‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমায় যেভাবে যুক্ত হয়েছিলেন আলাউদ্দিন আলী

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আলাউদ্দিন আলী ও সিনেমার পোস্টার

আলাউদ্দিন আলী ও সিনেমার পোস্টার

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার গানের সুর করেছেন আলাউদ্দিন আলী। জন্ম দিয়েছেন অসংখ্য সুপারহিট গান।শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে সাতবার এবং একবার শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসাবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

তবে আলাউদ্দিন আলীর এমন অর্জনে ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া পরিচালক আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে। এই সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেই আলোচনায় আসেন আলাউদ্দিন আলী। শুধু আলোচনা নয়, গোলাপী এখন ট্রেনে, কসাই, সুন্দরী সিনেমার জন্য পর পর তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে রেকর্ড গড়েন এই সুরকার।

বিজ্ঞাপন

২০১৫ সালের এক সাক্ষাৎকারে আলাউদ্দিন আলী আলোচিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমায় যুক্ত হওয়ার গল্পে বলেছিলেন, তখন সুরকারদের সঙ্গে আবহ সংগীত, গানে সহকারী হিসেবে কাজ করছিলাম। খুব শিক্ষিত, জানাশোনা লোকরা তখন চলচ্চিত্রে কাজ করতেন। আমজাদ ভাইয়ের সহকারী ইলতুতমিশ সাহেব রায়েরবাজার হাইস্কুলে আমার ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি সংগীত পরিচালক হয়েছিলেন। আমার ভূগোলের শিক্ষক মাসুদুল হক ছিলেন প্রযোজক সুমন দে’র শ্বশুর, পরে তিনি ইত্তেফাকের বিনোদন পাতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হয়তো আমার কাজ দেখে সহকারীরা আমজাদ ভাইকে জানান, তিনি আমাকে দিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তিনি খবর দেন। পরে তো কাজ করতে করতে দুজনের খুব ভালো বোঝাপড়া-হূদ্যতা তৈরি হয়। একসময় আমজাদ হোসেন আমার ওপরে খুবই সন্তুষ্ট হন। তিনি গল্প মাথায় রেখে গান রেকর্ড করতেন। তখন তো ক্যাসেট চলত, ক্যাসেটে গান বাজত। আস্তে আস্তে গান শুনতে শুনতে তিনি গল্প এগিয়ে নিতেন। আবার আরেকটি গান হতো, গল্প এগিয়ে নিতেন। এভাবে কাজ করেছি। একসঙ্গে দুটি ছবি—‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও দারাশিকোর ‘ফকির মজনু শাহ’ সাইন করেছিলাম। ১৯৭৭ সালে প্রায় একই সময়ে ছবি দুটি মুক্তি পায়। গোলাপী এখন ট্রেনের তিন-চারটি গান তো সুপার-ডুপার হিট হয়ে যায়। ফকির মজনু শাহর ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে’, ‘চোখের নজর এমনি করে এক দিন ক্ষয়ে যাবে’ দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পায়, জনপ্রিয় হয়। সুরকার হিসেবে এস্টাবলিশমেন্ট পেয়ে যাই। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

আলাউদ্দিন আলী

রোববার (৯ আগস্ট) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন বহু সুপারহিট গানের এই নেপথ্য নায়ক। আজ সোমবার (১০ আগস্ট) দুপুরে মিরপুর বুদ্ধিজীবী করবস্থানে দাফন করা হবে তাঁকে।

বিজ্ঞাপন

সুরকার, বেহালাবাদক, সঙ্গীতজ্ঞ, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে তুমুল জনপ্রিয় আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ৭ বার এবং গীতিকার হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন।

আলাউদ্দিন ১৯৭৫ সালে সঙ্গীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন। তিনি গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), সুন্দরী (১৯৮০), কসাই এবং যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।