আবারও মঞ্চে আলো ছড়ালো নওশাবার ‘সিদ্ধার্থ’
আরশিনগরের চতুর্থ প্রযোজনা ‘সিদ্ধার্থ’ আবারও মঞ্চে আলো ছড়ালো। টানা পাঁচ দিনে সাতটি প্রদর্শনী হয়েছে নাটকটির। গত ২৬ থেকে ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘সিদ্ধার্থ’।
এই নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রূপদান করেছেন ছোট ও বড়পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ।
নোবেলজয়ী বিখ্যাত সাহিত্যিক হেরমান হেসের লেখা উপন্যাসটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও নির্দেশক রেজা আরিফ।
গত বছর আগস্টে মঞ্চে আসে নাটকটি। টানা তিন দিনে চারটি প্রদর্শনী হয়েছিল তখন। নাটকটি দর্শকের ভালো সাড়া পায়। সে সময় সব কটি শো হাউসফুল ছিল। এমনকি টিকিট না পেয়ে সেবার ফিরে যেতে হয়েছে অনেক দর্শককে।
গৌতম বুদ্ধের আরেক নাম সিদ্ধার্থ হলেও হেরমান হেসের ‘সিদ্ধার্থ’ গৌতম বুদ্ধ নয়। নির্দেশক রেজা আরিফের ভাষ্য, ‘গৌতম বুদ্ধের ঔজ্জ্বল্যে আড়াল হয়ে পড়া গৌতমের ব্যক্তিগত মনোজগতের রঙে সিদ্ধার্থকে আঁকা হয়েছে।’
নাটকের গল্পে দেখা যাবে, ব্রাহ্মণ কুমার সিদ্ধার্থ পিতার অমতে ঘর ছেড়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করে। দীর্ঘ তিন বছর সন্ন্যাসব্রতের কঠোর সাধনা, আত্মনিগ্রহ, উপবাস ও দৈহিক নির্যাতনের পর সন্ন্যাস ত্যাগ করে সে। এরপর সৌভাগ্য হয় বুদ্ধের সাক্ষাৎ লাভ ও উপদেশ শোনার আশ্চর্য অভিজ্ঞতার। কিন্তু বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ না করে পথে বেরিয়ে পড়ে সিদ্ধার্থ।
পথে দেখা হয় এক নারীর সঙ্গে, পরিচয় হয় নতুন এক জীবনের সঙ্গে। সে জীবনের নাম সংসার-সন্তান লাভের খেলা। দীর্ঘ কুড়ি বছর সে জীবনে মগ্ন হয়ে থাকার পর সিদ্ধার্থের মনে হয়, এ খেলা শেষ হয়েছে।
এ খেলা একবার, দুবার, দশবার ভালো লাগে, কিন্তু বারবার এ খেলার প্রয়োজন আছে কি? মাত্রাতিরিক্ত ভুঁড়িভোজনের পর যেমন খাদ্যের ওপর আকর্ষণ চলে যায়, খাদ্য দেখলে যেমন বমিভাব হয়, সংসারের ওপর সিদ্ধার্থেরও তেমনই বিতৃষ্ণা জাগে।
সিদ্ধার্থ সে জীবন ত্যাগ করে আশ্রয় নেয় নদীর কাছে। নদীর কাছে থাকতে থাকতে সিদ্ধার্থ শেখে নদীর ভাষা। উপলব্ধি করে জীবনের বৃহত্তর মানে। জীবন ও মৃত্যু, পাপ ও পুণ্য, বোধ ও নির্বুদ্ধিতা সবকিছুরই প্রয়োজন আছে জীবনে। এসব অভিজ্ঞতা জীবনকে পূর্ণ করে। এ অভিজ্ঞতার নামই জ্ঞান, যা কাউকে শেখানো যায় না; অর্জন করতে হয়।
শোবিজ তারকারা যেখানে ক্যামেরার সামনে নাম যশ অর্থের জন্য কাজ করছেন বেশি, সেখানে নওশাবা শিল্পের এমন একটি মাধ্যমে সময় দিচ্ছেন যা তাকে শুধুই শিল্পচর্চার আনন্দ দেয়।
তিনি মঞ্চ অভিনয়ে এতোটাই নিবেদিত থাকেন যে, চরিত্রটি বাস্তব হয়ে ধরা দেয়। এ কারণে তিনি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।