স্থায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চায় তিতাস
গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ও পাইপলাইন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। রাষ্ট্রীয় এই বিতরণ কোম্পানিটি নিরবচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনার জন্য স্থায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চায়।
এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আবেদন পাঠানো হয়েছে। তিতাসের যুক্তি হচ্ছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাহিদা মতো সময়ে না পাওয়ায় অভিযান পরিচালনা ব্যাহত হয়। তিতাসের জন্য স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হলে অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এতে করে গ্যাস চুরি রোধ করা সম্ভব হবে।
তিতাস গ্যাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মইনুল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিভাগে আবেদন করে রেখেছি। এখনও সাড়া পাইনি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পেলে নিরবচ্ছিন্নভাবে অভিযান পরিচালনা করা যেতো।
মইনুল আলম বলেন, কিছুদিন পূর্বে গ্যাসের সবগুলো বিতরণ কোম্পানির জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। মাস দেড়েক থাকার পর তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার দায়িত্বে থাকা এই কোম্পানিটি অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে নাকাল অবস্থা। কতগুলো অবৈধ সংযোগ রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। অতীতে শুধু অবৈধ চুলা জ্বললেও এখন কিলোমিটারের পর কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন বসিয়ে গ্যাস চুরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় এই প্রবণতা চরম।
দীর্ঘদিন ধরে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু নতুন নতুন এলাকায় সম্প্রসারিত হচ্ছে গ্যাসের পাইপ লাইন। তিতাসের স্টাফদের সঙ্গে যোগসাজশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপিত হচ্ছে এসব পাইপলাইন। এতে একদিকে যেমন গ্যাস চুরি হচ্ছে অন্যদিকে পুরো সিস্টেম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে তিতাস নিজেরা গ্যাস সংযোগ দেয় নি। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম চুলা জ্বলছে তিতাসের অবৈধ গ্যাসে। এমনও দেখা গেছে, সকালে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, বিকেলেই আবার বসেছে পাইপলাইন।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তিতাসের লোকজনও অনেক ক্ষেত্রে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ। অভিযানের প্রসঙ্গ এলেই শুরু হয় নানা রকম টালবাহানা। ম্যাজিস্ট্রেট নেই, ফোর্স নেই। এসব টালবাহানা দূর করতে কোম্পানিটি নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ চায়। যাতে ওই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারেন। কিন্তু তাতে সায় মিলছে না জনপ্রশাসন বিভাগের। এ কারণে আটকে আছে তিতাসের পরিকল্পনা।
দশকের পর দশক ধরে চলে আসা এসব অনিয়ম থামছেই না। শেষ এক দশকে নতুন সংযোগ বন্ধ। ২০১৪ সালে এসে পেট্রোবাংলার এক আদেশে বলা হয় যারা অবৈধভাবে সংযোগ পেয়েছেন তাদেরগুলো বৈধ করা হবে। এই ঘোষণা মানুষকে দ্বিগুণ উৎসাহ যোগাচ্ছে নতুন করে অবৈধ সংযোগ নিতে। তারা মনে করছেন হয়তো আবারও এমন সুযোগ আসবে।
তবে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, লাখ লাখ চুলায় চোরাই গ্যাস জ্বললেও তিতাসের সিস্টেম লস নেই। কোম্পানিটি যা গ্যাস কিনছে তার চেয়েও কোনো কোনো বছর বেশি গ্যাস বিক্রি করেছে। এমন তথ্যই উঠে এসেছে তাদের বার্ষিক বিবরণীতে। ২০১৪ সালে তাদের এই অবাক কাণ্ডে খোদ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও বিস্ময় প্রকাশ করেছিল।
এরপর থেকে অবশ্য আর সিস্টেম গেইন দেখায়নি। ধারণা করা হয় শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকদের যে পরিমাণ গ্যাস দেওয়ার কথা সেই পরিমাণ গ্যাস না দিয়েই তারা বিল কষে যাচ্ছে।
গ্যাসের সরবরাহ কমের কারণে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে শিল্প ও বাণিজ্যিকে গ্যাস–সংযোগ বন্ধ করা হয়। পরের বছর ১৩ জুলাই বন্ধ করা হয় আবাসিকেও নতুন গ্যাস-সংযোগ। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি করা হয়। কমিটি যাদের সুপারিশ দেয়, তাদের শিল্পে সংযোগ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর ২০১৯ সালের মে মাসে শিল্পে গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করা হয়।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ৭ মে আবাসিকে সংযোগ দেওয়া শুরু হলেও কিছুদিন পর তা বন্ধ করা হয়। আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগের আর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সারা দেশে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হলো তিতাস, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল, জালালাবাদ, বাখরাবাদ ও সুন্দরবন। সারা দেশে বৈধ আবাসিক গ্রাহক প্রায় ৩৮ লাখের মতো। এর মধ্যে তিতাস গ্যাসের অধীনে রয়েছে ২৮ লাখ ৪৬ হাজার গ্রাহক।