চট্টগ্রামের ৭২ শতাংশ ভোটকেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তিন বছর আগে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হাবিবুর ইসলাম। গুরুতর আহত হয়ে এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান ওই শিক্ষার্থী। এর এক বছর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নলুয়া ইউনিয়নের মরফলার বোর্ড অফিস কেন্দ্রে ছুরিকাঘাতে নিহত হন মো. তাসিব নামের ১৩ বছরের এক কিশোর।

অতীতের দুই স্থানীয় নির্বাচনে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে আসন্ন ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ওই দুই ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুধু এই দুই ভোট কেন্দ্র নয়, এবার নগর ও উপজেলা মিলিয়ে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ৭২ শতাংশ ভোটকেন্দ্রই ‘ঝুকিপূর্ণ’র তালিকায় আছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের ২ হাজার ২৩টি ভোটকেন্দ্রে এবার ভোট হবে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫৯টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত এসব কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাতে নির্বাচনে আগাম নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া যায়। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আগের নির্বাচনে যেসব ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি, সংঘর্ষ হয়েছে সেই কেন্দ্রগুলো। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে; কেন্দ্রে ভোটার বেশি; ভোটকেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রার্থীর বাড়ি; কেন্দ্রে একাধিক প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করতে পারেন; কেন্দ্রটিতে সহজভাবে যাতায়াত করা যায় না এবং হেঁটে যেতে হয় এমন কেন্দ্রগুলোর জায়গা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ এই তালিকা করেছে। নগরের ৬টি আসনের ৬৬০টি কেন্দ্রের দায়িত্ব থাকবেন সিএমপির সদস্যরা। অন্যদিকে উপজেলার ১০টি আসনের ১ হাজার ৩৬৩টি কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করবেন জেলা পুলিশের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

সিএমপি ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে ২ জন অস্ত্রধারী পুলিশ, গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রগুলোতে ৩ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে ১০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য, এক অথবা দুই জন গ্রাম পুলিশ সদস্যও মোতায়েন করা হবে। অন্যদিকে নগর এলাকার সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে ৩ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ৪ জন অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন থাকবেন। এসব কেন্দ্রেও ১০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবেন।

এছাড়া নগর এলাকায় প্রতি ১০টি কেন্দ্রের জন্য সিএমপির একটি মোবাইল টহল টিম মোতায়েন থাকবে। সঙ্গে মহানগর এলাকার সব ভোটকেন্দ্রের জন্য ৪২টি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ৬ ও ৭ জানুয়ারি তারিখে অতিরিক্ত ১৫টি মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি নগরের ৬টি আসনের জন্য সর্বমোট ৩৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। অতিরিক্ত ৭ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবে। অন্যদিকে উপজেলার আওতাধীন আসনগুলোর প্রত্যেকটিতে ব্যাটেলিয়ন আনসারের ১৩টি টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। সোয়াত, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডের কে-নাইন ইউনিটকেও স্ট্রাইকিং হিসেবে রাখা হবে। সবমিলিয়ে নির্বাচনকে ভীতিহীন করতে তিনদিন আগে থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত-পাঁচ দিনে নগর পুলিশের ৪ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবেন।

নগরে ৬৮%, উপজেলায় ৭৫% ঝুঁকিপূর্ণ

তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিএমপির দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৪৪৬টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ নগরীর ৬৮ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ২১৪টি কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইভাবে জেলা পুলিশের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১ হাজার ১৩টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ এবং ৩৫০টি কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এর মধ্যে সমতল এলাকার ১ হাজার ২৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৪৬টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তার মধ্যে বাঁশখালী, লোহাগাড়া, ভূজপুর, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড থানার অধীনে পড়া প্রতিটি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশেষ এলাকার (পার্বত অঞ্চল, দ্বীপাঞ্চল, চরাঞ্চল ও হাওর) ৯৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৬৭টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টিই পড়েছে সন্দ্বীপে।

তবে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নিয়ে ভোটারদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভোটারদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে এই কেন্দ্রগুলোকে অধিকতর নজরদারি রাখতেই মূলত তালিকা করা হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসন ও আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়।

নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি শেষ জানিয়ে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ আলী বলেন, ইতিমধ্যে ১২টি আসনের ব্যালট চলে এসেছে। বাকি ৪টি আসনের ব্যালট আজকের মধ্যে চলে আসবে। এছাড়া অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জাম নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।