‘ত্যাগের’ পুরস্কার কি এবার পাচ্ছেন দিলীপ বড়ুয়া?
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারই সন্তান মাহবুব রহমান রুহেলকে। কিন্তু এলাকায় যোগাযোগ কম থাকায় রুহেলের বিষয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ। তারা নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে যতটা না রুহেলের কৃতিত্ব দেখছেন, তার চেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেখছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের। বলছেন, বাবার কারণেই মনোনয়ন পেয়েছেন রুহেল!
এমন পরিস্থিতিতে এই আসনে যোগ্য দাবিদার হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের শরিক দল সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে তার দল শরিক হওয়ার সুবাদে তাকে টেকনোক্র্যাট শিল্পমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর ক্রমেই মিরসরাইমুখী হতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি মন্ত্রী থাকার সময় নানা উন্নয়নমুখী কাজও করেন এই উপজেলায়। ফলে ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত দিলীপ বড়ুয়ার প্রতি একটা ‘সফট কর্নার’ আছে এই আসনের মানুষের। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একটা অংশের সঙ্গও তার রয়েছে গভীর যোগাযোগ। তিনি গত নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বারবারই ছেড়ে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগকে। এবার তার সেই ‘ত্যাগের’ মূল্যায়ন হওয়া উচিত বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগেরই একটা অংশের নেতা-কর্মীরা।
এরই মধ্যে নৌকা প্রতীকে এই আসনে নির্বাচন করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন দিলীপ বড়ুয়া। ফলে এই আসন নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বলা হচ্ছে, আসনটিতে এবার নিজেদের প্রার্থী নাও রাখতে পারে আওয়ামী লীগ, আসনটি ছেড়ে দিতে পারে শরিক দলের প্রার্থী দিলীপ বড়ুয়াকে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশের মতে, বাবার সূত্রে এই আসনে দীর্ঘকাল ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন রুহেল। দলীয় অনেক নিয়ম-কায়দাও ভেঙেছেন ইচ্ছামতো।
চট্টগ্রামের সব আসনেই অবশ্য আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তবে এটাও ঠিক, এই ১৬ আসনের মধ্যে কয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে পারে শরিক দলকে। এবার যেহেতু ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মতো ‘বড় নাম’ নির্বাচন করছেন না, তাই তার আসনটিও শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে কতটি আসন ছেড়ে দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
দলীয় সূত্র বলছে, দিলীপ বড়ুয়া এবারও এ আসনটি দাবি করেছেন। তিনি এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান।
দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রার্থী হলে কোনো আপত্তি ছিল না। তিনি যখন প্রার্থী হননি তখন আসনটি ছেড়ে দেয়া দরকার। আসনটি আমার প্রাপ্য।
দিলীপ বড়ুয়ার নামটি মিরসরাইয় আসনে জোরেশোরে আলোচনা হওয়ার আরও একটি কারণ আছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনও। এই নেতারও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা আছে। অতীতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতে হামলার শিকার হয়েছিলেন এই নেতাসহ বেশ কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ আছে। এখন রুহেলের পাশাপাশি গিয়াসও নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সেই দলাদলি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে শরিক দলের দিলীপ বড়ুয়াকে নৌকা প্রতিকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হলে, নেতাকর্মীদের মধ্যে হানাহানির সম্ভাবনা থাকবে না।
সেজন্য স্থানীয় নেতাদের একাংশও মনে করেন, যেহেতু ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নির্বাচন করছেন না, সমঝোতা হলে এই আসন দিলীপ বড়ুয়াকে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
এদিকে নির্বাচনে অংশ নিতে অনলাইনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছিলেন তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিবিদ নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। তরুণ এই রাজনীতিবিদ স্মার্ট সমৃদ্ধ আর উন্নত মিরসরাই গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন দীর্ঘদিন থেকে। এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন এলিট। নেতাকর্মীদের দুঃসসময়ে তিনি তাদের বাড়িতে ছুটে যান, সহযোগিতা করেন। তিনিও চেয়েছিলেন মিরসরাইয়ে নৌকার হয়ে লড়তে।
তবে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই উন্নত সমৃদ্ধশালী মিরসরাই গড়তে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ইচ্ছা থেকে তিনি আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।