উভয় সংকটে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন  

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনার প্রভাবে দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এতে পূর্ব নির্ধারিত ক্রয়াদেশ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন)।

একদিকে চাহিদা কমে যাওয়ায় স্টোরেজে জমে আছে তেল, অন্যদিকে আগে থেকেই বিদেশ থেকে আমদানির উদ্দেশ্যে যেসব তেল কেনা হয়েছে সে সব জাহাজ একের পর এক বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় এসে অপেক্ষা করছে। ফলে অপেক্ষমাণ জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে না পারায় বিপুল পরিমাণ ডলার গুনতে হবে বাংলাদেশকে।

বিজ্ঞাপন

বিপিসি জানিয়েছে, রিজার্ভ ট্যাংক খালি না হওয়ায় গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে আছে ৭টি বিদেশি তেলবাহী জাহাজ। আরও দুটি জাহাজ চলতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে। পরবর্তী সময়েও যেসব তেলের অর্ডার দেওয়া হয়েছে বা কিনে রাখা হয়েছে সেগুলো আসতে থাকবে। ফলে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তেল খালাস করতে না পারলে প্রতিদিনের জাহাজ ভাড়ার ডেমারেজ হিসেবে বিশাল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে বিপিসির।

বিপিসি জানিয়েছে, ৩০ হাজার মেট্রিক টনের প্রতিটি জাহাজের ভাড়া গড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের বাইরে প্রতিদিন অবস্থানের জন্য একটি জাহাজকে ১৭ হাজার ডলার করে জরিমানা দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলের চাহিদা কমে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। আগে যেখানে দৈনিক জেট ফুয়েলের (বিমানের জ্বালানি) চাহিদা ছিলো গড়ে ১২’শ মেট্রিক টন। এখান সেখানে গড় চাহিদা ১৭০ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ডিজেলের চাহিদা নেমে এসেছে ৬ হাজার টনে। অন্য বছর এ সময় চাহিদা থাকতো গড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। অকটেন ৯’শ মেট্রিক টন থেকে নেমে এসেছে ২’শ মেট্রিক টনে।

পেট্রোলের চাহিদা ১১’শ টন থেকে সাড়ে ৪’শ টনে নেমে এসেছে। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের চাহিদা প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেলের বিক্রি হতো প্রায় ২০ হাজার মেট্রিকটন। সেই চাহিদা এখন এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। দৈনিক জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টনেরও কম।

বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, করোনা শুধু আমাদের নয় বিশ্বব্যাপী সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। সেখানে বিপিসিও কিছুটা সংকটে পড়েছে। তেলের আমদানি এবং সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়লে সংকট তৈরি হয়।

তিনি বলেন, এখন আমাদের আমদানি আগের মতো থাকলেও সরবরাহ বা তেল বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে সিভিল অ্যাভিয়েশন ব্যবসা প্রায় স্থবির হওয়ার কারণে জেট ফুয়েল বা বিমানের তেল বিক্রি অত্যধিক কমে গেছে। ফলে স্বাভাবিক তেল সরবরাহের প্রবাহ বিঘ্নিত হয়েছে।

তবে আশার খবর হচ্ছে সরকার অনেক দিন ধরেই তেলের রিজার্ভ সক্ষমতা বাড়ানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছে। তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা রিজার্ভ ট্যাংক বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া বিপিসিও কিছু রির্জাভ ট্যাংক বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। চলমান প্রকল্প শেষ হলে রিজার্ভ সক্ষমতা ৩৬ থেকে বেড়ে ৪৫ দিন হবে।