ক্লাস অডিয়েন্স ও মাস অডিয়েন্সের দূরত্বটা কমাতে চাই: সঞ্জয় সমদ্দার
ভিন্নধর্মী গল্পের নাটক নির্মাণ করেন নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দার। এবারের ঈদে তার নির্মিত বেশ কিছু নাটক ছিলো আলোচনায়। বাংলা নাটকের সার্বিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি এই নির্মাতা মুখোমুখি হয়েছেন বার্তা২৪.কমের। তাঁকে ফোনে ধরেছেন ইসমাইল উদ্দীন সাকিব।
বার্তা২৪.কম: সবাই যেখানে যা বেশি খাচ্ছে সেই গল্পে নির্ভর করেছে। সেখানে আপনি ভিন্নধর্মী গল্পের নাটক নির্মাণ করেছেন...
সঞ্জয় সমদ্দার: নির্মাতা হিসেবে এটাই আমার কাজ। ভালো কাজ করার চেষ্টা সব সময়ই থাকে। কিন্তু সব কাজই যে সবার ভালো লাগবে বিষয় টা এমন নয়। যখন লিখি তখন চেষ্টা করি যা আমাদের চারপাশে ঘটে বা ঘটতে পারে এইরকম কিছু লেখার। যা ঘটে তা সবসময় গল্প হওয়া উচিৎ নয়। বরং যা ঘটা উচিৎ তাও আমার মতো করে গল্পের আদলে ফেলি। ভালো গল্পের ক্ষুধা সবারই আছে। আমি চেষ্টা করি জীবনের গল্প বলার। আমি যেই সমাজে থাকি তার আশপাশ থেকেই গল্পগুলো নেওয়ার চেষ্টা করি। এবং সেগুলোকে আমি আমার মতো করে বলি। আমি ক্লাস অডিয়েন্স ও মাস অডিয়েন্সের দূরত্বটা কমাতে চাই। ভালো কাজ করতে চাই। সেটা সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছেছে কিনা সেটা বলা কঠিন। তবে কিন্তু বেশ রেস্পন্স পাচ্ছি, মানুষ দেখছে। আমি সবার জন্যই কনটেন্ট বানাই। এখন সেটা যদি সবার ভালো লাগে, তাহলে ভালো। সবার ভালো লাগতেও পারে আবার নাও লাগতে পারে। কিন্তু আমি কোনো অডিয়েন্সকে টার্গেট করে কোনো কনটেন্ট তৈরি করি না।
বার্তা২৪.কম: দীর্ঘদিন ধরে নাটকে একই প্যাটার্নের গল্প বলা হচ্ছে। একই প্যাটানের এসব গল্প দর্শক কেন দেখছে...
সঞ্জয় সমদ্দার: প্রেমের গল্প মানুষ পছন্দ করে। দর্শকদের যে রুচি, সেটা নানানভাবে তৈরি হয়। আমাদের এখানে সব ধরণের দর্শকই আছে এবং সব ধরণের কাজও হচ্ছে এবং হবে। যে ধরণের কাজ দর্শক বেশি গ্রহণ করবে সে ধরণের কাজও বেশি হবে সেটা একটা স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু ব্যতিক্রম কাজও হচ্ছে। আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার গল্পটা বলে দর্শকে কানেক্ট করতে। এটা আমার একটা ব্যক্তিগত প্রয়াস থাকে। কিন্তু কেনো দর্শক প্রেম ও করুণ রস পছন্দ করে তার অনেক মনস্তাত্ত্বিক, ভৌগলিক ব্যাখা আছে। এক কথায় বলা কঠিন। মানুষ প্রেমের গল্প, করুণ রসের গল্পের পাশাপাশি কমেডিও পছন্দ করে; যা আমরা দেখে আসছি। মূল কথা হলো, দর্শকরা বিনোদন পেতে চায়। বিনোদন নানানভাবে পাওয়া যায়। কেউ হয়তো ইন্টেলেকচুয়াল ফিকশন দেখে বিনোদন পায়, কেউ হয়তো সহজ সুন্দর জিনিস দেখে বিনোদন পায়। সেটাকে ভাগ করার কিছু নাই। ভালো কাজ হলে দর্শক ভালো কাজই দেখবে। বুদ্ধিদীপ্ত কাজ হবে, সহজ কাজ হবে কিন্তু মূল কথা হলো কাজটাকে সুন্দর করে যাওয়া। আর এতো এতো ফ্রি কনটেন্ট থাকার পরও কি মানুষ নেটফ্লিক্স, এ্যামাজন প্রাইম, হৈচৈ টাকা দিয়ে দেখছে না? কনটেন্ট যদি টাকা দিয়ে দেখার মতো হয় অবশ্যই দেখবে। বাংলাদেশি কনটেন্ট যখন ঐ কোয়ালিটির হবে অবশ্যই দেখবে। আগে দর্শকদের ভেতরে ঐ কোয়ালিটি সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করতে হবে। তাদের মনে হতে হবে যে, এই কনটেন্ট আমি টাকা দিয়ে দেখতে পারি।
বার্তা২৪.কম: এখন তো নাটকে গল্পের চেয়ে ভিউ সংখ্যাই গুরুত্ব পাচ্ছে?
সঞ্জয় সমদ্দার: ভিউ নিয়ে আমি অন্তত অস্বস্তিতে পড়ি নাই। কেউ আমাকে বলেনি যে, আমাকে এতো মিলিয়ন ভিউ দেন। বরং আমি একটা গল্প বলার চেষ্টা করেছি, তখন প্রোডিউসার হয়তো রাজি হয়েছেন। তারপর কাজটা হয়েছে। ভিউ নিয়ে আমার জায়গা থেকে বলা কঠিন। হয়তো ভিউর সঙ্গে ব্যবসা জড়িত। তাদের ব্যবসার জায়গাটা আমি খুব ভালো বলতে পারব না । যে ধরণের কাজে ব্যবসা হবে সে ধরনের কাজ বেশি হবে। সেটা খুব স্বাভাবিক। সবাই যেহেতু বাণিজ্যকে নিশ্চিত করতে চায় সেই জায়গা থেকে ভিউ বেশি চাইতেই পারে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে প্রোডিউসাররা গল্প চেয়েছেন। তারা হয়তো বিশ্বাস করেছেন যে আমি গল্পটাকে ভালোভাবে বানাতে পারবো।
বার্তা২৪.কম: এবারের ঈদে আপনার নির্মাণে মোশাররফ করিমের আলোচিত নাটক ‘যে শহরে টাকা ওড়ে’। তাঁকে বেশ ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করলেন; যা বেশ প্রশংসা পাচ্ছে...
সঞ্জয় সমদ্দার: প্রত্যেকটা নির্মাতারই আলাদা ধরণ আছে। কেউ হয়তো চিন্তা করেছে মোশারফ ভাই কমেডিতে ভালো করেন। কিন্তু তিনি জাত অভিনেতা। তিনি সবকিছুই ভালো করেন। মোশারফ ভাই কিন্তু অনেক সিরিয়াস নাটকও করেছেন। আমি চিন্তা করি যে, তাকে একটু হলেও আলাদা ভাবে উপস্থাপন করতে পারি। বা যদি একটু অন্যরকম দেখাতে পারি। এ ধরনের এক্সপেরিমেন্টে আমার নির্মাতা হিসেবে তৃপ্তি থাকে। আমি যেন একজন অভিনেতাকে একটু হলেও ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারি, ওটা আমার চাওয়া থাকে। অর্থাৎ অভিনেতাকে নানানভাবে উপস্থাপন করার একটা প্রয়াস সবসময় থাকে আমার মধ্যে।
বার্তা২৪.কম: আপনার প্রায় অধিকাংশ নাটকে অপূর্বকেই কেন দেখা যায়?
সঞ্জয় সমদ্দার: অপূর্ব ভাই ইন্ডাস্ট্রির একজন সুপারস্টার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কনসিস্টেন্টলি সাকসেসফুল অভিনেতা। এ রকম একজন হিরোর সাথে তো ডিরেক্টররা কাজ করতে চাইবেনই। আমিও চাই। আমি তাকে নিয়ে যে কাজগুলো করি সেই কাজগুলোতে আমার কাছে মনে হয় অপূর্ব ভাইই বেস্ট। এবং ভাইয়াও সেটাতে নিজের সর্বোচ্চটা দেন। সেটা আসলে কাজের জায়গা থেকে এমনই হয়। তাই হয়তো ভাইয়ার সাথে কাজ বেশি হয়। ইনশাআল্লাহ সামনেও হবে।
বার্তা২৪.কম: নাটকে বাজেট ঘাটতির পুরনো অভিযোগ রয়ে গেছে। আপনার ক্ষেত্রে কি হয়?
সঞ্জয় সমদ্দার: আমাদের সীমাবদ্ধতা মেনেই কাজ করতে হয়। বাজেটের ব্যাপারে আমার যতটুকু দরকার ততটুকু পেয়েছি। আমি অন্যদের কথা বলতে পারবো না। ইন্ডাস্ট্রিতে হয়তো সবাই সমান বাজেট পায় না। কেউ হয়তো কম পায়, কেউ বেশি পায়। এগুলো আসলে ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতা। এগুলো মেনেই কাজ করতে হয়। এগুলো নিয়ে অভিযোগ করার কিছু নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি আসলে অভিযোগ করতে পছন্দ করিনা।