লাফিয়ে বাড়ছে এলপি গ্যাসের ব্যবহার

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশে লাফিয়ে বাড়ছে এলপি গ্যাসের ব্যবহার। ভবিষ্যতে পাইপলাইনে গ্যাসের ব্যবহারকারীদের এলপি গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে সরকার।

২০০৮-০৯ অর্থ বছরে দেশে লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহৃত হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। ৯ বছরের ব্যবধানে এ চাহিদা ৭ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। ২০৪১ সালে এলপিজির চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব মুহা. শের আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে ব্যাপক হারে এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি হারে (৯২ শতাংশ) বেড়েছে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে। আর গড় ৩৫ শতাংশ হারে বেড়েছে এলপিজি ব্যবহার। ৫৬টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি কোম্পানি উৎপাদনে রয়েছে। আমরা মনে করছি, যে সব কোম্পানি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি উৎপাদনে আসে, তাহলে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আর কোনো সংকট হবে না।’

‘সরকার চাচ্ছে, নারীদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য ক্লিন এনার্জির ব্যবহার বাড়াতে। আর সেই ক্লিন এনার্জি হচ্ছে এলপিজি। দাম নিয়ে ভোক্তারা যাতে নাজেহাল না হন, সে জন্য নীতিমালা করার চেষ্টা চলছে। আমরা আমদানিকারকদের বলেছি, তারা যেন সিলিন্ডারের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লিখে দেন। যাতে গ্রাহকদের কাছ থেকে কেউ বেশি অর্থ আদায় করতে না পারে,’ যোগ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মুহা. শের আলী আরো বলেন, ‘আমরা একটি প্রাইসিং ফরমুলা তৈরির চেষ্টা করছি। সেখান আমদানি মূল্য, পরিবহন খরচ, মার্কেটিং খরচ ও আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতার মার্জিন রেখে দর নির্ধারণ করে দেওয়া হতে পারে।’

ভবিষ্যতে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে গেলে আবাসিকে এলপিজি প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে মনে করেন মুহা. শের আলী।

এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান খানের এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, ‘নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যেতে পারে। তখন পাইপ লাইনে গ্যাস ব্যবহারকারী ১২ শতাংশ গ্রাহক এলপিজি ব্যবহার করবে। এসব গ্রাহকের জন্য ১০ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন এলপিজি প্রয়োজন পড়বে। বর্ধিত গাড়ির সিএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে এ খাতে এলপিজির প্রয়োজন পড়বে ২০ লাখ মে. টন।’

রিপোর্টে ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘২০১৪ সালে শহরে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮.২ শতাংশে। এর আগে ২০১৩ ও ২০১২ সালে ছিল যথাক্রমে ২৭.২ ও ২৬.২ শতাংশ। অর্থাৎ শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে ১ শতাংশ হারে। সে হিসাবে ২০৪১ সালে শহর ও গ্রামের জনসংখ্যার অনুপাত হবে সমান সমান। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতিক হার বিবেচনায় শহরে পরিবারের সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ৬ লাখ।’

ইউএনডিপির বরাতে আরো বলা হয়েছে, ‘গ্রামে উচ্চ আয়ের লোক সংখ্যা ১০ শতাংশ আর মধ্যম আয়ের লোক সংখ্যা ৫০ শতাংশ। উচ্চ ও মধ্যম আয়ের লোকজন এলপিজি ব্যবহার করবে। সে পরিকল্পনার ভিত্তিতে ৮০ লাখ মেট্রিক টন চাহিদা নির্ণয় করা হয়েছে। এখানে গ্রামের ৪০ শতাংশ জনসংখ্যাকে এর আওতার বাইরে বিবেচনা করা হয়েছে।’

বাংলাদেশে প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মিলে ২৭ টিসিএফ গ্যাস প্রাক্কলন করা হয়। এর মধ্যে উত্তোলন শেষে বর্তমানে ১১ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন যোগ্য রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রতি বছর প্রায় ১ টিসিএফ উত্তোলিত হচ্ছে। সে হিসেবে নতুন আবিষ্কার না হলে ১০ বছর পর গ্যাস ফুরিয়ে যেতে পারে। আবার গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ায় কূপের অভ্যন্তরে চাপ কমে যাবে। সে কারণে আসছে বছরগুলোতে গ্যাস উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কা রয়েছে। এ শঙ্কা থেকে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ঘাটতি সামাল দিতে চড়া দরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। যা আবাসিকে সরবরাহে সরকারের কোনোই পরিকল্পনা নেই।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ একাধিক সভায় বলেছেন, ‘নতুন করে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাস শুধু বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহার করতে চাই।’

বর্তমানে বাংলাদেশে গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট থেকে এলপিজি উৎপাদন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমদানিকৃত ক্রড অয়েল থেকে সামান্য পরিমাণে এলপিজি পাওয়া যায়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কনডেনসেট ও ক্রড অয়েল থেকে প্রাপ্ত এলপিজির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৬৯৭ মেট্রিক টন। একই সময়ে আমদানি করা হয়েছে ৬ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশের দু’টি কোম্পানি ত্রিপুরাতে এলপিজি রফতানির জন্য সম্প্রতি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। যার প্রধান উৎস হবে আমদানি।