ঢাকার গ্যাস সংকট ঠেকাতে প্রস্তুত পাইপলাইন

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আমদানিকৃত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহের জন্য মহেশখালী-ঢাকা (ভায়া চট্টগ্রাম) পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। পাইপলাইন যে কোনো দিন চালু করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে বলে বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব নাজমুল আহসান।

৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের এ পাইপলাইনে দৈনিক ৮শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এখন ঢাকা অঞ্চলের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে সরবরাহের বিষয়টি। জ্বালানি বিভাগ এ পাইপলাইনটিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য স্বস্তিজনক মনে করছে। এখন চাহিদা বেড়ে গেলেই সরবরাহ বাড়ানো যাবে। অতীতে অনেক সময় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গ্যাস সংকট হতো। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরেই রেশনিং করা হতো গ্যাস সরবরাহ। বিশেষ করে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো পিক আওয়ারে বন্ধ রাখা হতো। তবে হতাশার খবর হচ্ছে ঢাকা সিটির আশপাশের পুরনো বিতরণ পাইপলাইন এ চাপ নিতে কতটা সক্ষম, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যে কারণে ধীরে ধীরে চাপ বাড়িয়ে পরীক্ষা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য মহেশখালীতে দু’টি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপন করা হয়েছে অনেক আগেই। ইউনিট দু’টি দৈনিক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সঞ্চালনে সক্ষম। এখানে জাহাজে করে এলএনজি আমদানি করে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করা হবে। সেই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হবে।

২০১৭ সালে কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য চুক্তি করে সরকার। ১৫ বছর মেয়াদের এ চুক্তির আওতায় বছরে ১৮ লাখ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। চুক্তির আওতায় ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম কার্গো চালান বাংলাদেশ রিসিভ করে। অন্যদিকে ২০১৮ সালে ওমান থেকে এলএনজি আমদানির পৃথক চুক্তি করা হয়। এ চুক্তিও ১৫ বছরের, তবে আমদানির পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০ সালে সরকার স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য ১৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুস্বাক্ষর করা হয়েছে।

ভাসমান টার্মিনালের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মাতারবাড়িতে ল্যান্ড বেজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এখানে থাকছে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টোরেজ ট্যাঙ্ক। ৪৩ হেক্টর জুড়ে থাকছে ট্যাঙ্ক ইয়ার্ড। মংলায় সমীক্ষাধীন টার্মিনালটি স্থাপন সম্ভব না হলে মাতারবাড়ির ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনাধীন। মাতারবাড়ি এলএনজি টার্মিনালের জন্য দরপত্র আহ্ববান করা হলে ১২টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

মংলায় একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের বিষয়ে প্রাক সমীক্ষা চলমান রয়েছে। তবে এখানে নাব্যতা সংকট থাকায় বড় ট্যাঙ্কার ঢুকতে পারবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়ানো অর্থনৈতিকভাবে কতটা লাভজনক হবে সেসব বিষয় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে উড়িষ্যা থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনাধীন।

প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। প্রযুক্তির মাধ্যমে শীতল করে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে তরলে পরিণত হয়। তখন তাকে বলা হয় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি। দেশে গ্যাসের মজুত কমে আসায় বিকল্প হিসেবে এলএনজি আমদানির উদ্যাগ নেয় সরকার। এতে চট্টগ্রাম ও ঢাকার শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট কমে আসবে বলে আশা করছে জ্বালানি বিভাগ।