সুর ও গানের মধ্য দিয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন শাহ আব্দুল করিম

  • আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সুনামগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাউল শাহ আব্দুল করিম

বাউল শাহ আব্দুল করিম

অসংখ্য জনপ্রিয় বাউল গান ও গণসংগীতের রচয়িতা বাউল শাহ আব্দুল করিমের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১২ সেপ্টেম্বর)।

কিংবদন্তিতুল্য এই শিল্পী ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯১৬ সালের ১৫ ফ্রেবরুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই বাউল সম্রাট। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান।

বিজ্ঞাপন

দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আব্দুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছোটবেলা থেকেই। শৈশব থেকেই একতারা ছিলো তার নিত্যসঙ্গী। জীবন কেটেছে সাদাসিধে ভাবে। বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নেন কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকসের কাছ থেকে।

বাউল আব্দুল করিম স্বশরীরে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার গান ও সুরধারা কোটি তরুণসহ সকল স্তরের মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।

শাহ আব্দুল করিম বাংলার লোকজ সংগীতের ধারাকে আত্মস্থ করেছেন অনায়াসে। ভাটি অঞ্চলের সুখ দুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারী-পুরুষের মনের কথা ছোট-ছোট বাক্যে প্রকাশ করেছেন আর্কষনীয় সুরে। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে। জীবিকা নির্বাহ করেছেন কৃষি কাজ করে। কিন্তু কোন কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। অসংখ্য গণজাগরণের গানের রচিতা বাউল শাহ আব্দুল করিম অত্যন্ত সহজ সরল জীবন-যাপন করতেন। গানে-গানে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এজন্য মৌলবাদীদের দ্বারা নানা লাঞ্ছনারও শিকার হয়েছিলেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কাগমারী সম্মেলন, ভাষার আন্দোলন, মুক্তিযোদ্ধ,সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মানুষকে প্রেরণা যোগায় শাহ আব্দুল করিমের গান।

গানের জন্য মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর্যও পেয়েছেন তিনি।

শাহ আব্দুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬শ’র বেশি গান। সাতটি বইয়ে গ্রন্থিত আছে এসব গান। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগে এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন এবং পরিচিতি লাভ করেন। পেয়েছেন একুশে পদক। শাকুর মজিদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘ভাটির পুরুষ’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র। এখনও সুবচন নাট্য সংসদ করিমকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা মহাজনের নাও নাটকের প্রর্দশনী করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এ্ছাড়াও ২০১৭ শাহ আব্দুল করিম জীবন ভিত্তিক প্রথম উপন্যাস লিখেন সাইমন জাকারিয়া। নাম ‘ক’লহারা কলঙ্কিনী’।

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের মধ্যে দিয়ে তাকে খুঁজতে প্রতিদিন ভক্ত ও স্বজনরা গানের আসর বসান। তার গান গেয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও গানের মধ্যে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান ভক্ত অনুরাগীরা। তবে শাহ্ আব্দুল করিমের গান সঠিক সুরে সঠিকভাবে গাওয়া, গানগুলো সংরক্ষণ করা এবং তার নামে একটি একাডেমি নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছে সংস্কৃতিকর্মী, সংগীত শিল্পী ও বাউল শিল্পীরা। সেই দাবি এখন পর্যন্ত পূরণ না হওয়ায় হতাশ করিম ভক্তরা।

“বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে”, “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম”, “গাড়ি চলে না”, “আমি কূলহারা কলঙ্কিনী”সহ অসংখ্য কালজয়ী ও গণজাগরণের গানের রচয়িতা বাউল শাহ্ আব্দুল করিম।

সাংস্কৃতিক কর্মী সোহান আহমেদ বলেন, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আগে তার সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমরা জোর দাবি জানাই শাহ আব্দুল করিমের নামে একটি একাডেমি নির্মাণ করে যাতে সেখানে তার সকল গান সংগ্রহ করে রাখা হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শামছুল আবেদীন বলেন, আব্দুল করিম ছিলেন বাঙালি জাতির একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। তিনি শুধু প্রেমের গানই লেখেননি তিনি গরিব-দুঃখী মানুষের সাথে ছিলেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মৃৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে। তার নামে একটি একাডেমি স্থাপনের কাজ চলছে। জমি নির্ধারণ প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই শাহ আব্দুল করিম একাডেমির কাজ শুরু করতে পারবো।