দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে জাতীয় কমিটি

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নাইকোর কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অনেক কম অংকের টাকা দাবি করা হয়েছে, আবার মামলা পরিচালনাতেও ইচ্ছাকৃত গাফিলতি করে কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। এসবের পেছনে বিভিন্ন সরকারের কমিশনভোগী ব্যক্তিরাই যে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন তাতে আমরা নিঃসন্দেহ।

তেল-গ্যাস-খণিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সোমবার (৪ মে) এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে তারা বলেন, নাইকো সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আদালতের (ইকসিড) রায় সম্পর্কে সরকারি ভাষ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, ক্ষতিপূরণের অর্থ আমাদের প্রাপ্য থেকে অনেক কম। যাই হোক, এ মামলার প্রক্রিয়ায় নাইকো দুর্নীতির সাথে জড়িত হিসেবে বিভিন্ন আমলে জ্বালানি সচিব, বর্তমান জ্বালানি উপদেষ্টাসহ অনেকের নাম এসেছে। এখন প্রয়োজন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শেভরনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে কারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, তাও প্রকাশ করা দরকার।

টেংরাটিলা নামে পরিচিত ছাতক গ্যাসফিল্ডে ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন পরপর দু’টো বিস্ফোরণ ঘটে। এ গ্যাসফিল্ড নিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর সাথে চুক্তির প্রক্রিয়াটিই ছিল বেআইনি ও দুর্নীতিযুক্ত, তাদের অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার জন্যই এ ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটেছিল। পুরো গ্যাসক্ষেত্র নষ্ট হবার কারণে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন মতে ৩০৫.৫ বিসিএফ আর বাপেক্স-নাইকোর রিপোর্ট মতে ২৬৮ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস চিরতরে হারাবে বাংলাদেশ। এ পরিমাণ গ্যাসের তৎকালীন আন্তর্জাতিক বাজার দর এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ক্ষতি পরিমাপ করে ক্ষতিপূরণ দাবি করার জন্য আমরা বরাবর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। অথচ ক্ষতিপূরণ মামলায় বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে এর ২৫ ভাগের এক ভাগেরও কম, বিবৃতিতে বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

এতে আরো বলা হয়, উপরন্তু সেই মামলায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রদানে একের পর এক গাফিলতির কারণে কানাডার আদালতে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও বহু বছর নাইকো বাংলাদেশের কাছে তার দায় পুরোপুরি অস্বীকার করেছে এবং উল্টো অর্থ দাবি করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অক্সিডেন্টাল কোম্পানির অধীনে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন সিলেটের ১৪ নম্বর ব্লকের সুরমা বেসিনে মাগুড়ছড়ায় গ্যাস কূপ খননকালে ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে তদন্ত কমিটির রক্ষণশীল হিসাবেও গ্যাস সম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৪৫ বিসিএফ বা বিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া পরিবেশের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদের এবং পুরোটা পরিমাপযোগ্য নয়। ১৯৯৯ সালে ইউনোক্যাল নামে আরেকটি মার্কিন কোম্পানির সাথে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম বিনিময় করে অক্সিডেন্টাল চলে যায়। মাগুড়ছড়ার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো ফয়সালা না করেই পরবর্তীকালে ইউনোক্যালের ব্যবসা গ্রহণ করেছে আরেকটি মার্কিন কোম্পানি শেভরন। এখন এ কোম্পানির কাছ থেকেই আমাদের পাওনা আদায় করতে হবে।

গড় হিসাব বিবেচনা করলে মাগুড়ছড়া ও ছাতক টেংরাটিলার বিস্ফোরণগুলোতে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত প্রমাণিত সর্বমোট গ্যাস মজুতের মধ্যে কমপক্ষে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ধ্বংস হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের গড় দাম বিবেচনায় মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস সম্পদসহ ক্ষতির হিসাবে মার্কিন ও কানাডার কোম্পানির কাছে আমাদের পাওনা দাঁড়ায় কমপক্ষে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ এসব কোম্পানি থেকে আদায় করতে হবে অথবা সমপরিমাণ গ্যাস সম্পদ যোগান দিতে তাদের বাধ্য করতে হবে, উল্লেখ রয়েছে বিবৃতিতে।
এতে আরো বলা হয়, মার্কিন কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে পাওনা বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক এবং আওয়ামী লীগ কোনো সরকারই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উল্টো এখনও তাদের নানা রকম ছাড়, ভর্তুকি ও সুবিধা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ২০১০ সালে দায়মুক্তি আইনের আড়ালে যেসব দুর্নীতিমূলক জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি অব্যাহত রাখা হয়েছে, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরও বিচার দেশের মাটিতে হতে হবে। এ বিচারের কাজ অগ্রসর করার জন্য এ খাতে বিভিন্ন সরকারের আমলে সংঘটিত সব দুর্নীতি অনিয়ম ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির ওপর আমরা একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাই। সরকার এ বিষয়ে গাফিলতি করলে নাগরিকদের পক্ষ থেকেই এ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে।