রাখলেও সংকোচনের দিকে রয়েছে। এর কারণে গ্রোথের যে ফোরকাস্ট করা হচ্ছে, সেখানে ৭.২ শতাংশের কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ একটি দেশের প্রবৃদ্ধির ২ শতাংশ কমছে। কনট্রাকশন যদি হয় গ্রোথের জন্য ক্ষতিকর হয় তাহলে তা মারাত্মক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিবে। মূল্যস্ফীতি কন্ট্রোলের ম্যাকানিজমকে অকার্যকর করার জন্য এটি যথেষ্ট। বাকী ফ্যাক্টরগুলো তো আছেই। চাহিদার সংকোচনের চেয়ে সরবরাহে বেশি সংকোচন হবে। তখন মূল্যস্ফীতি কন্ট্রোল করা সম্ভব হবে না। সরকারের উচিত যত ইন্ড্রাস্ট্রি আছে সবগুলো যেন পূরোমাত্রায় উৎপাদনে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করা এবং প্রবৃদ্ধিকে বাড়ানো। তার মানে হচ্ছে- ইনভেস্টমেন্ট যে পরিমানে আছে তা যেন কোন অবস্থাতেই না কমে। যদিও বিদ্যমান সংকোচনমূলক নীতিতে তা অটুট রাখা বড় চ্যালেঞ্জ।
বার্তা২৪.কম: বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলির উপর আমদানি পণ্যের বাজারের নির্ভরতা আছে। যাদের নিজস্ব অবকাঠামো ও আমদানির বৈদেশিক চ্যানেল রয়েছে। তাদেরকে কোণঠাসা করে নতুন ভাবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প কি গড়ে তোলা খুব সহজ হবে?
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: দেখুন, এটা নির্ভর করে বিকল্প কে হতে পারে? যারা বহু বছর ধরে এই কার্যক্রমে জড়িত, তাদের একটি সেটআপ রয়েছে। তাদের জায়গা হুট করে তৈরি করাটা কঠিন। বিজনেসকে আসলে বিজনেসের মতোই চলতে দেওয়া উচিত। বিজনেসকে যখন আমরা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করি, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে যখন এই রিপ্লেসমেন্টের কথা আসে তখন সার্বিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনগণ দূর্ভোগ পোহায়। আমি মনে করি, পূর্ণমাত্রায় বিকল্প কখনও হয় না। হয়ত তা ধীরে ধীরে পূরণ হয়। কিন্তু সময়ের এই চড়া মূল্য জনগণকেই আসলে দিতে হবে।
বার্তা২৪.কম: বর্তমান অন্তবর্তী সরকার ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাসে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা নিয়ে তাকে কিভাবে দেখছেন আপনি?
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: এই সরকারের কার্যক্রমে মার্কেটে যে খুব একটা রিফ্লেকশন হচ্ছে তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। এই সরকারের কাছে যে প্রত্যাশাটা করি, তা স্পষ্ট যে আমি কি চাই। আমি চাই খেলাপি ঋণ আগের সরকারের সময়ে যা ছিল তা একটা বিরল স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে চলে আসুক। কিন্তু সেটা যখন আবারও বাড়তে থাকে তখন মনে হয় কোন অ্যাকশন নেই, আগেরটাই চলমান। সরকারের নীতি যদি দেশের বিজনেস ও বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, খেলাপী ১ লাখ কোটি টাকা থেকে মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকার মতো উঠে আসে তাহলে প্রকৃতঅর্থে অর্থবহ কিছু হবে না। সরকারের পদক্ষেপ এখনও ভিজিবল নয়। তারা বলছে সংস্কার করবে। এখন কি সংস্কার করবে, অ্যাক্টিভিটিজগুলো কি নিয়ে, আমাদের ফিনিন্সিয়াল সেক্টরের যে ইন্ডিকেটর আছে সেখানে রিফ্লেকশনটা আসলে বলে দেবে। এখন বাজারে যে সমস্যা চলছে, ১১টি ব্যাংকের কথা অলরেডি বলা হয়েছে। এই বলে দেওয়াটাও ভালো কিছু নয়। এতে ব্যাংকগুলো উত্তোলন ও তারল্য সংকটের যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে এই ১১টি ব্যাংকের কারণে অন্য ব্যাংকগুলোরও আস্থাহীনতা তৈরি হয়ে যায়। এটা অনেকটা বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে চলে যেতে পারে। এর থেকে উত্তরণের জন্যও সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা হচ্ছে তারুল্য সংকট মেটাতে সেন্ট্রাল ব্যাংক একটি রেসপন্সিবিলিটি নিয়ে আপদকালীন ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এই ব্যবস্থাটুকু প্রয়োজনের তুলনায় কতটুকু সেটা যেমন ভাবনার বিষয়…যেখানে প্রয়োজন ১৭ হাজার কোটি টাকা, দিলেন ১ হাজার কোটি টাকা! বাকী ব্যাংকগুলো কি ইন্টার-ব্যাংক লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্ট করতে পারবে? ৫টি ব্যাংকে সহযোগিতা করা হয়েছে, বাকী ৬টির জন্য হয়ত করা হবে। এত লিক্যুইডিটি মানি এত পরিমাণ ইন্টারেস্ট রেটে রুগ্ন ব্যাংকগুলো নিতে বা পরিশোধ করতে পারবে কিনা আদৌ? যদি না পারে সেন্ট্রাল ব্যাংক যেহেতু দায়বদ্ধতা নিয়েছে তাই হয়ত সেন্ট্রাল ব্যাংককে প্রিন্টমানি হোক অথবা এক্সপানশনারি মনিটারি পলিসি হোক-তার মাধ্যমে ব্যবস্থা করতে হবে। অতএব, এক্সপানশনে যখন যাবেন তখন কনট্রাকশনের নীতি ধরে রাখা কঠিন হবে। এজন্য অর্থনীতির এই সংকট কিভাবে ম্যানেজ করবে তা বলা খুব কঠিন। হয়ত আরও দু’তিন মাস গেলে বোঝা যাবে।
বার্তা২৪.কম: তার মানে আপনার বিশ্লেষণ থেকে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট লাঘবে সাধারণ মানুষের জন্য আপাতঃ কোন সুখবর নেই?
ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী: আপাতত কোন সুখবর দেখছি না।