৮ প্রতিষ্ঠানে তিতাসের আটকা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

৮ প্রতিষ্ঠানে তিতাসের আটকা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

৮ প্রতিষ্ঠানে তিতাসের আটকা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

সরকারের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিল দিচ্ছে না মেঘনা গ্রুপসহ সরকারি-বেসরকারি আট প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বেসরকারি মেঘনা গ্রুপ একাই দিচ্ছে না গ্যাস বিলের ৭৬৬ কোটি টাকা। নিয়ম- নীতির তোয়াক্কা করে শুধু গ্যাস বিল বাবদই এ বিপুল অঙ্কের টাকা আটকে রেখেছে কোম্পানিটি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে ইউটিলিটি বিল প্রদানে নানা সময় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে মেঘনা গ্রুপ। এ দফায় বকেয়া আদায়ে সাড়া না দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিতাস। তিতাসের পাশাপাশি পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ এই বকেয়া আদায়ে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তার পরও দ্রুত এই বকেয়া অর্থ আদায়ের বিষয়ে কোনো সমাধান দেখছে না সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

তিতাসের বকেয়া বিল সংক্রান্ত একটি তালিকা দেখা যায়, অপরিশোধিত অর্থের মধ্যে মেঘনা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এভারেস্ট পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি লিমিটেডের কাছে সাত বছর ধরে ৬৮৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। একই সঙ্গে মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড গত চার বছরে ৭৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার গ্যাস বিল পরিশোধ করেনি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারের (আইপিপি) কাছে বকেয়া ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চারটি সার কারখানা যমুনা, ঘোড়াশাল পলাশ, ইউরিয়া ও পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরিতে বকেয়া জমে আছে ৭৭০ কোটি টাকা । ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কম্পানির কাছে বকেয়া প্রায় ৪৮১ কোটি টাকা ।

তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা বকেয়া গ্যাস বিল আদায়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বারবার অনুরোধের পরও যেসব প্রতিষ্ঠান বকেয়া বিল পরিশোধ করছে না তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এমনকি সংযোগ বিচ্ছিন্নও করা হতে পারে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহনেওয়াজ পারভেজ জানান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপুল পরিমাণ গ্যাস বিল বকেয়া আটকে থাকায় আমরা ঠিকমতো পেট্রোবাংলাকে বিল পরিশোধ করতে পারছি না। ফলে পেট্রোবাংলা স্থানীয় ও আমদানি বিল ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না । এমনকি নির্দিষ্ট সময়ে বিল পরিশোধ করতে না পারায় জরিমানাও গুনতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হবে তিতাস ।

বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধের বিষয়ে জানতে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামালের মোবাইল ফোনে সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।

মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) তসলিম শাহরিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হলেও ঠিকমতো বিল পাওয়া যায় না । এ দুই খাতে বিপুল পরিমাণ গ্যাস বিল জমে থাকায় পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া গ্যাস বিল আদায়ে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযানে দেশের শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক শ্রেণিতে গ্যাস বিল বকেয়ার পরিমাণ কমে এসেছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া পড়েছে মূলত সরকারি-বেসরকারি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানাগুলোতে। আইপিপিগুলো তিতাস থেকে গ্যাস নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিপিডিবির কাছে সরবরাহ করে। বিপিডিবির কাছে আইপিপিগুলোর বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া পড়ায় আইপিপিগুলোও এখন গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে পারছে না ।

বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন জানান, গ্যাস বিলের বকেয়ার পরিমাণ তো অনেক, সেটি তো একসঙ্গে দেওয়া যাবে না। তাই আমরা প্রতি মাসে কিছু কিছু করে বকেয়া বিল পরিশোধ করছি। আশা করছি সামনে বকেয়ার পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১২ হাজার ৩৮৪ মেগাওয়াট, যা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৫ শতাংশ। বর্তমানে মোট গ্যাস সরবরাহের বড় একটি অংশ যাচ্ছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে।

পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, গত সোমবার দেশে মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৮৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা হয় ৯৩৮.৫ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশের সার কারখানাগুলোতে সরবরাহ করা হয় ২০১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।