মেয়ের ছবি নিয়ে নস্টালজিক রুনা, বন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্যা মির্জা, রাজেশ্বরী ও রুনা খান

বন্যা মির্জা, রাজেশ্বরী ও রুনা খান

জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুনা খান আজ তার একমাত্র কন্যা রাজেশ্বরীর দুটি ছবি পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবি দুটি নিয়ে তিনি যে দারুণভাবে নস্টালজিক হয়ে পড়েছেন তা ছবির দীর্ঘ ক্যাপশনে উঠে এসেছে। এই অভিনেত্রী লিখেছেন তার প্রথম বিমান ভ্রমণ, প্রথম বিদেশে শুটিং, প্রথম বিদেশি মূদ্রা আয় করা ও প্রিয়জনের জন্য উপহার কেনার অভিজ্ঞতা। একইসঙ্গে সেই যাত্রায় আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী বন্যা মির্জার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে।

রুনা খান লিখেছেন, ‘জীবনে প্রথমবার বিমানে চড়ি ২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল। সিটবেল্ট বাঁধতে পারি না, বন্যা আপা বেঁধে দিলেন। আমার একটু অস্বস্তি দেখে আমার পাশের সিটেই বসলেন। জানালার পাশে আমাকে বসতে দিলেন, প্লেন উঠবার সময় আতংকিত হয়ে আমি বললাম, কান বন্ধ যাচ্ছে বন্যাআপা, দম নিতে পারি না! স্থির শান্ত গলায় বললেন “ঢোক গিল, ঠিক হয়ে যাবে..!” কয়েকবার ঢোক গিলে দেখলাম, ম্যাজিক..পুরা ঠিক!’

বিজ্ঞাপন
রুনা খান / ছবি : সজীব

মামা-ভাগ্নে নাটকের শুটিং করতে প্রথম বিদেশে গিয়েছিলেন রুনা। এর পরিচালক ছিলেন গোলাম সোহরাব দোদুল, সিনেমাটোগ্রাফার রায়হান খান (যথারিতি তিনি ফ্লাইট মিস করেছিলেন, পরের দিন আসেন), প্রযোজক-আলী বশীর। রুনা জানিয়েছেন, ব্যাংকক অংশের শুটিংয়ে আমার পারিশ্রমিক ৫০০ ডলার। জীবনে প্রথম অভিনয় দিয়া ডলার কামাইলাম। এছাড়া লাঞ্চ-ডিনারের জন্য রোজ ৩০০ বাথ পাই, অভিনয়ের বিনিময়ে বাথও কামাইলাম প্রথম।’

ব্যাংককের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে রুনা লিখেছেন, ‘সকালে ঠাসা ব্রেকফাস্ট খেতাম, আর দুপুরে-রাতে বেশীরভাগ দিন বন্যাআপার খানা থেকে খাওয়াতো। পেমেন্ট আর খাওয়ার টাকা বাঁচিয়ে পুরো ৬০০ ডলারের কেনাকাটা করি। বাংলাদেশে আমার তৎকালীন পরিচিত-কাছের এমন একটি মানুষ ছিলো না, যার জন্য আমি নিজের টাকায় এক বা একাধিক উপহার আনিনি। নিজের মা-বাবা থেকে শুরু করে অভিনয়জীবনের শুরুতে যে বাড়িতে আশ্রিত ছিলাম সেই বাড়ীর সকল গৃহকর্মীদের জন্য পর্যন্ত উপহার কিনেছিলাম। বেশিরভাগ পণ্যের মূল্য ৪৯-১৯৯ বাথ। সাধ্যের মধ্যে সবার জন্য এবং নিজের জন্য কেনাকাটা কওে মহাখুশি আমি!’

বন্যা মির্জা / ছবি : নূর এ আলম

অভিনেত্রী বন্যা মির্জার কাছ থেকে তিনি বিশেষ কিছু শিখেছিলেন সেই ট্রিপে। সেই ঘটনা বর্ননা করেছেন রুনা, ‘একদিন সুতির দুটো টপ বহুবার নেড়েচেড়ে দেখে রেখে দেই, তখন মহা দাম আমার কাছে, একেক টা ৯৯৯ বাথ! ঐ টাকায় ১০-১৫ জনের জন্য গিফট আনতে পারি এটাই চিন্তা আমার!

বন্যাআপা কাছে গিয়ে বললেন, সবার জন্যই তো উপহার নিয়েছিস, এদুটো নিজের জন্য নে, দাম নিয়ে ভাবিস না। নিজে এত কষ্ট করে কাজ করছিস, নিজের শখ মেটাবি না? তোর শখ পূরণ করবার জন্য তো ত্ইু ছাড়া কেউ নেই!

আমি বললাম না গো, নিজের জন্য কিনলেও ১৯৯৮ বাথে ২টা না ২০টা জিনিস কিনবো, শুটিংএ কাজে লাগবে।

রুনা খান / ছবি : শেখ সাদী

বন্যাআপা বললেন, ‘সবই কাজে লাগে, সস্তাটা যেমন লাগে, ভালো টাও লাগে। তবে ২০টা সস্তার চাইতে ২টা ভালো জিনিস টেকসই হয় বেশি। তোর সাধ্য আছে এত পছন্দ করে বারবার হাতে নিয়ে দেখছিস এ দুটো.. আচ্ছা একটা তোকে আমি কিনে দেই, একটা ত্ইু নিজে কিনে নে!’

লজ্জা পেয়ে বললাম না না, তোমার কিনে দিতে হবে না, আমিই কিনছি (কিনলাম আর মনে-মনে বন্যা আপারে বইক্কা কিছু রাখলাম না! বেডি হুদাই আমার এত কষ্টের এতডি টাকা ২টা টপের পিছে খরচ করাইলো, ফাজিল বেডি)। টপ দুটোর বয়স ১৬ বছর, রাজেশ্বরীর বয়স ১৪ বছর, তার সবচেয়ে পছন্দের মধ্যে এই দুটো জামা। প্রায় ২০ হাজার ৪০০ বাথ-এর কেনাকাটা করেছিলাম, ১৯৯৮ বাথের টপ দুটো ছাড়া আর কিছুই নাই, টিকেনি!

তুমি ঠিক ছিলে, সাধ্যে থাকলে সস্তার চাইতে মান-শখ বেশি গুরুত্বপূর্ণ! তোমার কাছ থেকে আমি এটা শিখেছি। রাজেশ্বরীর ছবি আমি খুব কম পোস্ট করি, তোমাকে ঐ ট্রিপে কোন উপহার দেইনি, ১৬ বছর পর দিলাম মেয়ের ছবি দুটো তোমার জন্য উপহার বন্যাআপা। ভালোবাসা নিও।’

সেই ১৬ বছরের পুরেনো জামা দুটি পরেছেন রুনা খানের কন্যা রাজেশ্বরী