মাইলস ছাড়লেন শাফিন, ব্যান্ডের কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান
প্রায় চার দশকের হাতে গড়া ব্যান্ড মাইলস থেকে সরে দাঁড়ালেন কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। শনিবার এক ভিডিও বার্তায় নিজ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। একসাথে পথ চলা সম্ভব না হওয়ায় ব্যান্ডটির কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
ভিডিও বার্তায় শাফিন আহমেদ বলেন, মাইলসের সঙ্গে আমার পথচলা সেই ১৯৭৯ সাল থেকে। বহু বছর পার হয়ে গেছে। অনেক বছর সময় দিয়েছি, শ্রম দিয়েছি। অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ হয়েছে। মাইলসের যে অবস্থান আজকে সেটার পিছনে আমার কতটুকু অবদান, সেটা আপনাদের অনেকেই জানেন। তবে, একটা সিদ্ধান্ত নিতে আমি বাধ্য হয়েছি সম্প্রতি। সেটা হচ্ছে, এ বছরের শুরু থেকে-মাইলসের বর্তমান লাইন আপের সাথে আমার পক্ষে মিউজিকের কোন কার্যক্রম করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি-আমি এই লাইন আপের সাথে মিউজিক করা থেকে বিরত থাকবো।”
মাইলস ছাড়লেও গান ছাড়ছেন না জনপ্রিয় এ ব্যান্ড তারকা। স্টেজে কিংবা রেকর্ডিংয়ে তাকে আগের মতোই পাওয়া যাবে। শাফিন বলেন, “সংগীত জগতে আমার পথচলা খুব স্বাভাবিক এবং আগের মতোই থাকবে।”
মাইলসের গৌরবময় অতীত যেন ভেঙে যাওয়া মাইলসের মাধ্যমে ক্ষুণ্ণ না হয় এ জন্য ব্যান্ডটির কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শাফিন মনে করেন এটিই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, “আমার একটা প্রত্যাশা থাকবে, মাইলস নামটার যেন কোন অপব্যবহার না হয়। মাইলসকে নিয়ে আমরা চল্লিশ বছর উদযাপন করেছি-খুব গৌরবজ্জ্বলভাবে। আমরা যদি একসাথে কাজ না করতে পারি তাহলে মাইলসের যে কার্যক্রম তা এখনই স্থগিত করা উচিত। এবং এটাই আমি মনে করি বেস্ট ডিসিশান। সুতরাং আমার প্রত্যাশা থাকবে, অন্য কেউ যেন মাইলস নামটার অপব্যবহার না করে।”
ভিডিওটি প্রকাশ করে শাফিন ক্যাপশনে লিখেছেন- “দীর্ঘদিনের অন্যায় ও ভুল কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে আমি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।” এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক অন্য ব্যান্ড সদস্যদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, চলতি বছর মাইলসের ভাঙন নিয়ে গুঞ্জন ওঠার প্রেক্ষিতে হামিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন- “এই বিষয় তাকেই (শাফিন আহমেদ) পরিষ্কার করতে হবে।”
শাফিন আহমেদ ভিডিও বার্তায় এভাবেই নিজের অবস্থান পরিস্কার করলেন।
হামিন আহমেদ আরও বলেছিলেন, “এই ব্যক্তি (শাফিন আহমেদ) বারবার একই ধরনের কাজ করছে। এখন হায়ারড (ভাড়াটে) মিউজিশিয়ান নিয়ে মাইলসের অনুমতি ছাড়া মাইলসের গান গাইছে! এর মাধ্যমে দর্শককে যেভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এটা অনেকটা প্রতারণার মতো। কোন অধিকারে মিউজিশিয়ান হায়ার করে মাইলসের সুনামটাকে নষ্ট করছে—এটার উত্তর তো তাকে দিতে হবে। চারবার এই ব্যক্তি ব্যান্ড ছেড়েছে, কোনোবারই ব্যান্ড কিন্তু তাকে বলেনি, চলে যাও।”
বিভিন্ন সময় মাইলস ছাড়ার ঘোষণা দিয়েও দলে ফিরেছিলেন শাফিন। চলতি প্রস্থান ছাড়াও ২০১৯ সালে তার মাইলস ছাড়াও গুঞ্জন ওঠে। ২০১৭ সালে অক্টোবরে তিনি একবার ব্যান্ডটি ছাড়ার কয়েকমাস পর দ্বন্দ্ব ভুলে ফের ব্যান্ডে ফিরেছিলেন। ২০১০ সালের শুরুর দিকেও একবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়ানোর কয়েকমাস পর ফের ব্যান্ডে ফেরেন।
ফরিদ রশিদের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা সংগীতের অন্যতম ব্যান্ড মাইলস যাত্রা শুরু করে। মাইলসের প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ প্রকাশ হয় ১৯৯১ সালে। তার আগে প্রকাশিত হয় দু’টি ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘মাইলস’ ও ‘এ স্টেপ ফারদার’।
মাইল্স’র জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘গুঞ্জন শুনি’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘নীলা’, ‘কি যাদু’, ‘কতকাল খুঁজব তোমায়’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘পিয়াসী মন’, ‘বলব না তোমাকে’, ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’ ও ‘প্রিয়তমা মেঘ’।
মাইলস ব্যান্ডের লাইন আপ: শাফিন আহমেদ (বেজ গিটার, কণ্ঠ), হামিন আহমেদ (গিটার, কণ্ঠ), মানাম আহমেদ (কি-বোর্ড), ইকবাল আসিফ জুয়েল (গিটার) ও সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূর্য (ড্রামস)।