নবীনগরে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ ৫৫ বিসিএফ
শ্রীকাইল ইস্ট কূপের চূড়ান্ত পরীক্ষা সফল হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে অবস্থিত এ কূপটিতে ৫৫ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস মজুদ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি)।
গ্যাস ক্ষেত্রটিতে ৩ হাজার ৭শ’ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে) চাপ রয়েছে। আর ১ হাজার ৮শ’ পিএসআই চাপে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। দৈনিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত কূপটি। ১৮ মার্চ বাপেক্সের উৎপাদন বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারেন বলে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
৩ মার্চ রাত ৮টায় অনুসন্ধান কূপটিতে গ্যাস স্তর আবিষ্কার করে বাপেক্স। ৩ হাজার ৬৫ মিটার গভীরে অবস্থিত গ্যাস স্তরের। এখানে নতুন প্রসেস প্লান্ট স্থাপন করা হবে নাকি ৭ কিলোমিটার দূরে শ্রীকাইল প্রসেস প্লান্ট ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে ১০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। গ্যাস সংকটের কারণে উচ্চ দরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। নতুন এ কূপে গ্যাস আবিষ্কার করে আনন্দে ভাসছে বাপেক্স।
শ্রীকাইল ও বাঙ্গুরা ভিন্ন দু’টি গ্যাস ফিল্ড। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় অবস্থিত বাঙ্গুরা ও শ্রীকাইল গ্যাস ক্ষেত্র দু’টির দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। মাটির ৩২শ’ মিটার নিচে অভিন্ন ভূ-কাঠামোতে প্রায় ১৪০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত অভিন্ন গ্যাস স্তর বিবেচনা করা হয়। শ্রীকাইল রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের মালিকানাধীন। আর বাঙ্গুরা সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জির মালিকানায় রয়েছে। অবস্থা এমন যে আগে গ্যাস তুলবে সে বেশি গ্যাস পাবে। ক্রিস এনার্জিকে সুযোগ করে দিতে দীর্ঘদিন ধরেই ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ধীরে চলো নীতিতে রয়েছেন বাপেক্স পেট্রোবাংলার কর্তারা।
শ্রীকাইলে মোট ৪টি কূপ খনন করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা উৎপাদন রেকর্ডে দেখা গেছে (১৬ মার্চ) ৩টি কূপ দিয়ে ৩০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। একই সময়ে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জি প্রায় তিন গুণ (১০০.৩ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উত্তোলন করেছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে বাপেক্স। কর্মকর্তারা অনেকেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে রেখেছেন। অভিযোগ রয়েছে, কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তি স্বার্থের কাছে বারবার পরাজিত হচ্ছে বাপেক্স ও জ্বালানি খাত। পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ ক্রিস এনার্জির কাছ থেকে গ্যাস কিনতেই বেশি আগ্রহী।
বাপেক্সের একজন সাবেক এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, ক্রিস এনার্জির কাছ থেকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস কেনা হচ্ছে প্রায় ৩ ডলার দিয়ে। মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬০ হাজার মিলিয়ন ডলার। এতে দু’দিক থেকেই লোকসান হচ্ছে। নিজেরা গ্যাস তুলতে না পারায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে আইরিশ কোম্পানি টাল্লো মুনাফা করে কাড়ি কাড়ি ডলার দেশে নিয়ে যাচ্ছে।
২০০৭ সাল থেকেই এ বিষয়ে সোচ্চার রয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা শ্রীকাইল থেকে দ্রুত গ্যাস উত্তোলনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের প্রশ্ন, দেশের জ্বালানি খাত সিন্ডিকেট মুক্ত হয়ে মাথা উচু করে দাঁড়াবে কবে? ২০১৩ সালে শ্রীকাইল-৪ কূপ খনন করার ঘোষণা দেয় পেট্রোবাংলা। ২০১৪ সালে বাপেক্স বোর্ড (৩৫৪তম) সভায় অনুমোদন দেন শ্রীকাইল-৪ খননের। এরপর তৈরি করা হয় ডিপিপি (প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব)। ব্যয় ধরা হয় ৬৪ কোটি টাকা। ৫৫৬তম বোর্ড সভায় ডিপিপি অনুমোদন দেয় বাপেক্স। বাপেক্স অনুমোদিত ডিপিপি অনুমোদন পেট্রোবাংলায় পাঠায়। নিয়ম হচ্ছে পেট্রোবাংলার অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ শুরু করা হবে। কিন্তু পেট্রোবাংলায় প্রস্তাব যাওয়ার পর সব কিছু থমকে যায়। অনেকে পরে সেই কূপ খননের জন্য গাজপ্রমকে ২শ’ কোটি টাকায় ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়।