১২৫ সেবা মিলবে বেজার ওয়ান স্টপ সার্ভিসে
ট্রেড লাইসেন্স, জমি নিবন্ধন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ ২৭টি ক্যাটাগরির ১২৫টি সেবা এক জায়গায় পাওয়া যাবে। কোনো বিনিয়োগকারীকে প্রাথমিক অনুমোদন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য আর বিভিন্ন কার্যালয়ে ধর্না দিতে হবে না।
সোমবার (২১ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত ওয়ান স্টপ সার্ভিসের (ওএসএস) উদ্বোধন করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সেন্টারটির উদ্বোধন করেন।
বেজা জানিয়েছে, বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদন নিতে হয়। এ সব অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং জটিল হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হন। বেজা বিনিয়োগকারীদের এ সব অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়।
বেজার উদ্যোগী ভূমিকায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৮ পাস করা হয়। এ আইনের আওতায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) বিধিমালা, ২০১৮ জারি করা হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে যথাসময়ে সেবা প্রদানের বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। অনলাইনেই সব সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। বিনিয়োগকারীদের কোন সেবা কত দিনের মধ্যে দিতে হবে, তা বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় উন্নয়নের মহাসড়কে। সবচেয়ে আশাব্যাঞ্জক বিষয় হলো বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এলডিসি দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষস্থানে চলে এসেছে।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর এ কারণে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার মার্কিন ডলার উন্নয়নে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আমরা অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় রয়েছি। শুধুমাত্র সেবার মান বাড়িয়ে এর সূচকের অবস্থানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে দ্রুত, সহজ এবং গতিশীল করার জন্যই বিনিয়োগকারীদের বেজা থেকে ওএসএস সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে বাংলাদেশে সেবা প্রদান সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আধুনিক ও ডিজিটাল সেবার মান বহুগুণে বেড়ে যাবে।
বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, সকল বিনিয়োগকারী যেমন বেজা থেকে সেবা নিচ্ছেন ঠিক তেমনি তাদের প্রতিও আমাদের অনুরোধ থাকবে সরকারের সব আইন ও নীতি প্রতিপালন করে তারা শিল্প স্থাপন ও পরিকল্পনা করবেন। শিল্প এবং রপ্তানি খাতকে বহুমুখীকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেজা যেসব উদ্যোগ ও কর্ম পরিকল্পনা নিয়েছে তার সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করবে বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতার ওপর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত মি. নাওকি ইতো, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
এক নজরে বেজার ওএসএস কার্যক্রম
ইকোনমিক জোনে শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রজেক্ট ক্লিয়ারেন্স প্রদান, বিনিয়োগকারী/ডেভেলপারদের ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় সকল ধরনের সেবা/লাইসেন্স/ছাড়পত্র প্রদান, ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের সেবা প্রদানের জন্য অন্য সরকারি দপ্তরের সাথে তাদের সমন্বয়, ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের জবাব, আইন/বিধি/প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে অবহিত করা, বেসরকারি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাক-যোগ্যতাপত্র প্রদান, বেসরকারি ইকোনমিক জোনকে লাইসেন্স প্রদান, বেজার সকল বিনিয়োগকারীদের ওএসএস থেকে সকল সেবা প্রদান করা। বর্তমানে ওএসএস থেকে বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে ও অফলাইনে সেবা দেওয়া হয়।
ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সেবা বর্তমানে ওএসএস থেকে বেজা কর্তৃক ১১টি সেবা (ভিসা সুপারিশপত্র, বিনিয়োগ ছাড়পত্র, ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুকরণ, আমদানি অনুমোদন, রপ্তানি অনুমোদন, প্রকল্প অনুমোদন, প্রকল্প রেজিস্ট্রেশন, লোকাল বিক্রয় পারমিট, লোকাল ক্রয় পারমিট, নমুনা আমদানি পারমিট) অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে।
আরও ৪টি সেবা অনলাইনে যুক্ত করার ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। এনবিআর, পরিবেশ অধিদপ্তর, জয়েনস্টক কমিশনের সঙ্গে এমওইউ হবে, এর ফলে এ সব দপ্তর সংশ্লিষ্ট সর্বমোট ৩০ টি (২+২৬+২) সেবা অনলাইনে দেওয়া সম্ভব হবে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে অনলাইনে ওএসএস-এর মাধ্যমে বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ দেওয়ার সুবিধার্থে সোনালী ব্যাংকের সাথে এমওইউ স্বাক্ষর করেছে বেজা।