রিক্সাচালক রাইয়ান এখন আসিফের অ্যাসিসটেন্ট

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আসিফ আকবর ও রাইয়ান

আসিফ আকবর ও রাইয়ান

করোনাভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টানতে বাংলাদেশে অঘোষিত লকডাউন চালু হয় গত ২৬ মার্চ। এর আগেই অবশ্য বন্ধ করে দেওয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মাঝে লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় ফের লকডাউন চলছে দেশে। যার ফলে ফের একবার মানুষের জীবনযাপনে এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে বেকারত্ব। ফলে এখন যে যা কাজ পাচ্ছেন তাই করেই সংসার চালাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

আর এই লকডাউনের কোনো এক রাতে রাইয়ান নামে একজনের রিক্সায় চড়েছিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। যার প্রতি আসিফ এতোটাই মুগ্ধ হয়েছেন যে, তাকে নিজের অ্যাসিসটেন্ট বানিয়ে দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে আসিফ আকবর লিখেছেন, রাজ্য মানেই রাজত্ব, রাজ্যের মালিক রাজা। রাজত্ব বাড়লে সাম্রাজ্য হয়, কমে গেলে উপনিবেশ। সোজা হিসাবটা বরাবরই চলছে, সাধারন মানুষ শুধু শুধু অঙ্ক কষে হয়রান। কারো ধারনা চা ওয়ালা প্রধানমন্ত্রী হয়ে যায়, আমি কম কিসে!! এখানেই প্রথম গিট্টুর অভিষেক। বিরল ঘটনা কোন কোন সময় সর্বোচ্চ উদাহরণ হতে পারে, যা সবসময় ঘটে না। যেমন আমি- এদেশের একজন তথাকথিত গায়ক। অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসে, আমিও তাদের ভালোবাসি। অনেক মানুষ আমাকে ঘৃণা করে- দোয়া করি তারা ভালো থাকুক। গায়ক আসিফকে প্রশংসা করতে করতে মানুষ এমন জায়গায় তুলেছে, এখন নামতেও পারছি না। কেউ শুনুক চাই না শুনুক, গেয়ে যাচ্ছি। রিজিকের মালিক আল্লাহ, আর এটাই আমার পেশা।

বিজ্ঞাপন

কম জানা জ্ঞানীর অপ্রয়োজনীয় উপদেশ গার্বেজ করে ফেলি দ্রুত, টুকটাক চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাদীক্ষা আমারও আছে। পরীক্ষা দিতে হলে সামনাসামনি হতে হবে, কমেন্ট বক্সের নপুংসক বীরদের জন্য ন্যুনতম করুনাও আমার কখনো হয় না।

রাজা মানেই প্রাসাদ আর প্রটোকল, ষড়যন্ত্রের তীর্থভূমি। কারো হজম বদহজমের ধার ধারি না আরো আগে থেকেই। আমারও একটা ছোট্ট রাজত্ব আছে এদেশের গানের জগতে। এই রাজত্বে প্রাসাদের আভ্যন্তরীন ক্যাচাল নেই। খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত রাজত্ব চালাই। যে কারণে দেড় দুই ভরির চামচিকাও আমাকে জেলে ঢুকাতে পারে যখন তখন। প্রশাসনের কিছু খুচরা অস্থায়ী কেউকেটার বাঁকা তর্জনীর স্টুপিডিটি হজম করে চলি, একটু চলতে হয়। যে তর্জনীটা অলরেডি বাঁকা সেটা একদিন ভাঙ্গবেই নিজ থেকে। আমি সাধারণ লোক আপাতত হজমি বটিকা খেয়ে টিকে থাকার ধান্দায় আছি।

এই কঠোর লকডাউনে রাতে একটু বের হই স্টুডিওর কাজে। জরুরি কাজ তো অবশ্যই থাকে, সঙ্গে থাকে আমাদের পেশার লোকদের বেঁচে থাকার তাড়না। বেগম অফিসে ড্রপ করে দেয় আবার নিয়ে আসে। নিজে গাড়ি চালাই না, আইন মেনে অন অ্যারাইভ্যাল মুভমেন্ট পলিসিতে আছি, আজকে ভোরে একাই বের হয়েছি স্টুডিও থেকে। আমি জানি পুলিশের ডিউটি বদলের সময়টা। পুলিশ আমার চলার পথে নি:সন্দেহে সেরা বন্ধু। তবুও তাঁদের চোখ ফাঁকি দিতে একটা ব্যাটারি চালিত রিক্সায় চড়ে বাসায় চলে আসলাম সূর্যোদয়ের আগেই। এই অবৈধ ব্যাটারি রিক্সা আমার পছন্দ না। যে ছেলেটা এই রিক্সা চালাচ্ছে তার নাম রাইয়ান। সুনামগঞ্জ জগন্নাথপুরের ছেলে। কথাবার্তা গেট আপে ব্যাপক স্মার্ট। তার সাথে অনেক কথা বললাম। সে একটা প্রাইভেট জব করতো। পরিবারের খরচ চালাতে রাতের অন্ধকারে ব্যাটারি চালিত রিক্সা হাঁকায়। কথোপকথন শেষে তাকে পরিচয় দিয়ে বললাম আমি গায়ক আসিফ। মাস্কের ফাঁকে আমাকে চেনেনি, পরিচয় দিতেই বললো আমার কণ্ঠ শুনে সে শিওর হয়েছে আমিই আসিফ, শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। কাজে কোন লজ্জ্বা নেই, আমার পরিবারে অভাব থাকলে আমিও চেষ্টা করতাম যে কোন মূল্যে সংসারের ভরণপোষণ চালিয়ে নিতে। এটাই পুরুষ লোকের আমৃত্যু শপথ। আমার বড় ছেলের বয়সী ছেলেটার কাছ থেকে আজ পুরনো শিক্ষাটা রিনিউ করালাম। রাজত্ব আসলে প্রাসাদে নয়, খোলা আকাশটার নিচেই সমস্ত রাজত্ব নতমস্তকে সদা বিরাজমান। রাইয়ান এখন থেকে আমার নতুন অ্যাসিসটেন্ট, এরকম রাজা সঙ্গে থাকলে পৃথিবীটা বিন্দাস মনে হয়…

ভালোবাসা অবিরাম…