কমছে না নিত্যপণ্যের দাম, বিপাকে সাধারণ মানুষ
গত কয়েক মাস ধরে পেঁয়াজের দামে আগুন, কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম নাগালে আসার আগেই দফায় দফায় বাড়ছে চাল, তেল, ময়দাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। নিত্যপণ্যের দামের এ উত্তাপ কোনোভাবেই কমছে না।
গত সপ্তাহজুড়েই দাম বাড়ার তালিকায় এক এক করে যুক্ত হয়েছে নতুন পণ্য। আর বিভিন্ন অজুহাতে শীতকালীন সবজির দাম বাড়ানো-কমানোর কারসাজি তো চলছেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত লোকজন। বাজার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকায়।এদিকে চালের বাজারের অবস্থা গত সপ্তাহের মত স্থিতিশীল আছে, তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫০ টাকায়, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, বিআর-২৮ ৪৫ টাকায়, স্বর্ণা ৩৮ টাকায় আর সুগন্ধি চাল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর টাউনহল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে রাজধানীতে চাহিদা অনুযায়ী সবজি না আসায় দাম বেড়েছিল। তবে এখন বাজারে পর্যাপ্ত শীতকালীন সবজি থাকায় দাম কিছুটা কমেছে।
এ সপ্তাহে প্রতিটি ফুলকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা আর কাঁচকলা হালি ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে, কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৬০ টাকা, শিম ৬০-৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, নতুন আলু ৮০ টাকা, পুরনো আলু ৩০ টাকা, কাঁচা পেপে ৩০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, শসা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা বকুল মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রত্যেক সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। একেবারেই নাজেহাল অবস্থা। বাজারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মত ক্রেতাদের অবস্থাও শোচনীয়।
শাম্মী আক্তার নামের আরেক ক্রেতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম না কমায় এটাই প্রমাণ হয় যে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ পেরে উঠছে না। দামের ঊর্ধ্বগতির ফলে বাজার ব্যবস্থা অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আরো কঠোর নজরদারি করা উচিত।
এদিকে কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে পর্যাপ্ত শীতকালীন সবজি রয়েছে তাই দাম কিছুটা কম। পাইকারি পর্যায়ে আমরা যেমন দামে কিনি, খুচরা পর্যায়ে কম লাভে বিক্রি করার চেষ্টা করি। পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত থাকে না।
কারওয়ান বাজারের মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমান বাজারে, প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ টাকায়, তেলাপিয়া মাছ ১৫০ টাকায়, বড় সাইজের কাতল মাছ ৩৫০ ঢাকায়, সরপুঁটি ১৮০ টাকায়, শিং মাছ ৫০০ টাকায়, কৈ ৪০০ টাকায়, পাবদা ৫০০ টাকায়, রূপচাঁদা ৮০০ টাকায়, টেংরা ৬০০ টাকায়, চিংড়ি ৫০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে ইলিশের দাম। প্রতিটি এক কেজি ওজনের ইলিশ ১০৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিটি ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০-৩৮০০ টাকায়।
টাউন হলের মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাংস বিক্রি হচ্ছে আগেরই দামেই। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০ টাকায়, খাসির মাংস ৭৫০ টাকায় এবং বকরির মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ফার্মের মুরগি কেজি প্রতি ১২৫-১৩০ টাকায়, কক লাল মুরগি ২২০ টাকায়, পাকিস্তানি মুরগি ২৪০ টাকায়, দেশি মুরগি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সুলতান বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত সপ্তাহে বাড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল, আটা ময়দা, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্য। তাছাড়া সব ধরনের লবণের দাম আগের মতোই আছে। বাজারে পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহও রয়েছে।