জনশুমারিতে সংখ্যায় বেশি, ভোটার সংখ্যায় পিছিয়ে নারীরা



জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জনশুমারিতে সংখ্যায় বেশি, ভোটার সংখ্যায় পিছিয়ে নারীরা

জনশুমারিতে সংখ্যায় বেশি, ভোটার সংখ্যায় পিছিয়ে নারীরা

  • Font increase
  • Font Decrease

৯ বছর আগে রাজধানীর মধুবাগে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চার সন্তানের জননী শিল্পী আহমেদের (৩৫) টিনশেড ঘরটি পুড়ে যায়। তার কিছুদিন পর স্বামী তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে। তারপর থেকে সন্তানদের নিয়ে একাই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

শিল্পী আহম্মেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ধর্মীয় রীতি পালন করি, ছবি তুলতে হবে তাই আমি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করিনি। অগ্নিকাণ্ডে ঘর পুড়ে যাওয়ার পর সবাই সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ-সহযোগিতা পেলেও এনআইডি না থাকায় কোনো সহায়তা পাইনি।

শিল্পী আহম্মেদের মত ঢাকার মোমিনবাগের বাসিন্দা শরীয়তপুরের উম্মে কুলসুম কুসুম (৩৮) বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। ছয় নাবালক সন্তান রেখে স্বামী মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। মুখচ্ছবি দিতে সম্মতি না দেওয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। কোথাও কাজ নিতে গেলে সবাই আগে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চায়।

নানাবিধ কারণে শিল্পী আহম্মেদ ও উম্মে কুলসুমের মত এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করেননি। ফলে নাগরিক সুবিধার বাইরে রয়ে গেছেন এনআইডি না নেওয়া নারীরা। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জনশুমারির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে নারীর সংখ্যা বেশি হলেও ইসির ভোটার তালিকায় বেশি পুরুষ ভোটার সংখ্যা। সেখানে দেখা যায়, ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন জনসংখ্যায় পুরুষ রয়েছে ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৩ জন। নারীর সংখ্যা আট কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। সেই হিসেবে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটার ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৭ ভোটার কম।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসংখ্যায় যেহেতু নারীর সংখ্যা বেশি, স্বাভাবিকভাবে নারী ভোটারও বেশি থাকার কথা। কিন্তু কিছু লোকের ধর্মীয় বিশ্বাস, ছবি তুলতে অসম্মতি, এনআইডির গুরুত্ব নিয়ে প্রচারের অভাব, নানা প্রতিবন্ধকতা, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আগ্রহ বা সুযোগের অভাব ভোটার সংখ্যায় ওই উল্টো চিত্রের কারণ ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, নারীরা নানান কুসংস্কার বিশ্বাস করে বিধায় এখনো কেউ কেউ ভোটার হচ্ছে না। সমাজে নারীদের পিছিয়ে রাখার জন্য একটি মহল কাজ করছে, যাতে নারীরা এগিয়ে যেতে না পারে। এর পেছনে পরিবার ও সমাজ নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে ভোটার হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

তিনি আরও বলেন, ধর্মের নামে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে অনেক নারী এনআইডি গ্রহণ করছেন না। ফলে রাষ্ট্র নারীকে যে অধিকার দিয়েছে, সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই, সকল নারী যেন এনআইডি গ্রহণ করুক। সেখানে যেন কো নো পশ্চাৎপদ চিন্তা ভাবনা ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে ওঠে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।

২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা কার্যক্রম হাতে নেয় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেই সময় ৯ কোটি ভোটারের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে সাতবার। ২০২১-২২ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি। ছবিসহ ভোটার তালিকা শুরুর পর থেকে নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান থাকলেও গত ১৫ বছরে হালনাগাদে নারী ভোটারদের সাড়া মিলেছে কম।

এমন পরিস্থিতিতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নারী ভোটার না হওয়ার একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছিলেন। সেখানে দেখা যায়, নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহে অনীহা, হিন্দু অবিবাহিত মেয়েদের পিত্রালয়ে নিবন্ধন করতে অনীহা; অবিবাহিত, অনগ্রসর ও নিরক্ষর মেয়েদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ কম; মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়া, রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দূরে হওয়া, আবহাওয়া অনুকূল না থাকা, সামাজিক সংস্কার ও ধর্মীয় অজুহাতে ছবি তুলতে অনীহা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের অসচেতনতা। তখন একাধিক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছিল বলেও কমিশন সূত্রে জানা যায়। তারপরও নারীদের ভোটার সংখ্যা বাড়াতে পারেনি কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালে দেশে মোট ভোটার ছিল ১০ কোটি ৯৮ লাখ ১৯ হাজার ১১২ জন। সেখানে নারী ভোটার ছিল ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২২ জন। আর পুরুষ ভোটার ছিল ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৮২ হাজার ৫৩০ জন। সেখানে পুরুষের চেয়েও ১১ লাখ নারী ভোটার কম। ২০২১ সালে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯। সেখানে নারী ভোটার ছিল ৫ কোটি ৫১ লাখ ২২ হাজার ২২৩ জন। পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫ জন। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ বৃদ্ধি পেলেও নারী ভোটার বেড়েছে মাত্র ৮ লাখ।

একইভাবে দেশে ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪১ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন এবং হিজড়া ভোটার ৮৪৯ জন। সর্বশেষ হালনাগাদের খসড়ায় দেখা যায়, ১২ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ জন ভোটার; এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার ১৩৭ এবং নারী ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৯ এবং ৯২৪ জন হিজড়া ভোটার। এখানেও পুরুষের চেয়েও ২৪ লাখ নারী ভোটার কম। কিন্তু বিবিএসের জনশুমারিতে দেশে পুরুষের চেয়েও নারীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখ বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জনশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০১ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৫ লাখ ২২ হাজার ৫৯৮ জন। সেখানে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার ৩২০, আর নারীর সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার ২৭৮ জন। এখানে নারীর চেয়েও ৫০ লাখ বেশি। এই সংখ্যা ২০১১ সালের জনশুমারিতে নারী ও পুরুষের সংখ্যা সমান হয়।

কিন্তু বিবিএসের সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৩ জন। নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন। হিজড়ার সংখ্যা ৮ হাজার ১২৪ জন। ২০০১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে পুরুষের সংখ্যা চেয়েও নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। এখানে পুরুষের চেয়েও সাড়ে ১৫ লাখ বেশি।

জাতীয় পরিচয়পত্রে ছবি ছাড়া আঙুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন নিয়ে আন্দোলন করছে আঞ্জুমান মহিলা পরিষদ। ওই পরিষদ নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনে তাদের দাবির বিষয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। স্মারকলিপি দিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।

আঞ্জুমান মহিলা পরিষদের শারমিন ইয়াসমিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, ভোটার না হওয়ায় আমরা বেশ কয়েকটি অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে আমরা কেউ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছি না। আমাদের অনেক বোনেরা কোথাও চাকরির আবেদন করতে পারছে না। 

তিনি বলেন, আমরা চাই পর্দাশীল নারীদের জন্য ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা পদ্ধতি শিথিল করা হোক। এই জন্য আমরা দুইটা দাবি করেছিলাম। ছবি ছাড়া আঙুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড দেওয়ার জন্য।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ভোটার হতে অনাগ্রহ রয়েছে এমন বিষয় না থাকলেও কিছু কুসংস্কার রয়ে গেছে অনেক এলাকায়। ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে অনেক নারী ভোটার হতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে যেসব নারী পর্দা করে তারা ছবি তুলতে চায় না বলেই নারী ভোটারের সংখ্যা কম। নারী ভোটারের সংখ্যা বাড়াতে নির্বাচন কমিশন ছাড়াও জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সবসময় বলি জাতীয় পরিচয়পত্র যে ভোট দেওয়ার জন্য প্রয়োজন সেটা না, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জমির দলিল করতে পারে না।

নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে নারী-পুরুষ সকলকে ভোটার হতে আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

স্থানীয় সরকারের ২২৩ পদে নির্বাচন স্থগিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
নির্বাচন কমিশন, ছবি: বার্তা২৪.কম

নির্বাচন কমিশন, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

স্থানীয় সরকারে বিভিন্ন পর্যায়ে ২২৩টি পদে আগামী ২৭ জুলাইয়ের উপ-নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম নির্বাচন স্থাগিতের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারদের চিঠি দেন। তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে কারফিউর কারণে ২৭ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনগুলো স্থগিত করেছে কমিশন।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ৪ জুলাই, মনোনয়নপত্র বাছাই ৫ জুলাই, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সময় ৬ থেকে ৮ জুলাই, আপিল নিষ্পত্তি ৯ জুলাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১০ জুলাই, প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে ১১ জুলাই। এসব নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করতে পারবেন সংক্ষুব্ধরা। এজন্য জেলা পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচারে চালাতে পারেন। আগামী ২৭ জুলাই সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে৷ সে অনুযায়ী, ১১ জুলাই থেকে আগামীকাল ২৫ জুলাই মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ১৫ দিন প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারতেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২৭ জুলাই বিভিন্ন জেলা পরিষদের ২৩টি পদে, পৌরসভার পাঁচটি পদে ও ইউনিয়ন পরিষদের ১৯৫টি পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। ২৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে।

;

সৌদি প্রবাসীদের জন্য এনআইডি সেবা চালু জুলাইয়ে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
সৌদি প্রবাসীদের জন্য এনআইডি সেবা চালু জুলাইয়ে/ছবি: সংগৃহীত

সৌদি প্রবাসীদের জন্য এনআইডি সেবা চালু জুলাইয়ে/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশি সৌদি প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা সহজ করতে সেই দেশে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে চলতি জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এনআইডি সরবরাহের কার্যক্রম চালু করা হবে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, সৌদি প্রবাসীদের এনআইডি সেবাটি উদ্বোধন করতে দেশটিতে যাবেন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। এজন্য আগামী ২০ থেকে ২৯ জুলাই সৌদি আরব সফর করবেন তিনি। তার সফর সঙ্গী হিসেবে সাথে থাকবেন সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক ও একান্ত সচিব শাহ মো. কামরুল হুদা।

ইসির চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স শাখার উপ-সচিব মো. আলমের পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠি থেকে জানা গেছে, পুরো সফরের ব্যয় বহন করা হবে স্মার্টকার্ড বা আইডিইএ-২ প্রকল্প থেকে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতঃমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, কুয়েত, কাতার ও যুক্তরাজ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধন হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে সৌদি আরবেও কার্যক্রমটির উদ্বোধন করা হবে।

পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এই সেবা ওমান, বাহরাইন, জর্দান, সিংগাপুর, লেবানন, লিবিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মালদ্বীপ ও কানাডাতে এনআইডি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগটি হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।

সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা।

;

ঢাকা সিটি নির্বাচন

বাড়বে প্রার্থীর জামানত, পরিবর্তন হবে আচরণবিধির



জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম, নির্বাচন কমিশন

ছবি: বার্তা২৪.কম, নির্বাচন কমিশন

  • Font increase
  • Font Decrease

সদ্য শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিধিমালায় ব্যাপক রদবলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নতুন বিধিমালায় প্রার্থীদের জামানত ও নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় পরিবর্তনের ঈঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এই লক্ষ্যে ইসি গঠিত বিধি সংস্কার কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন এই বিধিমালা কার্যকর হবে আসন্ন ঢাকা উত্তর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে।

ইসি’র একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের জামানত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটার স্বাক্ষর বিধান সংস্কারসহ একাধিক বিষয় পরিবর্তনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইসি। সে অনুযায়ী, মেয়র প্রার্থীদের জামানত বাড়বে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনশতাধিক ভোটারের স্বাক্ষরসহ জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। একইসঙ্গে ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।

এর আগে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত বাড়ানোসহ একাধিক বিধিমালা সংস্কার করার বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে, নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা প্রার্থীদের জামানত বাড়ানোর বিষয়ে বিরোধিতা করেছিলেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আইন-২০২৩ (আরপিও) অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেসব এলাকায় পাঁচ লক্ষাধিক ভোটার থাকবে, সেখানে মেয়র প্রার্থীর জামানত ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ ভোটার থাকলে প্রার্থীর জামানত হবে ৩০ হাজার টাকা এবং যেসব সিটিতে ২০ লাখের ওপরে ভোটার থাকবে, সেখানে মেয়র প্রার্থীর জামানত ১ লাখ দেওয়ার বিধান আছে।

সিটি নির্বাচনে বর্তমানে ওয়ার্ডে ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী কাউন্সিলর প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা জামানত দেওয়ার বিধান রয়েছে। নতুন বিধিমালা সংস্কার হলে সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে কাউন্সিল প্রার্থীদের জামানত বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি। কিন্তু স্থানীয় সরকারের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা করে ‘উপজেলা নির্বাচন সংশোধন আইন-২০২৪’ করা হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় এখন ইসি উপজেলা নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত বাড়ানো হবে।

ইসির আইন বিধিমালা সংস্কার কমিটির নেতৃত্বে আছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।

সিটি নির্বাচনের নতুন বিধিমালা সংস্কারের বিষয়ে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনের মতো সিটি নির্বাচনে একাধিক বিধিমালা ও আচরণবিধি পরিবর্তন করার বিষয়টি আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্তগুলো এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। ফলে এখনি চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না।

ইসির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আসন্ন দেশের সব সিটি নির্বাচনে আইন ও আচরণবিধি পরিবর্তন করা হবে। তার মধ্যে অন্যতম- নির্বাচনি প্রচারণায় সাদাকালো পোস্টারের পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ব্যবহার, নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসংযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার করা, মেয়র ও কাউন্সিল প্রার্থীদের জামানত বৃদ্ধি, ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

 এগুলো ছাড়াও একাধিক বিষয় পরিবর্তন করতে ইসির আইন বিধিমালা সংস্কার কমিটি কাজ করছে।

তারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে খসড়া বিধিমালাগুলো নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। কমিটি প্রধান বিষয়টি আর পর্যালোচনার কথা বলেছেন। পরবর্তীতে কমিশন সভা খসড়ার সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করলে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। ভেটিং চূড়ান্ত হলে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিধিগুলো কার্যকর হবে।

;

বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে ২২৩ স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

স্থানীয় সরকারের ২২৩টি পদে উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই)। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭ জুলাই। এই সব নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, ২৭ জুলাই বিভিন্ন জেলা পরিষদের ২৩টি পদে, পৌরসভার ৫টি পদে ও ইউনিয়ন পরিষদের ১৯৫টি পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৪ জুলাই, মনোনয়নপত্র বাছাই ৫ জুলাই। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সময় ৬ থেকে ৮ জুলাই, আপিল নিষ্পত্তি ৯ জুলাই। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১০ জুলাই, প্রতীক বরাদ্দ ১১ জুলাই। আর ভোটগ্রহণ ২৭ জুলাই।

;