বিশ্ববিদ্যালয় একক ভর্তি, নতুন নিয়মের খোঁজে কমিশন
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একক ভর্তি পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এরপর বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছ পরীক্ষা আয়োজনে নিয়ম জারি করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তবে দেশের চার বিশ্ববিদ্যালয়— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত না হওয়ায় বাঁধে বিপত্তি। এ নিয়ে কয়েক দফায় উপাচার্যদের সাথে আলোচনা ও ইউজিসি-মন্ত্রণালয় বৈঠক করলেও সুফল মেলেনি।
সম্প্রতি দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে নতুন পদ্ধতি খুঁজতে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরী কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটিকে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী ও ইউজিসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'মন্ত্রণালয় থেকে একক ভর্তি পরীক্ষার জন্য নতুন প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা নতুন কমিটি করে দিয়েছি। তারা আলাপ-আলোচনা করে যে প্রস্তাব করবে তা আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।'
জানা যায়, গত বছরের এপ্রিলে একক ভর্তি পরীক্ষার গাইডলাইনের খসড়া প্রস্তুতের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এরপর গত ৩১ অক্টোবর একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে সম্মতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত ওই অধ্যাদেশের বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরে নাকচ করে, পুনরায় নতুন করে প্রস্তাবনা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
গত বছরের ২৭ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রোখছানা বেগমের সই করা এক চিঠিতে ইউজিসির পূর্বের খসড়া অধ্যাদেশকে ‘গ্রহনযোগ্য নয়’ বলে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠিত ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের’ প্রধানের দায়িত্বে থাকা সমীচীন হবে না; বলে মনে করে মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্যের অভিপ্রায় অনুসারে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য গত ১৫ এপ্রিল ইউজিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে ইউজিসি কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার কথা। কিন্তু তা না করে ইউজিসি সরাসরি অধ্যাদেশের খসড়া প্রেরণ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ ২০২৩’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে। জাতীয় সংসদ অধিবেশন না থাকা অর্থাৎ বিলুপ্ত থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা বিবেচনায় অধ্যাদেশ জারি করে থাকেন। বর্তমানে দেশে কোনো জরুরি অবস্থা বিদ্যমান নেই বিধায় এক্ষেত্রে অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
এরপরই চিঠিতে ইউজিসির ক্ষমতার বিষয়টি ইঙ্গিত করে মন্ত্রণালয়। চিঠির ক্রমিক নম্বর ২ (গ)-তে বলা হয়, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ধারা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি প্রস্তাবিত কর্তৃপক্ষ স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, যার চেয়ারম্যান হবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান। যিনি ইতিমধ্যেই একটি বিধিবদ্ধ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত। এ প্রেক্ষিতে তার আরেকটি কর্তৃপক্ষের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা সমীচীন হবে না। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ, ১৯৭৩’ বলে গঠিত একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। একটি বিধিবদ্ধ সংস্থার অধীনে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আরেকটি কর্তৃপক্ষ থাকতে পারে না।
সূত্র বলছে, ইউজিসির পাঠানো প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের কাঠামো, এর চেয়ারম্যান পদ ও ব্যয়ের ক্ষমতাসহ বেশকিছু বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের জোর আপত্তি থাকায় তার সম্মতি দেয়া হয়নি। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন একটি নীতিমালা তৈরি করতে পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। ইউজিসি পুনরায় প্রস্তাবনা পাঠালে মন্ত্রণালয় সেটি যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি সেটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করলে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী বলেন, 'এই সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো পাইনি। বিভিন্ন দিক থেকে ফোন পেয়ে আমি ইউজিসি চেয়ারম্যান মহোদয়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির একটি নীতিমালা করা হয়েছিলো, মিনিস্ট্রি সেটা ফেরত পাঠিয়েছে। সেই ফাইলটি দেখার জন্য একটা কমিটিতে রাখা হয়েছে। ব্যাস, এতটুকুই জানি।'