গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের দাম কমানো জরুরি: ক্যাব
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অযৌক্তিক ব্যয় যৌক্তিক করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
মঙ্গলবার (৯ জুন) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
আবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশ এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণে কবলিত। দেশবাসী গৃহবন্দী। ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ। অর্থনৈতিক সকল কর্মকাণ্ড স্তব্ধ। বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ। জনবল ছাঁটাই চলছে। এ অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা সরকারের পক্ষে কতদিন দেয়া সম্ভব হবে তাও ভাবার বিষয়। টাকা ছাপিয়ে কেবলমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেয়া কোন সমাধান নয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রাক্কলিত রাজস্ব আহরণ অসম্ভব। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় চরমভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ ধস নামবে। উন্নয়ন খাত কোন অর্থ পাবে না। এমন অবস্থায় রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব চাহিদা ব্যাপক হারে কমানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকার প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। কৃষি ও শিল্পসহ উৎপাদন খাত আর্থিক প্রণোদনা পাবে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণকালে এবং পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি সচল রাখার লক্ষ্যে সরকারের উন্নয়ন পলিসিতে ব্যাপক রদবদলের প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান উন্নয়ন নীতি ও কৌশল নিয়ে সরকারের পক্ষে এখন আর আগানো সম্ভব নয়, তা আর বলার বা ভাবার অপেক্ষায় নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তথা ১৯৭১ সালে এবং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অপেক্ষা করোনা বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে আরও অনেক বেশি বিপর্যস্ত। এমন আশঙ্কায় আমরা ভোক্তারা উদ্বিগ্ন। তবে কৃষি এবং কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হবে না। সেজন্য বিপণন ব্যবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা দরকার।
আবেদনে আরও বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সরকারের নিকট আর্থিক ঋণ বা অনুদান চাচ্ছে। রাজস্ব ব্যয় বা চাহিদা কমানোর কোন পরিকল্পনা নিচ্ছে না। সরকার যেসব খাত থেকে রাজস্ব আহরণ করে, সেসব খাত এখন অব্যাহত রাজস্ব ঘাটতির শিকার। সে ঘাটতি মোকাবিলায় তারা এখন সরকারেরই মুখাপেক্ষী। ফলে সরকার ক্রমাগত আর্থিক চাপ বৃদ্ধির শিকার।
ধারণা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত করোনা মহামারিতে চলতি বছরে যে রাজস্ব ঘাটতির শিকার হবে, তার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার কম হবে না। অনুরূপ ক্ষয়-ক্ষতি গ্যাস খাতেও হবে। উভয় ঘাটতি বিদ্যমান অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস ও ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হলে বিদ্যমান ও করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতি একদিকে যেমন মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে উভয়খাতে তেমন ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে তরল জ্বালানির আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে সে দরপতন সমন্বয় করে তরল জ্বালানির মূল্যহার যেমন কমানো যায়, তেমন জ্বালানি খাতে করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতিও সমন্বয় করা সম্ভব।
তাই আলোচ্য প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস এবং ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা ও তরল জ্বালানির দাম কমানো এখন জরুরি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে। ভোক্তার ভোগ ব্যয় এখন খুবই সীমিত। ফলে সরকারের রাজস্ব আসছে না। উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্যহার যদি না কমে, তাহলে ভোক্তার ভোগ ব্যয়বৃদ্ধি পাবে না। ফলে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি- এসব প্রবাহ বৃদ্ধি না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বাড়বে না। তাই সর্বাগ্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমিয়ে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পণ্য ও সেবার দাম কমাতে হবে।