বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলে ক্ষুব্ধ গ্রাহক, সমন্বয় জুনে
মার্চের মাঝামাঝি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন মিরপুরের বাসিন্দা সুমন মিয়া। এরপর লকডাউন শুরু হয়ে গেলে আর ঢাকায় ফেরা হয়নি তার।
তার বাসায় মার্চ মাসের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৭৫৫ টাকা, আর এপ্রিলে বিল এসেছে ১২১৫ টাকা। অথচ এপ্রিলে একদিনের জন্যও বাসায় লাইট ও ফ্যান চলেনি, বন্ধ রয়েছে ফ্রিজও।
৭৭ সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা ফারুক মিয়ার বাসার বিদ্যুৎ বিল ২ থেকে ৩ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তার বাসায় এবার বিল পাঠানো হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। আবার ভবনের মাদার মিটারের (পানির মোটরের বিদ্যুৎ সরবরাহের মিটার) বিল আড়াই থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা আসে। এপ্রিলে মাদার মিটারের বিল এসেছে এগারো হাজার টাকা।
এমন ভুতুড়ে বিলের যন্ত্রণায় বিদ্যুতের গ্রাহকরা। অধিকাংশ গ্রাহক বাড়তি বিলের অভিযোগ করেছেন। এই বিল নিয়ে তারা মহাচিন্তায় রয়েছেন।
ফারুক মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভুতুড়ে বিলের বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা বলেছে— এবার বেশি দিলেও পরে সমন্বয় করে দেওয়া হবে। বাসায় গিয়ে মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব হয়নি তাই বিল একটু বেশি এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বুঝলাম তারা সমন্বয় করে দেবে। কিন্তু আমরা এই করোনার সময়ে এত টাকা কোথায় পাব? আর যদি এখন বিল না দেই তাহলে একসঙ্গে জমে গেলে তখন কী হবে? শুনেছি মার্চ, এপ্র্রিল ও মে মাসের বিল জরিমানা ছাড়া জুনে জমা দেওয়া যাবে। কিন্তু একসঙ্গে এত টাকা দেওয়া অনেকের জন্য কষ্টকর হবে। আবার না দিতে পারলে জুনে তারা লাইন কাটা শুরু করবে। উভয় সংকটের মধ্যে রয়েছি।
অন্যদিকে সুমন মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমার বাসা পুরোপুরি তালাবদ্ধ, প্রায় দ্বিগুণ বিল আসে কী করে? শুনতেছি মিটার রিডিং না দেখে আন্দাজে বিল দেওয়া হয়েছে। কারো কাছ থেকে তো শুনলাম না যে, কম বিল এসেছে। গ্রাহকের পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমার মনে হয় তারা ইচ্ছা করেই এই কাজ করেছে, যাতে এই ফান্ড ব্যাংকে রেখে মুনাফা লুটতে পারে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের একটি লিয়াজো থাকে। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কাটতে সহায়ক হয়। আপনি তাদের নন অপরেশনাল আয় দেখলেই বুঝতে পারবেন ঘটনাটি কী ঘটেছে।
বিদ্যুতের এই বিল নিয়ে এক সভায় খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বিলের বিষয়ে গ্রাহকদের আগে জানানো উচিত ছিল। তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, কাজটি মোটেই যথাযথ হয়নি।
এরপর বিতরণ কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়ে বিবৃতি দিয়ে নিজের দায় সারার চেষ্টা করেছে। সবচেয়ে বড় বিতরণ প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন বলেছেন, মহামারী করোনার বিস্তার রোধে বর্তমানে অনেক গ্রাহকের আঙিনায় সরেজমিন গিয়ে মিটার রিডিং নিয়ে বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করা হচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ও বিদ্যুৎ কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় গ্রাহকদের আগের মাস অথবা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের বিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাক্বলিত বিল দেওয়া হচ্ছে।
করোনার কারণে প্রাক্কলিত বিল দেওয়া হয়েছে। প্রাক্কলিত বিলের সঙ্গে গ্রাহকের প্রকৃত বিদ্যুৎ ব্যবহার কম-বেশি অথবা অসামঞ্জস্য হলে পরবর্তী মাসের বিলের সঙ্গে তা সমন্বয় করা হবে। কোন অবস্থাতেই ব্যবহৃত বিদ্যুতের বেশি বিল গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে না, যোগ করেন আরইবি চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেছেন, সরকার ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে গ্রাহকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিলের বিলম্ব মাশুল মওকুফ করেছে। ফলে কোন প্রকার বিলম্ব মাশুল ছাড়াই ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল ২০২০-এর বিল আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে।
প্রায় অভিন্ন বিবৃতি দিয়েছেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান। তিনি বলেন, করোনার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিগত কয়েক মাসের বিলে সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি গড় বিল করা হয়েছে। এতে করে কারো প্রকৃত ব্যবহারের চেয়ে কমবেশি হতে পারে। আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি পরবর্তী মাসের সঙ্গে সমন্বয় করার। আর কোনো গ্রাহক যদি খুব বেশি অতিরিক্ত মনে করেন তাহলে নিকটস্থ এনওসিএস-এ যোগাযোগ করলে বিষয়টি সুরাহা করা হবে।