ভারতীয় হিন্দি সিনেমার জগৎ বলিউডে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারকে বেশ সম্মানজনক মনে করা হয়। এই পুরস্কার লাভের জন্য প্রতি বছর কী পরিশ্রমটাই না করেন তারকারা। নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেন। সেই ফিল্মফেয়ার পুরস্কারকে নাকি বাথরুমের দরজার হাতল বানিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রির প্রবীণ অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রবাদ-প্রতিম ব্যক্তিত্ব তিনি। তবে ঠোঁটকাটা স্বভাবের জেরে প্রায়ই বিতর্কে জড়ান নাসিরুদ্দিন। দশকের পর দশক ধরে দর্শকদের একাধিক মনের মতো ছবি উপহার দিয়েছেন নাসিরুদ্দিন, পেয়েছেন অজস্র পুরস্কারও। তবে নাসিরের চোখে পুরস্কারের কোনো মূল্যই নেই! সম্প্রতি এমনই বেফাঁস মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এখনো পর্যন্ত নিজের ফিল্মি ক্যারিয়ারে তিনটি জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। ‘পার’, ‘স্পর্শ’, ‘ইকবাল’ ছবির জন্য এই সম্মান এসেছে তার ঝুলিতে। এছাড়া তার ঝুলিতে রয়েছে তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। ‘আক্রোশ’, ‘মাসুম’, ‘চক্র’র মতো ক্লাসিক ছবির জন্য এই পুরস্কারে সম্মানিত হন নাসিরুদ্দিন।
যদিও তার মতে, পুরোটাই ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের নোংরা রাজনীতির খেল। পুরস্কার আদতে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের লবির প্রতিফলন মাত্র, বিশ্বাস নাসিরুদ্দিনের। শুধু তাই নয়, নিজের পাওয়া ফিল্মফেয়ার পুরস্কারকে নাকি বাথরুমের দরজার হাতল হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি। এমনই মন্তব্য করলেন এক সাক্ষাৎকারে।
বিজ্ঞাপন
নাসিরুদ্দিনের কথায়, ‘যে কোনো অভিনেতা যিনি একটা চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে জান-প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন, তিনি ভালো অভিনেতা। যদি সবার মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেয়া হয়, আর বলা হয় সবার মধ্যে ইনি সেরা, তাহলে সেটা কি ঠিক? আমার মনে হয় না। আমি ওই অ্যাওয়ার্ডগুলো নিয়ে গর্বিত নই। আমি তো শেষ দুটি পুরস্কার গ্রহণ করতেও যাইনি। তাই যখন আমি খামারবাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত নিই, তখন সেই অ্যাওয়ার্ডগুলো ওখানে রাখার ব্যবস্থা করি। যারাই ওয়াশরুমে যাবে তারা দুটি অ্যাওয়ার্ড হাতে পাবে। কারণ বাথরুমের দরজার হ্যান্ডেল ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দুটি।’
নাসিরের কথায়, ‘আমার কাছে ওই সব ট্রফির কোনো মূল্য নেই। আমার বিশ্বাস, ওই অ্যাওয়ার্ড লবির ফসল। কেউ তার কাজের জন্যই পুরস্কৃত হয় তেমনটা নয়। একটা সময় যখন পুরস্কার ত্যাগ করা শুরু করলাম, তারপর এলো ‘পদ্মশ্রী’ আর ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান। সেই মুহূর্তে আমার মনে পড়েছিল আমার প্রয়াত বাবার কথা। তিনি বলতেন আমি এসব বেফালতু কাজ করলে নিজেকে গাধা প্রমাণ করে ছাড়ব।’
অভিনেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, বাবা কি আজ এগুলো দেখছে কোথাও থেকে? সেদিন মনে হয়েছিল উনি নিশ্চয়ই গর্বিত। ওই পুরস্কার পেয়ে আমি সম্মানিতবোধ করেছিলাম। তবে ওই ফিল্মি অ্যাওয়ার্ডে আমার আস্থা নেই’।
শেষবার নাসিরুদ্দিনকে দেখা গেছে ‘তাজ: রেইন অব রিভেঞ্জ’ সিরিজে। গত মাসেই জি ফাইভে মুক্তি পেয়েছে এই পিরিয়ড ড্রামা সিরিজ।
অধিকার আদায়, বৈষম্যমূলক আচরণের জবাবদিহিতা এবং বিভাজন দূরীকরণসহ টিভি নাটকের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’ সংস্কারের দাবি নিয়ে সরগরম দেশের সংস্কারকামী একদল অভিনয়শিল্পী। এসব দাবি আমলে নিয়ে তা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন দেশের বর্ষীয়ান শিল্পীরা।
সারা যাকের, তারিক আনাম খানের মত প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা মনে করছেন, একই ইন্ডাস্ট্রিতে যদি শিল্পীরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায়, তাহলে সেটি কারো জন্যই শুভ কিছু বয়ে আনবে না। যেসব জায়গায় পরিবর্তন যৌক্তিক বলে বিবেচতি হবে, সেখানে পরিবর্তন এনে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত বলে মনে করেন অগ্রজরা।
এই অবস্থা নিরসনে শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন গুণী অভিনেতা তারিক আনাম খান। তিনি বলেন, ‘আমি দুই গ্রুপের সঙ্গেই কথা বলেছি। শিল্পী সংঘের বর্তমান যে কমিটি আছে তাদের কাছে সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পীরা সংস্কার চাইছে সেগুলো মেনে নেওয়া হোক। আমি উভয়কেই বলেছি এই বিবাদ-বিভাজন, ভাঙা-ভাঙি ঠিক নয়। আলোচনা মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত।’
আলোচনা না হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মাধ্যমে যারা কাজ করে, টেলিভিশন নাটক করে, তারা কিছু সংস্কার চেয়েছে। কিন্তু সংগঠন বলেছে, সদস্য না যারা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না। শিল্পীদের মধ্যে সদস্য-অসদস্য বলে কিছু নেই। আর এ কারণেই এটা এখন জটিল জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন তো পরিবর্তনের সময় আমি মনে করি সবসময় আলোচনা করা যায়, আলোচনা না করাটাই সমস্যা। এখন একে অপরের দাবিটা স্বাভাবিকভাবে নিয়ে যেভাবে সুরহা হয় সেই পথে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমার চাওয়া, এটার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সমাধান হোক। এখানে কেউ কারো শত্রু নয়, সবাই এক। তরুণদেরও জায়গা তৈরি হোক।’
সারা যাকের বলেন, ‘অভিনয়শিল্পীদের এই বিভাজন কখনই কাম্য নয়, নতুন যারা যা দাবি করছে, ন্যায়সঙ্গত হলে সেটা মেনে নেওয়া উচিত। অভিনয়শিল্পী সংঘের দায়িত্বশীল যারা আছে, তাদেরও উচিত প্রশ্ন তোলার মত কাজ না করা। শিল্পীদের এই জায়গাটা তো সবথেকে বড় ঐক্যবদ্ধ ছিল। এখন বিভাজন তৈরি হলে দুপক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সমঝোতার মাধ্যমে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন সারা যাকের। সমস্যা বাড়তে দিলে একে অন্যের মধ্যে নানা ধরনের টানাপড়েন তৈরি হতে পারে বলেও শঙ্কা তার। তিনি বলেন, ‘অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে তো আসলে টেলিভিশন অভিনয়শিল্পী, সিনেমার অভিনয়শিল্পী, মঞ্চের আমরা যারা আছি এমন ভাগ ভাগ বলে কিছু নেই। শিল্পীর বন্ধন একটাই। বিভাজন তৈরি হওয়াটাই ক্ষতিকর। একসময় টানাপোড়নে পড়ে যাবে সবাই। তাই যারা দায়িত্বশীল আছে তারা তো তাদের দায়িত্বটা পালন করেই গেছে। এখন যদি নতুনরা সেখানে নতুন করে কিছু যুক্ত করতে চায়, সংস্কার চায় সেটা হতে দেওয়া উচিত।’
পরিবর্তন প্রয়োজন হলেও, দাবি আদায়ে সমসময় রাজপথকে বেছে নেওয়ার পক্ষে নন সারা যাকেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় বিভাজন ভালো না। শিল্পীদের মধ্যে বিভাজন হলে সমাজ, দেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এই বিভাজনকে এনকারেজ করা যাবে না। এখানে রাজনীতি না এনে সবাই একসাথে মিলিত হয়ে সুন্দর সমাধান এবং একত্রিত হওয়ার প্রয়াস দেওয়া উচিত।’
সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পীদের এই অভিযোগ-অনুযোগ নিয়ে ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’র সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘কিছু কিছু দাবি আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এটা খুব পজিটিভলি দেখছি এবং সমাধান করা যায় যেভাবে, সেই পথটা বের করার চেষ্টা করছি। আমাদের শিল্পীদের নিয়ে একটা মিটিং করেছি। সেই গ্রুপে (আলো আসবেই) সক্রিয় থাকা দুজন শিল্পীকে শোকজ করেছি। তাছাড়া আমরা ২৮ সেপ্টেম্বর একটা সাধারণ সভার ঘোষণা করেছি। সেখানে উভয় পক্ষের সবার মতামতের ভিত্তিতে একটা সমাধান দেওয়া হবে সেই আশা রাখছি।’
ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধী সাম্প্রতিক আন্দোলনকে ঘিরে। ওই সময় শিল্পীদের মধ্যে ভাগ স্পষ্ট হয়েছে। আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষ হয়ে শিল্পীদের মধ্যে এক দল ফার্মগেট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে আলোচনায় আসেন। একই সময়ে শিল্পীদের আরেকটি অংশ বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সামনে সমাবেশ করে সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগপন্থি শিল্পীদের ‘আলো আসবেই’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথোপকথনের বেশকিছু স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে আন্দোলনের সময় সরকারের নেওয়া ভূমিকার পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা গেছে ওই শিল্পীদের। আর এই গ্রুপের কয়েকজন শিল্পী ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’র নেতৃত্বে আছেন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে রাজপথে থাকা শিল্পীরা সংগঠনটির প্রতি আস্থা হারিয়েছেন এবং তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এরপর থেকে এই সংগঠনটি সংস্কারের দাবি তুলেছেন সংঘের অনেক শিল্পী। সংগঠনকে চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসার জন্য বেশ কয়েকবার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন কয়েকজন সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পী। কিন্তু অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে জানানো হয়, সংগঠনের সদস্য ছাড়া অন্য কোনো অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে তারা আলোচনায় বসবেন না।
এরপর গত ৭ সেপ্টেম্বর অভিনয়শিল্পী সংঘের কাছে পাঁচটি দাবি জানিয়ে জরুরি কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংস্কারকামী শিল্পীরা। সেখানে অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটিকে দুঃখ প্রকাশ ও জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু সদুত্তর না মেলায় ১০ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে ‘কথা বলতে চাই, কথা শুনতে চাই’ শিরোনামের আলোচনার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন, শ্যামল মাওলা, নাজিয়া হক অর্ষা, সুষমা সরকার, সাবেরী আলম, সোহেল মণ্ডল, মনোজ প্রামাণিক, খায়রুল বাসার, শরীফ সিরাজ, আহমেদ সাব্বির, নীলা ইস্রাফিল, এলিনা শাম্মী, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, আব্দুল্লাহ আল সেন্টুসহ ৫০ জন অভিনয়শিল্পী।
সেখানে অরাজনৈতিক সংগঠন হয়েও অভিনয়শিল্পী সংঘের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া, যারা বিভিন্ন প্রপাগান্ডার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ, অভিনয়শিল্পীদের সমস্যায় সংগঠনের ভূমিকা, ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে যুক্ত থাকা অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, শিল্পীদের পাওনা আদায়ে সংগঠনের কঠোর ভূমিকা অনুপস্থিত থাকাসহ নানা প্রশ্ন রাখা হয়।
এছাড়াও বেশকিছু দাবিও উপস্থাপন করেন শিল্পীরা। দাবিগুলো হল- অভিনয়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে পেশা হিসাবে স্বীকৃতি এবং অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, নতুন করে রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম চালু, তিন ধরনের কোর্সের ভিত্তিতে ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করা, প্রফেশনাল কার্ডের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা, রিফর্মেশন অ্যাক্ট চালু, অভিনয়শিল্পীদের কাজের সুষ্ঠু, নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিফট সিস্টেম, ওভারটাইম চার্জ, ডেট ক্যান্সেলশন চার্জ চালু, নূন্যতম পারিশ্রমিক নির্ধারণ, প্রতিবছর স্ক্রিন এক্টরস অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি।
সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার আওতায় ২০১৮ সাল থেকে বিনোদনজগৎ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এর ছয় বছরের মাথায় বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বক্স অফিসে পরিণত হয়েছে সৌদি!
তার প্রমাণ ২০২৪-এর প্রথমার্ধে সিনেমা থেকে সৌদির আয়ের অংক। এই ছয় মাসে সৌদির প্রেক্ষাগৃহে বিক্রি হয়েছে ৮৫ লাখের বেশি টিকিট। আর এ থেকে দেশটি আয় করেছে ৪২০ মিলিয়নের বেশি সৌদি রিয়াল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি!
সৌদি আরবের সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং আল-উলা রয়্যাল কমিশনের গভর্নর প্রিন্স বদর বিন আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন ফারহান আল-সৌদ গত মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সৌদি বক্স অফিস আয় করেছে ৪২১ দশমিক ৮ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল। শুধু তাই নয়, তালিকার শীর্ষ আয়কারী প্রথম তিনটি চলচ্চিত্রের দুটিই সৌদি প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে।
সৌদি আরবের জেনারেল কমিশন ফর অডিও ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার (জিসিএএম) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সিনেমা চালুর পর পাঁচ বছরে এই খাত থেকে সৌদি আরবের আয় হয়েছে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ডলারের বেশি। প্রথম বছরে এই আয় ছিল ২০ লাখ ডলার। সরকারি তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে টম ক্রুজ অভিনীত অ্যাকশন ড্রামা ফিল্ম ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’।
১২ লাখের বেশি টিকিট বিক্রি করে সিনেমাটি আয় করেছে ৮ কোটি ৪০ লাখ রিয়ালের বেশি। এরপরই আছে ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহাইমার’ ও টম ক্রুজ অভিনীত ‘মিশন: ইম্পসিবল-ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান’।
সৌদি সিনেমাগুলোও পিছিয়ে নেই। নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার আগাম খবর পেয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিতে শুরু করেন তিন সৌদি যুবক আল ফাদান, ইব্রাহিম আল খাইরুল্লাহ ও আলী খালতামি। তিনজন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তেলফাজ ১১’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।, তেমনি তেলফাজ হয়ে উঠেছে দেশটির অন্যতম প্রধান প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। গত বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আসে তাদের প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘সাত্তার’।
সৌদি বাজারে তুমুল সাড়া ফেলে এই সিনেমা। মুক্তির প্রথম ১২ দিনেই বক্স অফিস থেকে সিনেমাটি আয় করে ২২ লাখ মার্কিন ডলার। চলচ্চিত্রবিষয়ক মার্কিন গণমাধ্যম হলিউড রিপোর্টারের তথ্যমতে, সৌদিতে সিনেমাটি দেখতে হলে গেছে ৯ লাখ ৩০ হাজারের বেশি দর্শক। বিশ্বজুড়ে সিনেমাটি আয় করেছে ১১ মিলিয়ন ডলারের বেশি, যা সৌদি সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
চলতি বছরের শুরুতে প্রেক্ষাগৃহে তেলফাজ নিয়ে আসে দ্বিতীয় সিনেমা ‘মানদুব’। নির্মাতা আলী খালতামির কমেডি থ্রিলারটি বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছে। গত বছরের টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে এর প্রিমিয়ার হয়। সেখানেও প্রশংসিত হয় ‘মানদুব’।
বক্স অফিসের বাইরে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও বাজিমাত করছে সৌদি আরবের সিনেমা। এবারের কান উৎসবে ইতিহাস গড়েছে সৌদি আরব।
৭৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে উৎসবের ‘আঁ সাঁর্তে রিগা’ বিভাগে স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড জিতেছে দেশটির নির্মাতা তৌফিক আলজায়েদির সিনেমা ‘নোরাহ’। গত বছরের ডিসেম্বরে জেদ্দায় আয়োজিত রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নোরাহ’র প্রিমিয়ার হয়েছিল।
বাংলাদেশ ও ভারতের চলমান সম্পর্কের জন্য নাগরিকদের সীমিত পরিসরে ভিসা দিচ্ছে দুই দেশই। যার প্রভাব পড়ছে ঢাকা ও কলকাতার সিনেমাপাড়ায়।
এই জটিলতায় পড়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ কলকাতার ‘প্রতীক্ষা’ নামের সিনেমাটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। যেখানে তার অভিনয় করার কথা ছিল দেবের বিপরীতে। একই কারণে কলকাতা যেতে পারছেন না ঢালিউডের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণিও।
জটিলতায় পড়েছেন কলকাতার শিল্পীও। বাংলাদেশে আসতে ভিসা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ঢাকায় এসে শুটিং করার ওয়ার্ক পারমিটের আবেদনে সাড়া পাচ্ছেন না তারা। এই যেমন সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের দুটি সিনেমায় শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল কলকাতার প্রখ্যাত দুই অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও স্বস্তিকা মুখার্জির। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
পরিচালক হিমু আকরামের ‘আলতাবানু জোছনা দেখেনি’ সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে। এই সিনেমার প্রধান অভিনয়শিল্পী কলকাতার স্বস্তিকার শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ৭ বা ৮ সেপ্টেম্বর থেকে। তবে শুটিং শুরু করা সম্ভব হয়নি।
সিমেমাটির পরিচালক হিমু আকরাম বলছেন, ‘সেপ্টেম্বরের শুরুতেই শুটিংয়ের পরিকল্পনা রেখেছিলাম। আমাদের সব কিছুই প্রস্তুত, কিন্তু স্বস্তিকা মুখার্জি কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে কাজ করবে, ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করে রেখেছি, পাচ্ছি না। ভিসা প্রসেসিংয়েরও একটা জটিলতায় পড়ে গিয়েছি। তাই সিনেমাটি শুরু করা যাচ্ছে না। শুটিং আরও দুই মাস পেছাতে হচ্ছে। ওয়ার্ক পারমিটের অনুমতি কবে পাওয়া যাবে সেটাও জানি না। সিনেমার সব কিছুই চূড়ান্ত হয়ে আছে, সময়মতো শুটিং শুরু না হলে তো একটা ক্ষতির সম্মুখীন আমাদের হতে হবে। আমরা এই পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত।’
অগাস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে রাশিদ পলাশের পরিচালনায় ‘তরী’ সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিতে ঢাকায় আসার কথা ছিল পশ্চিবমবঙ্গের তারকা অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের। কিন্তু সেখানেও ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সমস্যা বাধ সেধেছে। রাশিদ পলাশ বলছেন, ‘দুই বাংলার কাজের ক্ষেত্রে কোনো সংকট তৈরি হোক আমরা তা চাই না। আমার মনে হয় খুব দ্রুতই সংকট কেটে যাবে এবং আশা রাখছি কাজটিও ভালো করেই শেষ করতে পারব।’
অন্যদিকে, কলকাতার ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমা হাতছাড়া হওয়া প্রসঙ্গে ফারিণের ভাষ্য, ‘নানা অনিশ্চয়তায় সিনেমাটি থেকে সরে আসতে হয়েছে। নভেম্বর মাসে শুটিং শুরুর কথা ছিল, শুরু করা না গেলে দেব ও মিঠুন চক্রবর্তীর শিডিউল পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ থেকে এখন ভিসা পাওয়াটাও অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। তাই সিনেমাটিতে আমার কাজ করা হচ্ছে না।’
কলকাতার ‘ফেলুবকশি’ সিনেমার শুটিং শেষ করেছেন পরীমণি। ও এখনো বাকি সিনেমাটির ডাবিং। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে ভারতে যেতে পারছেন এই অভিনেত্রী।
পরীমণি বলেছেন, ‘আমার আগের ভিসা নেই। নতুন ভিসা পেতেও সমস্যা হচ্ছে। এখন কবে ভিসা পাব, কবে যেতে পারব, বুঝতি পারছি না। এটি আমার কলকাতার প্রথম সিনেমা। আমি চাই, দ্রুতই শেষ করে মুক্তি পাক সিনেমাটি।’
মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন পপ তারকা ও অভিনেতা জাস্টিন টিম্বারলেক। গতকাল শুক্রবার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ১০টি গ্র্যামিজয়ী এ তারকাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত।
বিবিসি জানিয়েছে, নিউইয়র্কের সাগ হারবার ভিলেজ বিচারপতি কার্ল ইরে টিম্বারলেককে ৫০০ ডলার জরিমানা করেছেন। আর এর চার্জ হিসেবে গায়ককে পরিশোধ করতে হবে আরও ২৬০ ডলার। এর সঙ্গে ২৫ ঘণ্টা সময় সামাজিক পরিষেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।
শাস্তি মেনে নিয়ে আদালত থেকে বের হয়ে জাস্টিন টিম্বারলেক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘যদি মদ্যপ অবস্থায় থাকেন, তাহলে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসা উচিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে আরও অসংখ্য পথ আছে, একজন বন্ধুকে কল করতে পারেন অথবা উবার নেন। এ ছাড়া আরও অনেক ভ্রমণ অ্যাপ আছে, ট্যাক্সিও নিতে পারেন। আমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত, কিন্তু আমি আশা করছি যে এই মুহূর্তে যারা আমাকে দেখছেন এবং শুনছেন তারা এই ভুল থেকে শিক্ষা নেবেন।’
দায় স্বীকার করার জন্য টিম্বারলেকের প্রশংসা করেছেন সাফোক কাউন্টি জেলার অ্যাটর্নি রেমন্ড টিয়ার্নি। সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি না চালানোর বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করায় টিম্বারলেকের প্রশংসা করেছেন তিনি।
আদালতের নথি থেকে জানা গেছে, গত ১৮ জুন মধ্যরাতে নিউইয়র্কের এক হোটেল থেকে বেরিয়ে পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে ভুল লেনে গাড়ি চালাচ্ছিলেন টিম্বারলেক। পথিমধ্যে পুলিশ গায়কের বিএমডব্লিউ আটকে দেয়।
পুলিশের বরাতে আদালতের নথিতে বলা হয়, টিম্বারলেক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তার নিশ্বাস থেকে মদের তীব্র গন্ধ শনাক্ত করেছে পুলিশ। তবে ব্রেথলাইজার টেস্টে অস্বীকৃতি জানান এই গায়ক। এ ঘটনার পরই টিম্বারলেককে গ্রেফতার ও ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।