ঢাকা-৩: ড্রাইভিং সিটে আ'লীগ, ব্যাকফুটে বিএনপি



মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উপরে: আ'লীগের পোস্টার প্রচারণা, নিচে: বিএনপির অফিস খালি, ছবি: বার্তা২৪

উপরে: আ'লীগের পোস্টার প্রচারণা, নিচে: বিএনপির অফিস খালি, ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে চলছে নির্বাচনী হিসেব নিকেশ। কোন আসনে কোন দলের প্রার্থী এগিয়ে, আবার এসব সমীকরণ ভোটের আগে কতটুকুই বা প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের নানা জল্পনা কল্পনা ও নির্বাচনী আড্ডার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের উত্তাপ ছড়াচ্ছে সব জায়গায়।

যেহেতু বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল। তাই তাদের প্রার্থীদেরকে নিয়েই চলে সারা দেশে নির্বাচনী আলোচনা। তবে ১১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে রাজনীতির মাঠের হিসাব নিকাশ আরও চাঙ্গা হয়েছে।

আর এ রকম রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ চলছে ঢাকা-৩ আসনেও। এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী লড়ছেন ভোটের ময়দানে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন বর্তমান এমপি বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে লড়ছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। 

নির্বাচনী মাঠে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিকে নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা ও হিসাব নিকাশ। শেষ পর্যন্ত ভোট যুদ্ধে শেষ হাসি কে হাসবে তা নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক।

নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে ঢাকা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। সেই তুলনায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এখনো ঢাকা-৩ আসনে বিএনপিকে সেভাবে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামাতে পারেনি। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা সেটাই প্রমাণ করে। আ’লীগ প্রচারণা শুরু করলেও বিএনপিকে এখনও এলাকাগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সে কারণে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা থেকে শুরু করে বিপুর থেকে সব দিকে পিছিয়ে পড়ছে গয়েশ্বর চন্দ্র। সব কিছু মিলিয়ে ঢাকা-৩ আসনে এখন পর্যন্ত ড্রাইভিং সিটে রয়েছে আওয়ামী লীগ। ব্যাকফুটে বিএনপি।

তবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত একই হিসাব থাকছে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সন্দেহ থাকলেও আপাতত বলা যাচ্ছে ঢাকা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছে।

বুধবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা-৩ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা-৩ আসন আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই অংশে ভাগ থাকলেও দলীয় নেতাদের মধ্যে কোনো অন্তর্কোন্দল নেই। এই আসনে নসরুল হামিদকে নির্বাচনে জয়ী করতে নিজেদের অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করছেন। তাছাড়া ঢাকা-৩ আসনে গত কয়েক বছর ধরে নসরুল হামিদ বিপু অনেক উন্নয়নমুখী কাজ করছেন। ফলে একটি সত্য এবং কর্মশীল জনপ্রতিনিধি ইমেজ গড়ে উঠছে স্থানীয় ভোটার মাঝে। তাই এই আসনে তাকে শক্ত চ্যালেঞ্জ করার প্রার্থী নেই বলেই তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে আগানগর ইউনিয়নের যুবলীগের সহ-সভাপতি ইয়াসিন মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঢাকা-৩ আসন আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। নসরুল হামিদ বিপুকে আবারও সংসদ সদস্য করতে বদ্ধপরিকর ঢাকা-৩ আসনের স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রয়াসের প্রতিচ্ছবি ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে দেখা যাচ্ছে। অন্য যেকোনো দলের প্রার্থী থেকে ঢাকা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অনেক এগিয়ে।

এদিকে, ঢাকা-৩ আসন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসন থেকে তাদের দলীয় প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। দলের বিগত সংসদ সদস্য আমান উল্লাহ আমান ঢাকা-২ আসনে চলে যাওয়ার পর স্থানীয় বিএনপিতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক নেই। তাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা আলাপ আলোচনাও নাকি করতে চান না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আর এ সব কারণেই ঢাকা-৩ আসনে নির্বাচনের মাঠে ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। দ্রুত সময়ের মধ্যে দলীয় সমস্যা সমাধান করা না হলে ঢাকা-৩ আসনে জয়ী হওয়া বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না বলেও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা আশংকা করছেন।

এ বিষয়ে জিঞ্জিরা ইউনিয়ন বিএনপির আবুল বাসার নিজের দলীয় পদ না প্রকাশ করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা চলছে কিছুটা ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারাতে হলে স্লো কাজে কাজ হবে না। দ্রুত এবং শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে এগোতে হবে, যা এখনো ঢাকা-৩ আসন বিএনপি করতে পারছে না।

তিনি বলেন, এর জন্য কিছুটা হলেও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দায়ী। কেননা তিনি ঠিক মতো নির্বাচনী এলাকায় আসছেন না, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতও করছেন না। তাহলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা উৎসাহ পাবে কিভাবে? আর এই কারণে বিএনপির অনেক ওয়ার্ড অফিস বন্ধ রয়েছে।

   

রাত পোহালেই ৮৭ উপজেলায় নির্বাচন



জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাত পোহালেই ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (২৯ মে) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোট চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত। ভোটের মাঠে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ও একই হারে ভোট পড়েছে। এসময় গড়ে মোট ভোটারের ৩৬ দশমিক এক শতাংশ ভোট পড়েছিলো।

তৃতীয় ধাপে মোট ১১২ উপজেলায় তফশিল ঘোষণা করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এই ধাপে পরবর্তীতে মামলা ও ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ২৫ উপজেলা ভোট স্থগিত করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তারমধ্যে রিমালের জন্য ২২টি উপজেলা ও মামলা ও পার্বত্য এলাকায় বিশেষ অভিযানের জন্য তিনটি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করে ইসি।

এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, কেউ যদি শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে উপজেলাগুলোয় নির্বাচন বন্ধ আছে সেগুলোর ভোট করে হবে তা আবহাওয়া কবে ভালো হবে, সামনে ঈদ, স্থানীয় প্রশাসনের মতামত ইত্যাদি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ভোট আছে, সেদিনও হতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন মতামতের উপর নির্ভর করবে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপের ৮৭ উপজেলায় তিন পদে এক হাজার ১১শত ৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তারমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪১১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২৩ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সেই সাথে তিন পদে ১২জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছে।

ইসি জানায়, ৮৭ উপজেলার মধ্যে ১৭ উপজেয়ায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। বাকি ৭০ উপজেলায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। যেসব এলাকায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা ওইসব এলাকায় একটি করে কারিগরি টিম গঠন করেছে ইসি।

ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা

এদিকে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ও সাধারণ কেন্দ্রে বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসি। সেই হিসেবে সাধারণ কেন্দ্রে ১৭জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ বা ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া দুর্গম এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ বা ২১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ইসি। উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন।

৮৭ উপজেলায় মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি মোতায়েন থাকবে ৪৫৮ প্লাটুন। ভোটকেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন থাকবে ৪৭ হাজার ৮২৯ জন। স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে পুলিশ থাকবে ১৯ হাজার ৫৭ জন। র‍্যাব থাকবে ২৭৬৮ জন ও আনসার সদস্য থাকবে এক লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ জন।

আচরণবিধি মানাতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ

তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট গ্রহণের তিন দিন পূর্ব পর্যন্ত আচরণ বিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোট গ্রহণের তিনদিন পূর্ব থেকে ভোট গ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত প্রতি তিন ইউনিয়নের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ভোট গ্রহণের দুইদিন পূর্ব থেকে ভোট গ্রহণের দুইদিন পর পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।

ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা

৮৭ উপজেলায় মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৬টি। ভোট কক্ষ রয়েছে ৯১ হাজার ৫৮৯। অস্থায়ী ভোট কক্ষ রয়েছে আট হাজার ৮৪১টি। এই ধাপের মোট ভোটার তিন কোটি ৫২ লাখ চার হাজার ৭৪৮ জন। তারমধে পুরুষ ভোটার রয়েছেন এক কোটি ৭৯ লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৪ জন। নারী ভোটার রয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন ও হিজড়া ভোটার রয়েছেন ২৩৭ জন।

দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে চার ধাপে ৪৭৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এর মধ্য কিছু উপজেলায় তফশিল ঘোষণায় মামলা জটিলতা ও বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ১৯টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের সময় হয়নি, পরবর্তীতে সে সব পরিষদে ভোট নেওয়া হবে জানান সংস্থাটি।

এদিকে ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট সম্পন্ন হয়েছে গত ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপের ভোট সম্পন্ন হয়েছে ২১ মে, ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।

;

সংসদ নির্বাচনে হাঁকডাক দিলেও উপজেলা নির্বাচনে মাঠে নেই তারা



জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্য হাঁকডাক দিয়ে ২৮টি রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।

নির্বাচনের ফলাফলে বেশির ভাগ দলের প্রার্থী ও দলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এই তালিকায় রয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরাও।

জাতীয় নির্বাচনের চার মাস পর অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের বড় নির্বাচন উপজেলা পরিষদ। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতীকে অংশগ্রহণ না করলেও দলের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে ভোটের মাঠে লড়ছেন।

এবারের ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ কয়েকটি দল সরাসরি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। সংসদ নির্বাচনে বেশ ঘটা করে অংশ নিলেও ভোটপ্রাপ্তিতে তলানিতে থাকার পর পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি সাংগঠনিক তৎপরতাহীন হয়ে পড়ে।

উপজেলা নির্বাচন নিয়েও তাদের তোড়জোড় নেই। কোথাও নেই তাদের দলীয় প্রতীকের প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফলে ভোটে যেমন কমেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তেমনি কমেছে ভোট পড়ার হার। আবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় দুই দফার নির্বাচনে ৪৯ জন ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, এবারের উপজেলা নির্বাচন চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তবে কিছু উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনে নামসর্বস্ব দল আলোচনায় থাকলেও বেশির ভাগ দলের আলোচনা নেই উপজেলা নির্বাচনে।

এবারের উপজেলা নির্বাচনে নিবন্ধিত কোনো দলই দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নামমাত্র অংশ নিয়েছে নির্বাচনে। নির্বাচনের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলটির ভোটব্যাংকও তলানিতে। সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর আরো কোণঠাসা দলটির অবস্থান।

২০১৫ সালে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন বিএনপির এক সময়ের নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।

বিএনপি থেকে দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারকে নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর দলটির প্রথম কাউন্সিল হয়। নিজেদের ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১শ ৩৩টি আসনে প্রার্থী দিলেও কোনোটিতেই জয় পায়নি তৃণমূল বিএনপি। দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয় তখন। জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর চলতি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়নি দল ও দলের কোনো নেতাকর্মী।

উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি অংশ নেয়নি কেন জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান বার্তা২৪কমকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে বহিরাগত ও অযোগ্য লোক দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হয়ে টাকা-পয়সা লুট করে দলের ক্ষতি করছেন। নির্বাচনে দলের লোকজনকে নামিয়ে কোনো সহযোগিতা করেনিন। ফলে দলের নেতাকর্মীরা দলের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছেন। সাংগঠিকভাবে অগোছালো থাকায় তৃণমূল বিএনপি এইবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

নির্বাচন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে এই নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে দল গুছিয়ে আগামীতে নির্বাচনে যাবে দলটি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল আজিজ সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে আমাদের কোনো প্রার্থী আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেননি। দলের ভেতরে নেতাকর্মীরা হতাশা রয়েছেন। দলীয় ও নেতাকর্মীদের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা এবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। সামনে দলকে শক্তিশালী করে স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি।

এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহে উপজেলা নির্বাচনে কমেছে ভোটের হার। সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি বেশি থাকে। কিন্তু ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেখা যায়, প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে ভোটের হার গড়ে ৩৫ শতাংশ।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটের হার কমে যাওয়া উদ্বেগজনক। দিনে দিনে যেভাবে ভোটের হার কমছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে মানুষ। একপক্ষীয় ব্যবস্থায় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা চলে যাওয়ায় ভোটে আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে, তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মতো দল সংসদ নির্বাচনে আলোচনায় থাকায় ইসলামী ঐক্যজোট ও জাকের পার্টি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

ইসলামী ঐক্যজোটের প্রচার সম্পাদক আনছারুল হক ইমরান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। বিক্ষিপ্তভাবে দুই, একজন হয়ত স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে তৃণমূল থেকে জানা গেছে।

জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের দল এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি। একইসঙ্গে প্রথম দুই দফায় কোনো প্রার্থী দেয়নি। পরবর্তী দুইধাপে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে দেওয়া হয়নি।

এদিকে, মহাজোটে থাকা সরকারপন্থী দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি, জেপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি বিক্ষিপ্তভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। দলগুলো যেখানে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও ভোটব্যাংক রয়েছে, এমন জায়গা দেখে প্রার্থী দিয়েছে দলগুলো।

এর আগে ২০১৯ সালেও বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো স্থানীয় সরকারের নির্বাচন বর্জন করে। সেই সময় সরকার সমর্থিত একাধিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তারও আগে ২০১৪ সালে বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল স্থানীয় সরকারের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সেই নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল; তেমনি নির্বাচনে ভোটের হার ছিলও উল্লেখযোগ্য।

২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৬০ শতাংশের ওপরে। এবারের নির্বাচনে ভোটের হার ৩৫ শতাংশ।

;

উপজেলা নির্বাচন: চট্টগ্রামে শপথ নিলেন প্রথম ধাপের নির্বাচিতরা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে শপথ নিলেন প্রথম ধাপের নির্বাচিতরা

চট্টগ্রামে শপথ নিলেন প্রথম ধাপের নির্বাচিতরা

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা শপথ নিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৮ মে) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম নির্বাচিতদের শপথবাক্য পাঠ করান। এসময় চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, বান্দরবান জেলার সদর আলীকদম, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী, জুরাছড়ি, বরকল, ফেনী জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া, সুবর্ণচর, কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, মেঘনা, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা শপথ গ্রহণ করেন।

শপথ গ্রহণ শেষে বিভিন্ন উপজেলার নির্বাচিতদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিভাগীয় কমিশনার। পরে সার্কিট হাউসের বাইরে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নিজ নিজ উপজেলার নির্বাচিতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান রুহেল ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মিরসরাইয়ের নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন।

এ সময় এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, ‘জাতীয় সংসদের সবচেয়ে স্মার্ট এমপি মাহবুব উর রহমান রুহেল ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন। আমি তার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে স্মার্ট নেতার স্মার্ট মিরসরাই স্লোগানকে সামনে রেখে কাজ করে যেতে চাই। তার তত্ত্বাবধানে মিরসরাইকে একটি সমৃদ্ধ, আধুনিক, স্মার্ট, পরিবেশবান্ধব, শিল্পোন্নত ও সারাদেশের মধ্যে মডেল উপজেলায় রূপান্তরে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।’

সন্দ্বীপ উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সন্দ্বীপের যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যেসব সেক্টরে কাজ করার সুযোগ আছে নিজের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে কাজ করব। আমার রাজনৈতিক অভিভাবক এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার পরামর্শ নিয়ে উপজেলাব্যাপী অবকাঠামোসহ সকল ধরনের জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজ করে যাব।’

;

শপথ নিলেন রংপুরের ১৯ উপজেলার প্রতিনিধি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে রংপুর বিভাগের ১৯ উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা শপথ গ্রহণ করেছেন।

মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে তাদেরকে শপথবাক্য পাঠ করান বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন। এ সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফরসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শপথ গ্রহণ শেষে নব-নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মানুষের সেবা ও উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন ও মানুষের সেবা করা। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারলে অনেক অসাধ্য কাজও করা সাধন করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, আমরা ২০৪১ সালের স্বপ্ন দেখছি। বিদেশি কোনো রাষ্ট্র এসে এটি বাস্তবায়ন করে দিয়ে যাবে না। তারা শুধু বড় বড় পরামর্শ দিবে। দেশের উন্নয়ন আমাদেরকেই করতে হবে। সেই সক্ষমতা, দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ মে রংপুর বিভাগের ১৯ টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ১৯ জনসহ ৫৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হন

;