বাংলাদেশের চরকির কারণে স্তব্ধ টলিউড!
গত ২৭ জুলাই রাহুল মুখার্জির পরিচালনায় কলকাতার একটি ছবির শুটিং হওয়ার কথা ছিলো সেখানকার টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। কিন্তু ফেডারেশনের আওতাভুক্ত টেকনিশিয়ানরা সেই শুটিংয়ে উপস্থিত হননি। ফলে শুটিং না হওয়ায় ওখানে উপস্থিত পরিচালক, অভিনয়শিল্পীরা (প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জিসহ অনেকেই) অপমানিত হন। এ নিয়েই কদিন ধরে উত্তাল কলকাতার বিনোদন জগৎ!
পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (২৯ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্ট কর্মবিরতিতে গেছেন সেখানকার সকল পরিচালক। ফলে আজ সকাল থেকে টলিপাড়ায় ধারাবাহিক থেকে সিনেমা, সব শুটিং বন্ধ।
টলিউডের এই অচলাবস্থার সূত্রপাত বাংলাদেশ থেকে! গত বছরের ৪ অক্টোবর কলকাতায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তিন বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৩০টি কনটেন্ট নির্মাণ করবে প্ল্যাটফর্মটি। এর মধ্যে ‘লহু’ নামের একটি সিরিজের কাজও শুরু হয়েছিল। রাহুল মুখার্জির পরিচালনায় সিরিজটিতে চুক্তিবদ্ধ হন বাংলাদেশের আরিফিন শুভ ও পশ্চিমবঙ্গের সোহিনী সরকার। তবে টলিউডের ফেডারেশনগুলোর অতিরিক্ত পারিশ্রমিকসহ বিভিন্ন দাবির কারণে কলকাতায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় চরকি। ফলে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় ‘লহু’র শুটিং। জানা গেছে, সেই সিনেমার বাকি অংশের শুটিং শেষ করতেই কয়েকজন কলাকুশলীসহ বাংলাদেশে এসেছিলেন রাহুল।
প্রথমে শুটিংয়ের বিষয়টি আড়াল করলেও পরে বাংলাদেশে শুটিং করার কথা স্বীকার করেন নির্মাতা। টলিউড ফেডারেশনকে না জানিয়ে ঢাকায় এসে শুটিং করার অভিযোগে আগামী তিন মাসের জন্য রাহুলকে নিষেধাজ্ঞা দেয় ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া।
এ ধরনের ঘটনা আগে টলিপাড়ায় ঘটেনি। তাই রাহুলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্ন তুলেছেন অন্য নির্মাতারা। পরিচালকদের বড় একটা অংশ মনে করছেন, একজন পরিচালকের সমস্যায় বাকিরা না দাঁড়ালে ভবিষ্যতে আরও খারাপ দিন আসতে পারে। তাই সময় থাকতেই তারা প্রতিবাদে শামিল হতে চাইছেন। এ প্রসঙ্গে অগ্রজ পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির হয়, মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান থেকে তারা নড়বেন না।
পরিচালকদের ভাষ্য, ‘আমরা মনে করি, ফেডারেশন একটি ইন্ডাস্ট্রির একচ্ছত্র নিয়ামক সংস্থা হতে পারে না। ভুলভ্রান্তি, সমস্যা যাই হয়ে থাক, তার সমাধান না করে কাউকে জোর করে কর্মবিরতি নিতে বাধ্য করা অসাংবিধানিক। বিশেষত, ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমাদের ডিরেক্টর্স গিল্ড রাহুল মুখার্জির ওপর আরোপিত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও যেভাবে বাকি গিল্ডের কলাকুশলীরা অসহযোগিতার পথে হেঁটেছেন তা শুধু রাহুলের জন্য নয়, আমাদের প্রত্যেক পরিচালকের জন্য অপমানজনক এবং ক্ষতিকারক। আমাদের এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ আগামীতে যদি কোনও পরিচালক কোনও রকম সমস্যার মুখে পড়েন, তার পাশে সমস্ত পরিচালকরা দাঁড়াবেন, সেই অঙ্গীকারও আমরা করছি।’
এদিকে এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য আজ দুপুরে এক বৈঠক ডাকা হয় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে। সেখানেই হাজির হন টলিপাড়ার পরিচালক-প্রযোজকেরা। যাদের মধ্যে ছিলেন রাজ চক্রবর্তী, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, বিরসা দাশগুপ্ত, সুদেষ্ণা রায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, সুব্রত সেনসহ অন্যরা।
এই বৈঠক প্রসঙ্গে রাজ বলেন, ‘রাহুলের কী হবে এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে। আমরা পরিচালকেরা এই বিষয় নিয়ে চিন্তিত। আশা করছি টেকনিশিয়ান বন্ধুদের সহযোগিতা পাবো।’
তথ্যসূত্র: এবিপি