এত সুদে ব্যবসা সম্ভব নয়: অর্থমন্ত্রী



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল / ছবি: বার্তা২৪

প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল / ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, `ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুব ভালো আছে এটা বলব না। তবে খুব খারাপও নেই। এ খাতের উন্নয়নে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হচ্ছে। অনেকেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। মামলা করতে পারছে না। এ সব বিষয়ে উদ্যোগ নিবে আসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। ব্যাংক ঋণে সুদেও হার বেশি। এত বেশি সুদ দিয়ে কখনো ব্যবসা করা যাবে না। নতুন করে সুদ আরোপ করা হচ্ছে। আগামীতে সুদের হার অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা হবে। যাতে ঋণ খেলাপি না হয়। এছাড়া বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য প্রণোদনা থাকবে।’

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসির সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ ঋণ গ্রহণ করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। এর ফলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসা করলে লাভ বা লোকসান হতে পারে। যারা লোকসান দেয় তাদের জন্য কিছু করার ব্যবস্থা থাকে না। ঋণ খেলাপি হওয়ার পরও সব ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠালে তো হবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন। অসততা আমাকে স্পর্শ করেনি, করবেও না। আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। সাধারণ মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমি অনুরোধ করব, এমন কিছু করবেন না যাতে আমাদের দেশের ক্ষতি হয়, দেশের মানুষের চলার পথে যাতে প্রতিবন্ধকতা না হয়। এ জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।’

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আসবে সেগুলো শতভাগ স্ক্যানিং হয়ে আসবে। আবার যেসব পণ্য রফতানি হবে সেগুলোও শতভাগ স্ক্যানিং করা হবে। তাছাড়া র‌্যান্ডম শ্যাম্পলিং এর মাধ্যমে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আয়কর দেয় তারা শুধু কর দেবে, আর যারা কর দেয় না তারা দেয়ই না। দেশের ৪ কোটি মানুষ কর দেয়ার যোগ্য হলেও কর দেয় মাত্র ২৯ লাখ। এ জন্য ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাস্ক নির্ধারণ করা হবে।’

প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। এর ফলে আয়ও কমে যাচ্ছে। অনলাইনেও আয় তেমন নেই। সংবাদপত্র প্রকাশে বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়ছে। ভ্যাট আইনে সংবাদ পত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে। এর পরও এ খাতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ কর প্রত্যাহার করতে হবে।’

সাংবাদিকদের বাড়িভাড়া হিসেবে পরিশোধিত অর্থেও শতভাগ করমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূল বেতনের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ায় করমুক্ত রয়েছে। বর্তমান বেতন কাঠামোতে সাংবাদিকদের বাড়িভাড়া দেওয়া হয় ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ায় কর প্রত্যাহারের দাবি জানচ্ছি।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বদিউর আলম মজুমদার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার জোরদারের বিষয়ে কারও কোনো মনোযোগ নাই। এখন স্থানীয় সরকার ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা, এটা হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে দুর্নীতি রোধ করে যারা দুর্নীতি করছে তাদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এ খাতে সুশাসন ফিরে আসবে না।’

মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে যাচ্ছে। এটা যে কোনো উপায়ে রোধ করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে বাড়ি ঘর কিনছে। এ পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে না পারলে অর্থনীতি ভাল করা যাবে না।’

আরও পড়ুন: বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদে পরিবর্তন আসবে না

   

‘নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও প্রফেশনালিজমের বিষয়টি দেখা উচিত’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত ন্যূনতম অভিজ্ঞতা এবং প্রফেশনালিজমের বিষয়টি দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজধানীর লেকশোর হোটেলের লা ভিটা হলে সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে?’ শীর্ষক সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, যোগ্যতার বিষয়টি না দেখে অতীতে অনেক তরুণ ও অপরিপক্ক লোকজনকে ব্যাংকের পরিচালক পদে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যংকের সঙ্গে একীভূত করার আগে আর্থিক খাতে লুটপাটে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন অনুষ্ঠানের অপর বিশেষ অতিথি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় ধরনের ব্যর্থ্যতা আছে দাবি করে তিনি বলেন, “হঠাৎ একদিন সকালে আপনি কেন বলছেন যে ১০ টি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে? রেগুলেটরি মেজার হিসেবে এগুলোকে ভালো করার উদ্যোগ কেন নিচ্ছেন না? নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে একেবারেই ব্যর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক।”

দেশে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপীদের মতো ইচ্ছাকৃত নন গভর্নেন্স প্রেক্টিস হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন সিনিয়ির সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

তিনি এ সময় বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক তৈরি করা হয় না। বরং রাজনৈতিকভাবে পছন্দের ব্যক্তিদের মাঝে ব্যাংক বিতরণ করা হয়। ২০১৯ সালে এমন সমালোচনার মধ্যেই তিনটি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তখনকার অর্থমন্ত্রী কোনো সমালোচনাই আমলে নেননি।

তিনি বলেন, ফারমার্স ব্যাংক নাই হয়ে গেল। এটা ঠিক করতে যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনিও লুটপাট করেছেন। আর্থিক খাতে লুটপাটে সংশ্লিষ্ট পিকে হালদার বাংলাদেশে ধরা পড়ে না, দেশের বাইরে ধরা পড়ে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিযোগ, প্রবৃদ্ধি, বণ্টন থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের বড় গুরুত্ব রয়েছে। এখানে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক উদ্যোগ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, খুব সতর্কতার সাথে এ সব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, অনেক সময় লাভের ব্যক্তিকরণ হয় আর লোকসানের রাষ্ট্রীয়করণ হয়ে যায়।

নতুন লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সাবধানী হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান। ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে খুব ভালো সুফল পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

;

জ্বালানি খাতে অবদানের জন্য সম্মাননা পেলো এফইআরবি



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
সম্মাননা গ্রহণ করছেন বার্তা২৪.কম’র সেরাজুল ইসলাম

সম্মাননা গ্রহণ করছেন বার্তা২৪.কম’র সেরাজুল ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের বিশেষ অবদানের জন্য ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) কে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে ২৪তম ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি কনফারেন্স অ্যান্ড গ্রিন এক্সপো-২০২৪ কর্তৃপক্ষ। এফইআরবির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান মো. শামীম জাহাঙ্গীর।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রেস্ট হস্তান্তর করা হয়। সিনেট ভবনে বসেছিল ২৪তম ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি কনফারেন্স অ্যান্ড গ্রিন এক্সপো-২০২৪ এর দৃই দিনের আসর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি এবং গ্রিনটেক ফাউন্ডেশন যৌথভাবে কনফারেন্স আয়োজন করে। এতে সহযোগী হিসেবে ছিলেন, ইউএসএআইডি, স্রেডা, ইডকল ও বিএসআরইএ।


আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে কাজ করে আসছে এফইআরবি। সংগঠনটির সদস্যরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে বিশাল অবদান রেখে চলেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আজকের উন্নয়নে সংগঠনটির অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। সে কারণে এফইআরবিকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আগামী বছর থেকে এফইআরবির সদস্যদের জন্য ফেলোশিপ প্রদানের বিষয়ে আমরা আগ্রহী।

এফইআরবি’র পাশাপাশি এফইআরবির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. শামীম জাহাঙ্গীর, ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান কাকন (দৈনিক আমাদের সময়), নির্বাহী পরিচালক সেরাজুল ইসলাম সিরাজ (বার্তা২৪.কম), পরিচালক (উন্নয়ন ও অর্থ) হাসনাইন ইমতিয়াজ (দৈনিক সমকাল), পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) নাজমুল হক লিখন (দৈনিক দেশ রূপান্তর) পরিচালক (ডাটা ব্যাংক) মো. ইয়ামিন (এফএপি), পরিচালক (বিনোদন ও কল্যাণ) মুজিব মাসুদ (দৈনিক যুগান্তর), নির্বাহী সদস্য আশরাফুল ইসলাম (দৈনিক নয়াদিগন্ত), হাসান আজাদ (দৈনিক কালবেলা) শাহেদ সিদ্দিকী (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি), ফয়েজ আহমেদ খান তুষারকে (দৈনিক সংবাদ) সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া এফইআরবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এনার্জি এন্ড পাওয়ার এর এডিটর মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

২৪তম ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি কনফারেন্স অ্যান্ড গ্রিন এক্সপো-২০২৪ উপলক্ষ্যে প্রদর্শনীর পাশাপাশি ৪টি উচ্চ পর্যায়ে সেমিনার আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, আমলা, শিক্ষাবিদ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সহযোগী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত, সুইডিস রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি অংশ নেন।

;

'শিল্পের ভিত বাড়াতে উদ্যোক্তাদের কাছে মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে হবে'



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংকোচনমূলক মূদ্রানীতি, সুদের হার বৃদ্ধি আর ক্রলিং পেগের মত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনীতির বড় কল্যাণ হবে না।

তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রা সরবরাহ কমানোর পরিবর্তে উদ্যোক্তাদের কাছে ব্যাপক পুঁজি সরবরাহের মাধ্যমে দেশের শিল্পের ভিত্তি বাড়াতে হবে।

বিনিয়োগ বাড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে বাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে মূল্যস্ফীতি এমনিতেই কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) অনুষ্ঠিত এক ডায়ালগে প্যানালিস্টের বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত “What Lies Ahead for the Banking Sector in Bangladesh?” শীর্ষক ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

মূল প্রবন্ধে দেশের ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন অব্যস্থাপনা তুলে ধরে শক্তিশালী আর্থিক খাত গড়ে তুলতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন, উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিসহ বিভন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন ড. ফাহমিদা।

প্যানালিস্টের বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ভালনারেবিলিটি (ঝুঁকিপ্রবণতা) বাড়ছে এবং ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ঠিক না হলে এই অস্থিরতা কমবে না।

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না নিয়ে সাময়িক প্রয়োজনে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া আর্থিক খাতের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে মন্তব্য করেন সালেহিউদ্দিন।

এ সব সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক আইনি সংস্কারে উল্টো পথে হাটঁছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, এক পরিবার থেকে ব্যাংকে সর্বোচ্চ দুই জন পরিচালক ছয় বছরের জন্য মনোনয়নের সুযোগ থাকলেও এখন তিনজন পরিচালক নয় বছর ধরে থাকতে পারছেন। আগে কোন ব্যাংকে কোন শিল্প গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপী হলে এই গ্রুপের অন্য কোন প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারত না। এখন খেলাপী প্রতিষ্ঠানের মূল গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরে রিজার্ভে চাপ থাকলেও বিনিময় হার ৮২ টাকায় ধরে রাখতে ১২ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে। এখন এক সাথে ২৭ শতাংশ কমাতে হচ্ছে টাকার মান।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন না করে দুষ্টের পালন শিষ্টের দমন করে চলছে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই গভর্নর।

তিনি বলেন, অতীতে মোট ঋণ সঞ্চিতির ১০ শতাংশ জমা দিয়ে ঋণ রিশিডিউলের সুযোগ ছিল। দ্বিতীয়বার ও তৃতীয়বার রিশিডিউলের জন্য এই হার আরও বাড়ত। এখন মাত্র দুই শতাংশ জমা দিয়েই এই ঋণ রিশিডিউলের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তা ছাড়া ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ হলে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়া নতুন বিজনেস মডেলে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সালহউদ্দিন। এর ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার দুর্বলতার কারণে ব্যাংকিং খাতে এমনটা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সমঝোতা, রাজনৈতিক চাপ অতীতেও ছিল। তবে অতীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বায়ত্তশাসনের চর্চা করায় পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি।

ব্যাংক ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ আর নীতিমালা প্রণয়নে আলাদা সংস্থা গঠনের তাগিদ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটা সমবায় সমিতির আদলে পরিচালিত হচ্ছে। ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক, ও ব্যাংক পরিচালক যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

;

স্বাধীনভাবে কাজ না করায় ব্যাংকিংখাতে পুঞ্জীভূত সংকট বাড়ছে: সিপিডি



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজে বাধা এমন কি অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ না করায় ব্যাংকিং খাতে পুঞ্জীভূত সংকট বাড়ছে বলে মন্তব্য করে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজধানীর লেকশোর হোটেলের লা ভিটা হলে সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে?’ শীর্ষক সংলাপে এ মন্তব্য করে সিপিডি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, স্বাধীনভাবে কাজ না করার অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ফেলেছে। এর ফলে সুদের হার, ব্যাংকের লাইসেন্স, সুদ মওকুফ, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের মত বিষয়াদির নীতিমালা বাংলাদেশ বাংকের বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

ডা. ফাহমিদা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও সুশাসনের অভাব, নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা, আইনি জটিলতা আর অবাধ তথ্যের অভাবে ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে।

পরিস্থিতির উত্তরণে খাতভিত্তিক সাময়িক উদ্যোগের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, দৃঢ় রাজনৈতিক সংকল্প এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে নির্দেশনা না আসলে এই খাতকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

অনুষ্ঠানে ব্যাংকগুলোর পরিচালক নিয়োগ থেকে শুরু করে ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা চর্চা সমুন্নত করা, দুর্বল ব্যাংকগুলোর এক্সিট পলিসি নিশ্চিত করা, অর্থ ঋণ আদালতে চলমান মামলাগুলোর দ্রুত সমাধান করার সুপারিশ করা হয়।

এ সব সমস্যার সমাধানে বরাবরের মতই একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনেরও তাগিদ দিয়েছে সিপিডি।

সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির ফেলো প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংকিংখাতের অবস্থা ভালো থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ভালো থাকবে।

আর এই খাতে চ্যালেঞ্জ দেখা দিলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে এর গুণক প্রভাব পড়বে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে অর্থনীতি নতুন করে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।

মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০১২ সালের ৪২,৭২৫ কোটি টাকা থেকে তিন গুণ বেড়ে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১,৪৫,৬৩৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর বাইরে ২০২২ সালের হিসেবে অবলোপন করা ৪৪৪৯৩ কোটি টাকা এবং রিসিডিউল করা ২১২৭৮০ কোটি টাকা যোগ করলে মোট মন্দ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩.৭৮ লাখ কোটি টাকায়।

বর্তমাণে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজারের বেশি বিচারাধীন মামলায় ১.৭৮ লাখ কোটি টাকা আটকে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই টাকা কখন পাওয়া যাবে এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নয়।

খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট বৃদ্ধির পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যয় বৃদ্ধির জন্য সুদের হারকে দায়ী করা হলেও খেলাপ ঋণের বিষয়টি আলোচনায় আসে না। বাস্তবতা হচ্ছে খেলাপি ঋণের আশঙ্কায় ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের আগেই একটা কুশন রাখতে হয়।

সচরাচর সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেশি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পাল্লা দিয়ে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। এর ফলে ব্যাংকে প্রভিশনিং ঘাটতির পাশাপাশি তারল্যের সংকট ঘনীভূত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরের সময় ৯৮৯৪১ কোটি টাকা প্রয়োজনের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশনিং ছিল ৭৯৬৭৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে ব্যাংকের প্রভিশনিং ঘাটতি ছিল ১৯. ৫ শতাংশ। এ সময় ১৯২৬১ কোটি টাকা মোট প্রভিশনিং ঘাটতির মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর অংশ প্রায় সমান ছিল।

তিনি আরও বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকিংখাতে বাড়তি তারল্য ১৬২০০০ কোটি টাকায় নেমে আসে, যা ২০২১ সালের জুনে ছিল ২৩২০০০ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকের মোট তারল্যের বিপরীতে উদ্বৃত্ত তারল্যের হার  ৫২ শতাংশ থেকে কমে ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার বাড়লেও আমানতের সুদের হার মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় অনেক নিচে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. ফাহমিদা।

তিনি বলেন, সুদের গড় হার আর মূল্যস্ফীতির হার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আমানতের প্রকৃত সুদ হার ২০২০ সালের ০.০৩ শতাংশ থেকে কমে -৪.৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

ব্যাংক ব্যবস্থায় তথ্য উপাত্তের বড় ঘাটতি রয়েছে মন্তব্য করে ফাহমিদা বলেন, ব্যাংকগুলো নিজেদের পারফর্মেন্সের তথ্য ওয়বসাইটে দেয়ার কথা থাকলেও ব্যাসেল-৩ সম্পর্কিত অনেক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। আবার যে সব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, তার মান নিয়েও সংশয় রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করার সমালোচনা করে এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে তথ্য আসছে সেগুলোর বড় অংশই সাধারণ মানুষের কাছে আসছে না। সেটার দরজাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য আমরা মিডিয়ার ওপর নির্ভর করতাম, সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত তথ্য হাতের মুঠোয়, কম্পিউটারের একটা বাটনে থাকা উচিত। সেটা হলে সাংবাদিকদের তথ্যের জন্য কোথাও ঘুরতে হবে না।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকের একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েও বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন ড. ফাহমিদা। স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান এবং পরিষ্কার রোডম্যাপ ছাড়াই সাময়িক উদ্যোগ হিসেবে জোর করে মার্জার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনেক দেশেই ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হলে অন্য ব্যাংককে তা কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়। কোথাও জোর করে মার্জার চাপিয়ে দেয়া হয় না।

তিনি বলেন, দুটো ব্যাংক যোগ করে দিলেই হবে না। যারা চাকরি করছেন তাদের জব ইন্টিগ্রেশন, জব কালচার, প্রফেশনাল কালচার, টেকনোলজি ইন্টিগ্রেশন, তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হবে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আহসান এইচ মনসুর, সাবেক ব্যাংকার নূরুল আমিন, বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল দিপু ও সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।

;