পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমলেও খুচরা বাজার বেসামাল

  • তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পেঁয়াজ কিনছেন এক ক্রেতা, ছবি: সুমন শেখ

পেঁয়াজ কিনছেন এক ক্রেতা, ছবি: সুমন শেখ

ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার একদিন পর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। রাতারাতি প্রতি কেজি পেয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

লাগামছাড়া পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে জোর দেয়। এর ফলে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে আসছে। এ খবরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে খুচরা বাজারে তার প্রভাব এখনো পড়েনি।

বিজ্ঞাপন
ONION
পেঁয়াজ কিনছেন এক ক্রেতা, ছবি: সুমন শেখ 

 

বুধবার (২ অক্টোবর) পাইকারি বাজারে কেজিতে ১০ টাকা কমিয়ে পাইকাররা দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন। যা গত কয়েকদিন ধরে পাইকারি বাজারে ছিল দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি ছিল।

বিজ্ঞাপন

তবে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। বাজার ভেদে কোনো কোনো দোকানে আগের দামে অর্থাৎ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়।

বুধবার রাজধানীর অন্যতম বড় কাঁচা বাজার কারওয়ান বাজারসহ বেশ কিছু বাজার ঘুরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার খবর পাওয়া গেলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব এখনো পড়েনি। ক্রেতারা আগের দামেই পেঁয়াজ কিনছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাইকারি দেশি পেঁয়াজের কেজির দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে আমদানিকৃত পাইকারি পেঁয়াজের মূল্য ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৯৬ থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে এ দামে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

হাবিবুর রহমান নামে এক ক্রেতা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনো কমেনি। আজও আগের দামেই পেঁয়াজ কিনলাম। অন্যান্য দেশ থেকে নাকি পেঁয়াজ নিয়ে আসা হচ্ছে। তাহলে দাম তো এখনো কমেনি। এসব পেঁয়াজ তাহলে যাচ্ছে কই।'

পেঁয়াজ কিনতে আসা জাহিদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘প্রতিবছর এমনটাই শুনি। আমাদের চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়েছে। আমদানির প্রয়োজনই পড়ে না। তারপরও যখনই ভারত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয় বা রফতানি বন্ধ করে দেয়, তখনই দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এর মূল কারণ সরকারি মনিটরিং না থাকা।'

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কালাম শেখ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'মিয়ানমার থেকে কিছু পেঁয়াজ এসেছে বাংলাদেশে। পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দামটা কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া বাজারে বেচাকেনা নেই, দাম বাড়ার ফলে চাহিদাটাও কমে গেছে। ফলে লস দিয়ে হলেও কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলছি। তবে পেঁয়াজের সরবরাহ আরো বাড়লে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।'

onion
পেঁয়াজ কিনছেন এক ক্রেতা, ছবি: সুমন শেখ 

 

পেঁয়াজ মজুদ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল মসলাজাতীয় পণ্য, তাই বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। বারবার বলা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে রাখেন। আসলে পেঁয়াজ বেশি দিন মজুদ করে রাখা যায় না। প্রতিদিন পেঁয়াজ আমরা কিনে নিয়ে আসি, সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি করে দেই। এখানে মজুদ রাখার কোনো সুযোগ নেই।'

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'আমাদের দেশীয় নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত বাজার পরিস্থিতি খুব একটা স্বাভাবিক হবে না। যদিও সরকার অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে জোর দিচ্ছে, এটা ভালো উদ্যোগ। তবে এর ফলে দাম খুব একটা কমবে না। ক্রেতাদের ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনতে হলে, নতুন পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম ঠিক রাখার জন্য সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে।'