পেঁয়াজের দাম কমলেও চাল-সবজিসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি
বিভিন্ন জেলায় নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় এবং বিদেশ থেকে নতুন পেঁয়াজ নিয়ে আসার ফলে বর্তমান বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে সব ধরনের চালের দামও বেড়েছে। তাছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির ফলে, পণ্যবাহী ট্রাক না চলায়, রাজধানীর বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সবজি না আসায় সব ধরনের সবজির দামে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ছুটির দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৮০ টাকা কমেছে। দাম কমে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। গত সপ্তাহে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকালে রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার পাইকারি ও খুচরা কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মত চালের দামে ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম।
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী হক সাহেব বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ার জন্য মিল মালিকরা দায়ী। মিল মালিকরা চালের দাম বাড়ানোর কারণে আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তবে এখনই সরকার কোন পদক্ষেপ না নিলে চালের দাম আরও বাড়বে।
বর্তমান খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়, নাজিরশাইল চালের দাম বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগে ছিলো ৫০ থেকে ৫২ টাকায়, বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়, যা আগে ছিলো ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা, স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় যা আগে ছিলো ৩৩ টাকা, তবে চিনিগুঁড়া চাল কেজিপ্রতি ৮ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা ক্রেতা ফরিদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পেঁয়াজের ঝাঁজ কমতে না কমতেই গত সপ্তাহের মত চালের বাজার ঊর্ধ্বগামী। একের পর এক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের। বাজারে কার্যকর নজরদারি না থাকার কারণে একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে।
এদিকে শীতকালীন সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দামে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি কেজি নতুন আলু ১২০ টাকা, আর পুরাতন আলু ২৫ টাকা, পেঁয়াজের কলি ২০০ টাকা, শালগম ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা, শিম ৮০-১০০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বাজারে, প্রতি পিস ফুলকপি ৫০-৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা , লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী মো. মতিন বলেন, পণ্যবাহী ট্রাক না চলায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রাজধানীর বাজারে আসতে পারেনি। ফলে শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। শীতকালীন সবজির কোনো সঙ্কট নেই। পণ্যবাহী ট্রাকে সবজি নিয়মিত আসতে থাকলে দাম আগের মতোই চলে আসবে।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম, বর্তমান বাজারে, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫২০-৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা এবং বকরির মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া মুরগির দাম কমে, ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি ১২৫-১৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২১০ টাকা,পাকিস্তানি মুরগি ২৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৮০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংস বিক্রেতা রেজানুল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে বাজারে মাংসের চাহিদা কম। তাই মাংসের দাম বাড়েনি আগের মতোই রয়েছে। বর্তমান বাজারে মাংসের বেচাকেনা খুব একটা ভালো না।
বাজার করতে আসা ইশতিয়াক রাসেল নামের এক ক্রেতা বলেন, মাংসের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো ধরনের মাংসের দাম বাড়েনি। মুরগির দাম কিছুটা কমেছে গত সপ্তাহ থেকে। তবে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত তিন দিনের তুলনায় ভরা মৌসুমেও হালিতে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা বেড়েছে ইলিশের দাম। তাছাড়া অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬৫০ টাকা, টেংরা মাছ ৭০০টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০টাকা, রুই মাছ ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ ১৬০ টাকা, শিং মাছ ৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০ টাকা, কৈ মাছ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়ে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে, ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছ প্রতি কেজি এক হাজার ২০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার টাকা, ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৮০০ টাকা । এদিকে, এক কেজি ওজনের এক হালি ইলিশের দাম ৪০০০ থেলে ৪২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, কারওয়ান বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর কমকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে তেলের দাম বেড়েছে। প্রতি পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের জারে ১০ টাকা করে বেড়েছে। তাছাড়া আটা-ময়দা-চিনির দামও খানিকটা বাড়তি। লবণের লঙ্কা কাণ্ডের পর, বাজার স্বাভাবিক রয়েছে।
বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যাতে ঊর্ধ্বমুখী না থাকে, কর্তৃপক্ষের জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়া উচিত।