শুভ জন্মদিন ‘গুরু’
জাতি হিসেবে ব্রিটিশদের আছে একজন কাল্পনিক জেমস বন্ড, আমাদের আছেন রক্ত-মাংসের কিংবদন্তি গায়ক জেমস। তার পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম। তবে তিনি বাংলাদেশের সংগীতপ্রেমীদের কাছে ‘গুরু’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। অসাধারন গায়কী দিয়ে একজন রকস্টার থেকে তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘গুরু’তে পরিণত হয়েছেন তিনি।
নওগাঁতে জন্ম হলেও জেমসের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সরকারি কর্মকর্তা বাবার সাথে গান গাওয়া নিয়ে মনোমালিন্য থেকে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে আজিজ বোর্ডিং থাকা শুরু করেন তিনি। সেখানে থেকেই তার সংগীত জীবনের।
জেমসের শুরুটা ১৯৮৬ সালে ‘ফিলিংস’ নামের ব্যান্ডের ‘স্টেশন রোড’ দিয়ে। এরপর ‘জেল থেকে বলছি’, ‘লেইস ফিতা লেইস’ এবং ২০০০ সালে ‘নগর বাউল’ ব্যান্ড গঠন করে প্রকাশ করেন ‘দুষ্টু ছেলের দল’ অ্যালবামটি। ব্যান্ডের পাশাপাশি একক, মিশ্র অ্যালবাম ও প্লেব্যাকে উপহার দেন অজস্র জনপ্রিয় গান।
জেমসের একক অ্যালবামগুলোও পেয়েছে অসামান্য জনপ্রিয়তা। ‘অনন্যা’, ‘পালাবে কোথায়’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’ এবং ‘কাল যমুনা’ প্রতিটি অ্যালবামই জনপ্রিয়তার রেকর্ড ভেঙে গেছে একের পর এক। যতোদিন গিয়েছে জেমস যেনো আরো পরিণত এক গায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
বাংলাদেশ, জেল থেকে আমি বলছি, মা, দুখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা কতো দিন, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মিরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়াসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজের প্রতিভার উদাহরণ রাখার পাশাপাশি জনপ্রিয়তাও লাভ করেছেন তিনি।
বলিউডের কিছু সিনেমার জন্য জেমসের গাওয়া গানগুলো কালজয়ী গান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। বলিউডে জেমসের গানের মধ্যে রয়েছে- ‘ভিগি ভিগি’, ‘চল চলে’, ‘আলবিদা’, ‘রিশতে’, ‘বেবাসি’ উল্লেখযোগ্য৷‘দেশা দ্য লিডার’ সিনেমার জন্য গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন জেমস। বিরতি দিয়ে ২০১৭ সালে ‘সত্তা’ সিনেমায় তার গাওয়া ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং সেই বছর গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন তিনি।
এছাড়া মেরিল প্রথম আলো, বাচসাস সহ অসংখ্য পুরস্কার জয় করেছেন তিনি। তবে সবচেয়ে বড় পুরস্কার তিনি যেটা পেয়েছেন সেটা হলো ভক্তদের অকৃত্রিম ভালোবাসা।
একটা প্রজন্মের কাছে জেমস মানে এখনো এক উন্মাদনা, তার প্রতি ভক্তদের ভালোবাসা এতোটাই প্রবল যে ভক্তদের তিনি ‘দুষ্টু ছেলের দল’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেন।