সরকারি এলপিজির দাম কমানোর সিদ্ধান্ত

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সরকারি এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) বিপণন কোম্পানি বোতল প্রতি এক’শ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব শিগগিরই গেজেট প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে। ফলে এখন থেকে ১২ কেজি ওজনের সরকারি এলপিজির গ্যাসের সিলিন্ডার ৬০০ টাকায় পাওয়া যাবে।

যদিও বিশাল পরিমাণ চাহিদার বিপরীতে সরকারি এলপিজি উৎপাদন হয় খুবই সামান্য। দেশের এলপিজির যে চাহিদা তার মাত্র দুই শতাংশ উৎপাদন করে সরকারি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জুলাই এলপিজির দাম কমানো সংক্রান্ত এক বৈঠক হয় বিপিসির কার্যালয়ে। সেখানে আগে থেকেই কমিটির করা সুপারিশ বাস্তবায়নে সর্বোসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। আর্ন্তজাতিক বাজারে এলপিজির উপকরণের দাম কমেছে আমরাও দাম কমিয়েছি। যাতে মানুষ সুফল পায়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে দ্রুত বাড়ছে এলপি গ্যাসের ব্যবহার। আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এলপি গ্যাসেই বিকল্প ভরসা হয়ে উঠেছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে দেশে এলপিজি ব্যবহৃত হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। ৯ বছরের ব্যবধানে এই চাহিদা ৭ লাখ ১৩ হাজার মে. টন ছাড়িয়ে গেছে। যার মধ্যে মাত্র বছরে ২০ হাজার টন উৎপাদন সক্ষম সরকারি এলপিজি কোম্পানির। ২০৪১ সালে এলপিজির চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব মুহা শের আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত ১০ বছরে ব্যাপক আকারে এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি হারে (৯২ শতাংশ) বেড়েছে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে। আর গড় ৩৫ শতাংশ হারে বেড়েছে এলপিজি ব্যবহার। ৫৬টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি কোম্পানি উৎপাদনে রয়েছে। আমরা মনে করছি যে সব কোম্পানি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো যদি উৎপাদনে আসে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আর কোনো সংকট হবে না।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে বাংলাদেশে গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট থেকে এলপিজি উৎপাদন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমদানিকৃত ক্রড অয়েল থেকে সামান্য পরিমাণে এলপিজি পাওয়া যায়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কনডেনসেট ও ক্রড অয়েল থেকে প্রাপ্ত এলপিজির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৬৯৭ মে. টন। একই সময়ে আমদানি করা হয়েছে ৬ লাখ ৯৪ হাজার মে. টন। বাংলাদেশের দু’টি কোম্পানি ত্রিপুরাতে এলপিজি রপ্তানির জন্য সম্প্রতি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। যার প্রধান উৎস হবে আমদানি।

বিষয়টি নিয়ে সরকারি এলপিজি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান বলেছেন, সরকারে সিদ্ধান্ত আছে এলপিজির বাজার সম্প্রসারণের। ইস্টার্ন রিফাইনারি দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করা হলে তখন এলপিজি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে মহেশখালীতে এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অদূর ভবিষতে সেটা বাস্তবায়ন হলে সরকারি এলপিজির উৎপাদন সরবরাহ অনেক বাড়বে।


অভিযোগ রয়েছে গ্রাহক বা এজেন্টরা চাইলেও সরকারি এলপিজি সিল্ডিন্ডার খুব সহজে পায় না। ফলে বেসরকারি এলপিজির দখলে দেশের বাজার। আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ এবং সরকারি উৎপাদন স্বল্পতায় বেসরকারি এলপিজি কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করার। আবাসিকখাতে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হলেও এলপিজির বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখার সরকারি নির্দেশও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ওজনে কম দেওয়া এবং টুইনিং (বোতলে পানি-হাওয়া ইত্যাদি ভরা) করার বিষয়টি মনিটরিং হচ্ছে না, ঠকছেন গ্রাহকরা। লাভবান হচ্ছে উৎপাদক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা।


বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়ে যানবাহন ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত এ গ্যাসের দাম বাড়িয়েছেন দেশীয় বিক্রেতারা। অথচ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বর্ধিত মূল্যের গ্যাস দেশে আসতে অন্তত এক মাস সময় লাগার কথা। সুযোগ পেয়েই আগের দামে কেনা এলপিজি ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে বিক্রি করছেন আমদানিকারক ও বিক্রেতারা।

দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ১২ ও সাড়ে ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। খোজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো দেশে বেসরকারি ১২ কেজির এলপি সিলিন্ডার স্থানভেদে ৭৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জানায়, মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নীতিমালা প্রণীত হয়নি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কয়েকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। তবে গ্রাহকদের স্বার্থে এবং এলপিজি ব্যবসায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। তাই প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো এলপিজিরও মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, এলপিজি একটি আমদানি নির্ভর পণ্য এবং এর আন্তর্জাতিক বাজার দ্রুতই ওঠানামা করে। তাই কোন ফর্মুলায় এটি নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে।