নতুন শিল্পকারখানা ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব আমলে নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের বৈঠকে মূল্যায়ন কমিটি গঠন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মোঃ মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) কমিশনের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি শিল্পকারখানার বয়লার ও শিল্পকারখানার জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। প্রস্তাবে বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হয়েছে। বিইআরসি মূল্যায়ন কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর গণশুনানি গ্রহণের পর আদেশ দেবে।
দাম প্রসঙ্গে দুই ধরণের দর প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সংযোগ অনুমোদিত (প্রতিশ্রুত) কিন্তু চালু হয় নি এমন গ্রাহকদের এক রকম দর, আর নতুন শিল্পে ভিন্ন দর নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। প্রতিশ্রুত গ্রাহকের অর্ধেক গ্যাসের দর হবে বিদ্যমান দরের সমান, আর অর্ধেকের জন্য আমদানি মূল্য। বর্তমানে শিল্পে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দর নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা, আর ক্যাপটিভে ৩১.৭৫ টাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট গ্যাস কেনা হয়। এরপর বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার। দেশীয় এসব উৎস থেকে দৈনিক কমবেশি ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। আর আমদানি থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০০ মিলিয়নের মতো সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। এতেই দাম আকাশচুম্বি হয়ে গেছে। কয়েক দশকধরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলার কারণেই আজকের এই সংকট বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
পেট্রোবাংলা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলেছে, গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে দেশীয় গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৭৫ শতাংশের মতো, অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে করা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে এবং এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ২০৩০-৩১ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৫ শতাংশে।
পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫.৭২ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। দেশীয় উৎপাদন সময়ের সঙ্গে হ্রাস পাওয়া এবং গ্যাসের চাহিদা পুরণে উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানি সময়ের সঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বর (২০২৪) পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় ৩২টি এবং স্পর্ট মার্কেট থেকে ১২ কার্গোসহ মোট ৪৪ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে।
চলতি জানুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় আরও ২৮টি এবং স্পর্ট মার্কেট থেকে ২৯টিসহ চলতি অর্থবছরে মোট ১০১ কার্গো আমদানি করা হলে প্রাক্কলিত ঘাটতি হবে ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০২৫ সালে যদি ১১৫ কার্গো আমদানি বিবেচনা করা হয় তাহলে প্রায় ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ঘাটতি হবে। সে কারণে দাম পুনঃনির্ধারণ করা দরকার।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রেসিডেন্ট হাতেম আলী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, এই প্রস্তাব পাস হলে শিল্পায়ন থমকে যাবে। একটি অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। নতুন করে বিনিয়োগ আসবে না। কেউ ৩০ টাকা দিয়ে গ্যাস কিনবে আবার কেউ ৭৫ টাকা দিবে, যারা বেশিদামে কিনবে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। কারণ বাজারতো একটাই।