উপজেলা নির্বাচনের বিধিমালা সংশোধন নিয়ে বৈঠক মঙ্গলবার
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণ বিধিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে '২৮-তম কমিশন সভা' ডেকেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৈঠকটি তার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
কমিশন সভার আলোচ্যসূচি হলো:
ক) উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩ এর সংশোধন সংক্রান্ত।
খ) উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ এর সংশোধন সম্পর্কিত। এবং গ) বিবিধ।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ইসির সংস্থাপন শাখার উপসচিব মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে বিধি সংশোধনীর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
ইসি সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩-এর সংশোধনীতে ২৬টি এবং উপজেলা প্রদত্ত পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর সংশোধনীতে ৮টি বিধান সুপারিশের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় পরেরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি আবারও বৈঠকে বসে এই কমিটি। ওইদিনেও খসড়া চূড়ান্ত না হওয়ায় সংশোধনগুলি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। খসড়া তালিকা চূড়ান্ত হলে পরে কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা সাথে কথা বলে জানা যায়, বিধিমালা সংশোধনী ৮টি বিধান সুপারিশের প্রাথমিক খসড়া নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামীকাল কমিশন সভায় বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে নিষ্পত্তি হবে।
বিধিমালায় একগুচ্ছ বিষয় সংযোজন করার প্রস্তাব এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জনসভা ও মিছিলের সুযোগ সৃষ্টি, প্রতি ইউনিয়নে একটি ও পৌরসভার প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একটি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, নির্বাচনী ক্যাম্পের আয়তন ৬০০ বর্গফুটে উন্নীত করা, পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের সুযোগ সৃষ্টি, একাধিক পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ না রাখা, ফলাফল গেজেট আকারের প্রকাশের ১৫ দিন পর্যন্ত ভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রত্যাহার না করা, নির্বাচনী মনিটরিং কমিটি গঠন ও কমিটির সুপারিশে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান, প্রার্থী আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র, নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বা পর্যবেক্ষক বা গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি-ভীতি প্রদর্শন বা বাধা প্রদানকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ, ব্যালট পেপারের মুড়িতে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরযুক্ত করার বিধান ও ভোট বন্ধ করতে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার হাতে ক্ষমতা প্রদান।
আবার ভোটগ্রহণের পূর্বে কোনো বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু হলে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধানের কথা বলা হয়েছে। তবে একজন প্রার্থী থাকলে নির্বাচনী কার্যক্রম বাতিল করে ফের কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। আর কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ভোটের ১০দিন পূর্বে মারা গেলে সেই দলকে অন্য এক প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ রাখার কথাও প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। সেই সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধের পক্ষে থাকলেও তা প্রার্থীদের মানাতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে এবার আইন করেই সেই পথটি রোধ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সংস্থাটি।
সংসদ নির্বাচনের মতো ভোটের কোনো পর্যায়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়োগ বা কারসাজির কারণে নির্বাচনের ফলাফল পক্ষপাত দুষ্ট হয়েছে মর্মে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় ভোটগ্রহণ করার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে।
ইতিমধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপে ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮মে ও চতুর্থ ধাপে ২৫ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ১৫৩টি, দ্বিতীয় ধাপে ১৬৫টি, তৃতীয় ধাপে ১১১টি ও চতুর্থ ধাপে ৫২টিসহ মোট ৪৮১টি উপজেলা ভোটের সময় ঘোষণা করেছে ইসি। দেশে বর্তমানে উপজেলা রয়েছে ৪৯৫টি।