ফিরোজা বেগম আর্কাইভের উদ্বোধন
পৃথিবীতে মানুষ তাঁর কৃতকর্মের জন্য অমর হয়ে থাকেন। যুগ যুগান্তর বেঁচে থাকেন মানুষের মনের মণিকোঠায়। অসামান্য অবদানের কারণে হয়ে ওঠেন কালোত্তীর্ণ।
ফিরোজা বেগম তেমন-ই এক কালজয়ী সংগীতশিল্পীর নাম। যিনি নজরুল সংগীত সাধনায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। নজরুল সংগীতে অসামান্য অবদান তাঁকে করেছে মহান। গভীর উপলদ্ধিবোধ নিয়ে তিনি আজীবন গানের চর্চা করে গিয়েছেন। ধ্যানমগ্ন ছিলেন সুরের মূর্চ্ছনায়। কঠোর অনুশীলন আর লক্ষ্যে অবিচল থেকে হয়ে উঠেছিলেন গানের কিংবদন্তি।
কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগমকে স্মরণীয় করে রাখতে এসিআই ফাউন্ডেশন এক মহান উদ্যোগ নিয়েছে যার ফলশ্রুতিতে ফিরোজা বেগমের ৯১তম জন্মবার্ষিকী (২৮ জুলাই) উদ্বোধন করা হয়েছে একটি ডিজিটাল আর্কাইভ (www.ferozabegum.com)।
এদিন আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করেছে ফিরোজা বেগম আর্কাইভ। যেখানে এই মহান কণ্ঠশিল্পীর জীবন ও কর্মের যুগাান্তকারী সব সৃষ্টি সংরক্ষিত আছে যেমন- শুরুতেই জীবনী, পুরস্কারের তালিকা, বিশেষ করে থাকছে নজরুলের গান, কাব্যগীতি, আধুনিক বাংলা গান, গীত ও গজল।
রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দুর্লভ সংগ্রহ। টেলিভিশন থেকে রেডিও, মঞ্চের অনুষ্ঠান থেকে সাক্ষাৎকার পেয়ে যাবেন এক ক্লিকে। থাকছে বিভিন্ন বাংলা, ইংরেজি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার, অনুষ্ঠান, প্রতিবেদন।
ফটো গ্যালারিতে রয়েছে তার একক ছবিসহ পারিবারিক জীবন, সঙ্গীত জীবন, বিভিন্ন দিকপালদের সাথে ছবি। এর পাশাপাশি রয়েছে হাতে লেখা নোটবুকের কপি, চিঠি-পত্র আরও অনেক কিছু। আছে তাঁর স্বামী প্রখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্তের জীবনী, গানের খাতার প্রতিলিপি, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, গান এবং ছবি।
কমল দাশগুপ্তের সুরে ফিরোজা বেগমের বহুল প্রচলিত গানগুলোর মধ্যে- আমি বনফুল গো, এমনই বরষা ছিল সেদিন, মোর জীবনের দুটি রাতি, মাটির এ খেলাঘরে অন্যতম। থাকছে তাঁকে ঘিরে বিভিন্ন প্রজন্মের নানা শিল্পীর কথা। ভবিষ্যতে কোনো গুণগ্রাহীর কাছে থেকে পাওয়া কোনো তথ্য, ভিডিও বা গান এই আর্কাইভে সংযোজন করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
শিল্পী ফিরোজা বেগমের সহোদর ও এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব এম. আনিস উদ দৌলার পক্ষে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মিসেস সাদিয়া আফরিন মল্লিক উদ্বোধনী বক্তৃতা পড়ে শোনান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, শিল্পী ফিরোজা বেগমের ঐশ্বরিক কণ্ঠ এবং তাঁর একাগ্র সাধনায় নজরুল সংগীত এই উপমহাদেশে জনপ্রিয় করে তুলেন। তিনি সবাইকে অনুরোধ করে বলেন, “কারো কাছে যদি ফিরোজা বেগমের কোন স্মৃতি চিহ্ন থাকে, তা যদি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন, আমরা সন্মানের সাথে তা এই আর্কাইভে সংরক্ষণ করবো।”
তিনি আরও বলেন, “এটি একটি অলাভজনক উদ্যোগ।”
জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন এই ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের শিল্পীরা জানতে পারবে, শিখতে পারবে, গবেষণা করতে পারবে।
ফিরোজা বেগমের পুত্র জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীত শিল্পী শাফিন আহমেদ তার মা ফিরোজা বেগম সম্বন্ধে স্মৃতিচারণ করেন।
ভার্চুয়াল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী ফিরোজা বেগমকে স্মরণ করেন এবং শিল্পী অনুপ ঘোষাল তাঁর অভিব্যক্তি তুলে ধরেন।
সাদিয়া আফরিন মল্লিকের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ থেকে বিশেষ অতিথি আসাদুজ্জামান নূর (সংসদ সদস্য) ও সম্পাদক মতিউর রহমান। এছাড়াও বক্তব্য দিয়েছেন শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, ফেরদৌসী রহমান।
ফিরোজা বেগমের সহোদর, সাবেক সচিব ও প্রখ্যাত গীতিকার জনাব মোহাম্মদ আসাফ উদ দৌলাহ তাঁর স্মৃতিচারণ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত ছিলেন দুই বাংলার সংগীতাঙ্গনের বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দসহ প্রথিতযশা বিভিন্ন ধারার শিল্পী, কলাকুশলী, অসংখ্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
এছাড়া ভিডিও শুভেচ্ছা-বার্তাও দিয়ে পাঠান আরতি মুখার্জী, হৈমন্তী শুক্লা, শ্রীকান্ত আচার্য প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি দৈনিক প্রথম আলোর ফেইসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
নজরুল সংগীত সম্রাজ্ঞী ফিরোজা বেগমের ডিজিটাল আর্কাইভ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেবে, এই অসাধারণ সংগীত ভান্ডারের মাধ্যমে যা এসিআই ফাউন্ডেশনের একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।
ফিরোজা বেগমের ভাতিজী এবং অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা মিস সুস্মিতা আনিস এর পক্ষে, সঞ্চালক সাদিয়া আফরিন মল্লিক তার ধন্যবাদ- জ্ঞাপন বক্তব্যটি পড়ে শোনান।