প্রকল্পটি ধানমন্ডিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বক্তব্য দিচ্ছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বক্তব্য দিচ্ছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ডিপিডিসি’র (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) স্মার্ট গ্রিড, অনলাইন মনিটরিং সিস্টেম, অটোমেশন, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, ভিডিও মনিটরিং, স্ক্যাডা সিস্টেম ও আধুনিক সুবিধা সম্বলিত উপকেন্দ্র স্থাপনে পরামর্শক নিয়োগে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিদ্যুৎ ভবনে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান হিফ্যাব ওয়'র সঙ্গে যৌথভাবে কাজটি করবে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ লিমিটেড।

বিজ্ঞাপন

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘প্রকল্পটি ধানমন্ডি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ভূমিকা রাখবে। আমরা প্রথম ধানমন্ডি এলাকায় আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন করছি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকায়ও করা হবে। আমরা জেলা শহরেও আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন করতে চাই।’

‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে চাই। উন্নত কোনো দেশে এভাবে ঝুলন্ত ক্যাবল নেই। এতে নানা রকম সমস্যা হয়। বেশিরভাগ এলাকায় মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎ থাকে না। লাইন ও উপকেন্দ্রগুলো মাটির নিচে নিতে হবে। ঢাকায় ডিশ ও ইন্টারনেট ক্যাবলের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ। এগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। আপনারা ক্যাবল অপরেটরদের সঙ্গে বসে ঠিক করবেন। প্রয়োজন হলে আমিও বসতে চাই,’ যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

তিনি ডিপিডিসির উদ্দেশে বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলে আপনাদের টার্নওভার বেড়ে যাবে। এতে মুনাফাও বাড়বে। আপনারা বিনিয়োগ করতে চান না, অল্প খরচে বেশি লাভ করতে চান। প্রকৃত ইকোনোমিটা বুঝতে চান না। আপনারা সৌভাগ্যবান যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প নিতে পেরেছেন। ডিপিডিসিকে বিকল্প অর্থায়নের দিকে যেতে হবে। শুধু সরকারের কাছে টাকা চাই, টাকা চাই, করলে চলবে না। বিকল্প অর্থায়নের জন্য পাবলিক মার্কেট উপযুক্ত জায়গা হতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আপনারা এতো বড় প্রকল্প নিচ্ছেন ঝুঁকি ডিস্ট্রিবিউট করে দেন। আপনাদের সম্পদের ভ্যালু নির্ধারণ করেন। প্রয়োজনে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করেন। আপনাদের স্বচ্ছ হতে হবে। মনে রাখবেন, এ টাকা কিন্তু জনগণের। এ টাকার যেন যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।’

‘সরকার এতো টাকা আপনাকে কেন দিচ্ছে মনে রাখতে হবে। সরকার চায়, তার গ্রাহকরা মানসম্মত বিদ্যুৎ পাক। সে দিকে নজর রাখতে হবে। এতো বড় বড় ভবন করবেন, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা কে করবে? এখন থেকেই ট্রেনিং দিয়ে লোক তৈরি করতে হবে। আপনারা যে হাইরাইজ ভবন করবেন, সেখানে পাঁচতারকা হোটেল আসতে পারে। সেভাবেই ব্র্যান্ডিং করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে তিনি বলেন, উপকেন্দ্রগুলো কি মানের হচ্ছে, আমেরিকা না কি ইউরোপের স্ট্যান্ডার্ড, সেটা চূড়ান্ত করতে হবে। ভবনের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ বিনিয়োগের ফলে ডিপিডিসির কী ব্যবসা হবে? আর্থিকভাবে এটা সফল হবে কি না, তাও রিপোর্ট করতে হবে।’

প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নির্দিষ্ট ছকের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে পারেন না। প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে যেতে হবে। আন্ডার গ্রাউন্ড উপকেন্দ্র স্থাপনে অনেক বেশি খরচ। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী যে সুফল পাওয়া যাবে, সে দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে।’

চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ডিপিডিসি বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় ১৪টি, ১৩২/৩৩/১১ কেভি, ২৬টি ৩৩/১১ কেভি, আটটি ১৩২/৩৩ কেভি, চারটি ৩২/১১ কেভি বিতরণ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে ডিপিডিসির বিতরণ ক্ষমতা ১৩২ কেভি লেভেলে ৫৩৩০ এমভিএ ও ৩৩ কেভি লেভেলে ৪৬৮০ এমভিএ বৃদ্ধি পাবে।

হাতিরপুল এলাকায় ধানমন্ডি পাওয়ার হাউসে (স্ক্যাডা কমপ্লেক্স) টুইন টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এতে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা অটোমেশনের আওতায় আসবে। এর মাধ্যমে সমস্যা নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করা যাবে।

ধানমন্ডি ও হাতিরঝিল এলাকার বিদ্যুতের টাওয়ার ও ঝুলন্ত লাইন সরিয়ে মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হবে। প্রতিটি উপকেন্দ্রে ডুয়েল সোর্স নিশ্চিত করা হবে। যাতে একটি সোর্সে ত্রুটি দেখা দিলেও বিকল্প সোর্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। আর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় হবে ৯৭ কোটি টাকা।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল্লাহ, ডিপিডিসি’র এমডি বিকাশ দেওয়ান, হিফ্যাব ওয়'র আঞ্চলিক পরিচালক নেথোলি তানেফেল্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালট্যান্ট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী কামাল উদ্দিন আকরামসহ অনেকে।