দাম বাড়ল বিদ্যুতের
প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দর ৮.৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৫.১৭ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আর খুচরা গড়ে ৬.৭৭ টাকা থেকে ৫.৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৭.১৩ টাকা করা হয়েছে। মার্চ থেকে এ মূল্য কার্যকর হবে। এছাড়া হুইলিং চার্জ ৫.৩ শতাংশ বাড়িয়ে ২৯ পয়সা করা হয়েছে। বর্তমানে ২৭ পয়সা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল এ ঘোষণা দিয়েছেন। বর্ধিত এ মূল্য মার্চ থেকেই কার্যকর হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, রহমান মুরশেদ, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মোহাম্মদ বজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আবাসিক লাইফলাইন গ্রাহকদের (০-৫০ ইউনিট) ৩.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩.৫৭ টাকা করা হয়েছে। সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে (০-৭৫ ইউনিট) ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.১৯ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে (৭৬-২০০ ইউনিট) ৫.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫.৭২ টাকা, তৃতীয় ধাপে (২০১-৩০০ ইউনিট) ৫.৭০ টাকা থেকে ৬ টাকা, চতুর্থ ধাপে (৩০১-৪০০ ইউনিট) ৬.০২ টাকা থেকে ৬.৩৪ টাকা, পঞ্চম ধাপে (৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট) ৯.৩০ টাকা থেকে ৯.৯৪ টাকা এবং শেষ ধাপে ৬০০ ইউনিটের উর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের ১০.৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১.৪৬ টাকা করা হয়েছে।
গৃহস্থালির পাশাপাশি কৃষি সেচ, শিল্প এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী কৃষিতে ইউনিট প্রতি ১৬ পয়সা দাম বেড়েছে। আগে কৃষি সেচে এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম ছিল ৪ টাকা এখন কিনতে হবে ৪.১৬ টাকা দরে।
ক্ষুদ্র শিল্পর জন্য নতুন দাম হচ্ছে ফ্ল্যাট ৮.৫৩ টাকা, অফপিকে ৭.৬৮ টাকা এবং পীক আওয়ারে ১০.২৪ টাকা। নির্মাণে শিল্পে নতুন দাম ইউনিট প্রতি ১২ টাকা ধর্মীয়, শিক্ষা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দাম হচ্ছে ৬.০২টাকা, রাস্তার বাতিতে ৭.৭০টাকা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ফ্ল্যাট রেইট ইউনিট প্রতি ১০.৩০ টাকা, অফপিকে ৯.২৭ টাকা এবং পিকে ১২.৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান বলেন, দাম বাড়ানোর জন্য কমিশন যেসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে তার মধ্যে আমদানিকৃত কয়লা উপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য, ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ বৃদ্ধি, অবচয় ব্যয় বৃদ্ধি, তুলনামূলক কম মূল্যে পল্লী বিদ্যুত সমিতিসমূহের অধিক পরিমাণ বিদ্যুত ক্রয় এবং এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছিল সেগুলোর সুদ পরিশোধ এবং প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম উপর ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা। এইসব বিষয় বিবেচনা করে দাম বৃদ্ধি করা এই দাম মার্চ মাস থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না হওয়া পযন্ত এই আদেশ কাযকর থাকবে।
এর আগে গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিদ্যুতের (পাইকারি ও খুচরা) দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) গণশুনানিতে উল্লেখ করেছিল এলএনজি আমদানির কারণে গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ খাতে বছরে মোট ব্যয় বাড়বে ২হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কয়লার উপর ভ্যাট আরোপ করায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যয় বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে বর্তমান দর অনুযায়ী পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রি করলে ৯হাজার ৫৫২ কোটি টাকা লোকসান হবে। যে কারণে বিদ্যুতের পাইকারি দর ৫ দশমিক ৮৮ টাকা (বর্তমান দর ৪.৮৪ টাকা) করা প্রয়োজন।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে পাইকারি বিদ্যুতের দর ২০১৭ সালের নভেম্বর ৮ পয়সা কমিয়ে ৪.৮৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তখন গড় ব্যয় ছিলো ৫ টাকা ৪৪ পয়সার মতো। বিইআরসি ৬০ পয়সা হারে ভর্তুকি দেওয়ার আদেশ প্রদান করেছিল।
বিপিডিবি তার প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করেছে, বিতরণ কোম্পানিগুলোর গড় রেট বিবেচনা করে দেখা গেছে ডিপিডিসি ইউনিট প্রতি ৭.৬৭ টাকা, ডেসকো ৭.৮০ টাকা, বিপিডিবি ৬.৯৪ টাকা, ওজোপাডিকো ৬.৮৯ টাকা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৬.৩৪ টাকা ও নেসকো ৬.৬০ টাকা হারে দর আদায় করছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
ডেসকো ৫.০৬ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল। ডিপিডিসি প্রস্তাবে বলেছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নীট রাজস্ব প্রয়োজন ১৪৮ কোটি টাকা। অপরেশন এন্ড ব্যবস্থাপনা কষ্ট ৮০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে এই টাকা সমন্বয় করা প্রয়োজন। নতুন করে সঞ্চালন ও পা্ইকারি দাম বৃদ্ধি হলে সমন্বয় করার প্রস্তাব দেয় বিতরণ কোম্পানিটি।
সবচেয়ে বড় এই বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিগত অর্থ বছরে ব্রেক-ইভেনে ছিলো। চলতি অর্থ বছরেও ব্রেক-ইভেনে থাকবে। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিতরণ অঞ্চলে (সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ) খুচরা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য সরাসরি কোনো আবেদন করেনি। বিপিডিবি বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে, পুনঃসংযোগ ফি নির্ধারণ ও ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধি। বিতরণ সংস্থাটি বিদায়ী বছরে বিতরণ খরচ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ইউনিট প্রতি বিতরণ ব্যয় ছিলো ১.০৯ টাকা। বর্তমান পঞ্জিকা বর্ষে যা ১.০৫ টাকায় নেমে আসবে। এতে করে তাদের মুনাফা কিছুটা বাড়বে। সে কারণে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি না হলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলে জানিয়েছে।
গণশুনানিতে তোপের মুখে বিতরণ কোম্পানিগুলো স্বীকার করেছিলেন পাইকারি দাম না বাড়লে খুচরা দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।